আবহাওয়া দক্ষিণবঙ্গ শিক্ষা লাইফ স্টাইল স্বাস্থ্য ভ্রমন ধর্ম কৃষি কাজ ক্রাইম

অবাক করলেও সত্যি -দোল পূর্ণিমায় রঙের উৎসবে মাতোয়ারা হন না বর্ধমান ও রাধাবল্লভবাটির বাসিন্দারা

By krishna Saha

Published :

WhatsApp Channel Join Now

প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় বর্ধমান :- দোল পূর্ণিমার দিন সারা বাংলা মাতোয়ারা রঙের উৎসবে।কিন্তু সুপ্রাচীন ঐতিহ্য মেনে এই দিনটিতে আবিরের রঙে রাঙা হন না রাঢ়বঙ্গের অন্যতম প্রাচীন নগর বর্ধমানের বাসিন্দারা।এখানে দোল উৎসব পালিত হয় দোল পূর্ণিমার পরের দিন ।রাজা না থাকলেও শতাব্দী প্রাচীন কাল ধরে রাজরীতি মেনে এ ভাবেই রঙের উৎসব পালন করে চলেছেন বর্ধমানবাসী।একই রকম ভাবে সাবেকী রীতিমেনে এই বর্ধমান জেলার জামালপুর ব্লকের ’রাধাবল্লভবাটি’ মৌজার বাসিন্দারাও এদিন আবিরের রঙে রাঙা হলেন না।তারাও দোল পূর্ণিমার পরদিন ’জোড়া রাধাবল্লভের’ দোলে আবিরের রঙে রাঙা হবেন।

দোল পূর্ণিমার দিন বর্ধমানবাসীর রঙের উৎসবে মাতোয়ারা না হওয়ার পিছনেও রয়েছে দেবতাদের প্রতি ভক্তির কাহিনী।কথিত আছে বর্ধমানের মহারাজা বিজয় চাঁদ মহতাব এই প্রথা চালু করেন ।প্রথম দিন অর্থাৎ দোল পূর্ণিমার দিনটি বর্ধমানের অধিষ্টাত্রী দেবী মা সর্বমঙ্গলা দেবীর দোল । এও কথিত আছে বর্ধমানে দোল পূর্ণিমা তিথিটি হল ঠাকুর ’দেবতার দোল’ উৎসবের দিন। সেদিন শুধুমাত্র দেব-দেবীর রাঙা চরণ আবির ও কুমকুমে চর্চিত হবে।সেই উপলক্ষে রাজবাড়ির অন্দর মহলে দোল খেলা হয়ে থাকে।পরের দিন অনুষ্ঠিত হবে মানব সাধারণের রঙের উৎসব । সেই রীতির আজও সার্থক উত্তরাধিকারী বর্ধমানের মানুষ । তাই ঐতিহ্য মেনে দোল পূর্ণিমা তিথিতে শুধুই বর্ধমানের অধিষ্ঠাত্রী দেবী সর্ব্বমঙ্গলার বাড়িতে দোল উৎসব পালিত হল।

একই রকম ঐতিহ্য মেনে দোল উৎসবের পরদিন ’জোড়া রাধাবল্লভের’ দোল উৎসবে মাতোয়ারা হন জামালপুরের রাধাবল্লভবাটি মৌজা এলাকার বাসিন্দারা । দীর্ঘ প্রায় চারশো বছর ধরে জোড়া রাধাবল্লভ পূজিত হয়ে আসছেন জামালপুরের রায় পরিবারের মন্দিরে।তাই দোল পূর্ণিমা তিথি শেষে হোলিতে রাধাবল্লভের চরণে আবির দিয়ে তারপর বিকালে রঙের উৎসবে মাতোয়ারা হবেন জামালপুরবাসী। মন্দির প্রাঙ্গনে মেলা বসে গিয়েছে।জোড়া রাধাবল্লভের পুজো দেখতে আশপাস এলাকারও বহু মানুষের ভিড় মন্দির প্রাঙ্গনে উপচে পড়ে । পূর্ব বর্ধমান জেলায় আজও অন্যতম ঐতিহ্যের সাক্ষ বহন করে চলেছে জোড়া রাধাবল্লভের দোল উৎসব ।

