স্ত্রীর পরকীয়া সম্পর্কে পথের কাঁটা হয়ে উঠেছিল স্বামী।তার জেরেই স্ত্রী ও তাঁর প্রেমিকের হাতে নৃশংস ভাবে খুন হতে হল বছর ২৮ বয়সী স্বামী মধুসুদন বাউরিকে।পূর্ব বর্ধমানের আউসগ্রাম থানার জামতারা গ্রাম নিবাসী লটারি টিকিট বিক্রেতা মুধুসুদন বাউরিকে খুনের ঘটনার পুলিশি তদন্তে উঠে এল এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য।আউসগ্রাম থানার পুলিশ মুধূসুদনের স্ত্রী প্রীতি বাউরি ও তাঁর প্রেমিক মঙ্গল বাউরিকে গ্রেফতার করেছে ।
খুনের ধারায় মামলা রুজু করে পুলিশ বুধবার দুই ধৃতকেই পেশ করে বর্ধমান আদালতে । খুনের ঘটনায় ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধার এবং ঘটনার পুনর্নির্মাণ করতে চেয়ে তদন্তকারী অফিসার দেবাশিষ নাগ ধৃতদের ৭ দিন নিজেদের হেফাজতে নেবার আবেদেন আদালতে জানান। ভারপ্রাপ্ত সিজেএম রঞ্জনী কাশ্যপ ধৃতদের ৬ দিন পুলিশ হেপাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন । মৃতর বাবা নাড়ু বাউরি ও মা কালি বাউরি ধৃতদের ফাঁসির সাজার দাবি জানিয়েছেন ।
পুলিশ জানিয়েছে, আউশগ্রামের ভাল্কী পঞ্চায়েতের জামতারা গ্রামে বাড়ি মধুসুদন বাউরির । তিনি লটারি টিকিট বিক্রী করে জীবিকা নির্বাহ করতেন । মঙ্গলবার সকালে বাড়ি থেকে আনুমানিক ২০০ মিটার দূরে আমবাগান ঘেরা নিমতলা মাঠে গলার নলিকাটা অবস্থায় পড়ে থাকে মধুসূদনের নিথর দেহ। খবর পেয়ে আউশগ্রাম থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছায় । পুলিশ কর্তারা দেখতে পান মৃতের গলায় একাধীক কাটা দাগ রয়েছে। ধারাল অস্ত্র দিয়ে গলার নলি কেটে মধুসুদনকে খুন করা হয়েছে বলে একপ্রকার নিশ্চিত হয় পুলিশ। মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয় বর্ধমান হাসপাতাল পুলিশ মর্গে । ছেলেকে খুন করা হয়েছে বলে জানিয়ে ওই দিনই মধুসুদনের বাবা নাড়ু বাউরি আউশগ্রাম থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
আউসগ্রাম থানার পুলিশ তদন্তে নেমে জানতে পারে বছর ৭ আগে মানকরের তরুণী প্রীতির সঙ্গে মধুসুদনের বিয়ে হয় । তাঁদের নবালক এক পুত্র ও এক কন্যা সন্তান রয়েছে । এলাকার অন্য এক পুরুষের সঙ্গে প্রীতির অবৈধ সম্পর্ক তৈরি হওয়ায় মধুসুদন ও প্রীতির মধ্যে অশান্তি লেগে থাকতো। পুলিশ আরো জানতে পারে সোমবার রাতে খাওয়া-দাওয়া করে স্ত্রীর সঙ্গে একই ঘরে ঘুমাতে যায় মধুসূদন। পরদিন ভোর ৩ টে নাগাদ হঠাৎতই প্রীতি তাঁর শ্বশুর বাড়ির লোকজনকে জানায়, তার স্বামীকে পাওয়া যাচ্ছেনা। সে শ্বশুর বাড়ির লোকজনকে বলে গভীর রাতে বিছানা ছেড়ে তাঁর স্বামী কোথাও পালিয়েছে। কারুর যাতে কোন সন্দেহ না জাগে তারজন্য প্রীতি শ্বশুর বাড়ির অন্যান্যদের সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় স্বামীর খোঁজা শুরু করে। এমনকি স্বামীকে কেউ খুন করতে পারে বলেও প্রীতি শ্বশুর বাড়ির লোকজনকে বলে । মৃতর পরিবারের লোকজনের কাছ থেকে এই সব কথা জানার পর পুলিশ মঙ্গলবার প্রীতিকে থানায় ডেকে টানা জিজ্ঞাসাবাদ চালায়।ম্যারাথন জেরায় ভেঙে পড়ে প্রীতি স্বামীকে খুনের কথা পুলিশের কাছে কবুল করে ।
পুলিশকে সে জানায়, ‘কয়েকমাস আগে তার সঙ্গে এলাকার যুবক মঙ্গলের ভাব-ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। মধুসূদনকে ছেড়ে মঙ্গলের সঙ্গে তাঁর ঘর বাঁধার পরিকল্পনা ছিল । মধুসূদন সেই সম্পর্কের পথে কাঁটা হয়ে হয়েওঠে । সেই কারণে সে ও মঙ্গল মধুসূদনকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে ফেলার পরিকল্পনা করে । পরিকল্পনা মাফিক সোমবার রাতে মঙ্গল তাঁর বাড়িতে চলে আসে। প্রীতি দরজা খুলে মঙ্গলকে ঘরে ঢুকিয়ে নেয় । তারপর দু’জনে মিলে মধুসূদনকে নৃশংস ভাবে খুন করে। জেলা পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন ,ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এখনও হাতে আসেনি । তবে জেরার ধৃতরা খুনের ঘটনা ঘটানোর কথা কবুল করেছে ।
wife brutally murdered her husband, who had become a thorn in the side with her boyfriend