See also  অবহেলায় অযত্নে পড়ে রয়েছে প্রাচীন যুগের বিষ্ণু মূর্তি

জোড়া রাধাবল্লভের দোল উৎসব নিয়ে প্রচলিত রয়েছে নানা লোককথা।জামালপুরের রায় পরিবারের সদস্য প্রশান্ত কুমার রায় জানালেন , “তাঁদের পূর্ব পুরুষরা ছিলেন রাজপুত । প্রায় চার শতাধিক বছর কাল আগে রাজস্থান থেকে বর্ধমানে বানিজ্য করতে এসেছিলেন তাঁদের রাজপুত সিংহ বংশিয় এক পূর্ব পুরুষ । বর্ধমান জেলার জামালপুরে তিনি আস্তানা গাড়েন । শত্রু আক্রমণ ঠেকাতে ’গড়’ কাটা হয় আস্তানার চারপাশ জুড়ে । সেই গড় কাটার সময় মাটি থেকে উদ্ধার হয় রাধাকৃষ্ণের অষ্টধাতুর একটি মূর্তি । রাধাকৃষ্ণ মূর্তিটি রাজপুত পরিবারের কাছে রাধাবল্লভ নামে পরিচিতি পায় । আস্তানা এলাকায় ছোট্ট একটি মন্দির গড়ে রাধাবল্লভের মূর্তির পুজোপাঠ শুরু করে রাজপুত পরিবার । সেই সমসাময়িক কালেই কোন এক বৈষ্ণব সাধক ওই মন্দিরের সামনে কষ্টিপাথরের কৃষ্ণ মূর্তি এবং অষ্ট ধাতুর রাধা মূর্তি ফেলে রেখে দিয়ে চলে যান ।সেই থেকে দোল উৎসবের পরদিন প্রতিপদ তিথিতে জোড়া রাধাবল্লভের মূর্তির পুজোপাঠ হয়ে আসছে রাধাবল্লভ মন্দিরে“ ।

প্রশান্ত বাবু আরও জানান, পূর্বতন বর্ধমান মহারাজা জামালপুরের কয়েকটি মৌজা এলাকার জমিদারি দেখভালের দায়িত্ব দিয়েছিলেন তাদের পূর্ব পুরুষদের।সেই সময় কালেই রাধাবল্লভ কে স্মরণ করে এখানকার জমিদারি মৌজা রাধাবল্লভবাটি মৌজা নামে পরিচিতি পায় । বর্ধমান মহারাজা কর্তৃক রায় উপাধিতে ভূষিত হয় রাজস্থান থেকে জামালপুরে আস্তানা গাড়া সিংহ পরিবার। ভক্তিতে ভর করেই জোড়া রাধাবল্লভের দোল উৎসবের দিনেই রঙের উৎসবে মাতেন জামালপুরের রাধাবল্লভবাটি মৌজার বাসিন্দারা ।

রায় পরিবারের অপর সদস্য পার্থপ্রতিম রায় জানালেন , দোল পূর্ণিমার দিন রাধাবল্লভ মন্দির প্রাঙ্গনে পরিবারের সকল সদস্য মিলে চাঁচর পোড়ান । পূর্ণিমার পর দিন প্রতিপদ তিথিতে বংশের মন্দিরে হয় রাধা বল্লভের পুজোপাঠ । পার্থপ্রতিম বাবু এও বলেন , রাধাবল্লভের ভোগ অন্নে শুক্তো চাই । এদিন সকাল থেকে শুরু হয় পুজোপাঠ । রাধাবল্লভের চরণে আবির দিয়ে বিকালে মন্দির চত্ত্বরে এলাকাবাসী আবির খেলায় মাতেন । সন্ধ্যায় বিতরণ করা হয় অন্ন ভোগ ।

See also  গণতন্ত্র বাঁচাও বাংলা বাঁচাও এই দাবি নিয়ে অবস্থান বিক্ষোভ

krishna Saha

আমার নাম কৃষ্ণ কুমার সাহা, আমি ফুল টাইম সাংবাদিকতা করি।গত ৮ বছর ধরে এই পেশায় আছি