আবহাওয়া দক্ষিণবঙ্গ শিক্ষা লাইফ স্টাইল স্বাস্থ্য ভ্রমন ধর্ম কৃষি কাজ ক্রাইম

ইটভাটার শ্রমিক সস্তানদের শিক্ষার দিশা দেখাচ্ছে সোমেশের বিনে পয়সার পাঠশালা

krishna Saha

Published :

WhatsApp Channel Join Now

সুপ্রিম কোর্টের রায়ে শিক্ষকতার চাকরি খুইয়েছেন বঙ্গের হাজার হাজার শিক্ষক। তার কারণে এখন শিক্ষকের আকালে ধুঁকছে বাংলার বহু সরকারী শিক্ষাঙ্গন।বেশ কিছু শিক্ষাঙ্গনে আবার তালা পড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়ে গিয়েছে।তবে এসব কিছুই প্রভাব ফেলতে পারেনি পূর্ব বর্ধমানের কালনা মহকুমার পূর্বস্থলীর ইটভাটায় চলা ’পাঠশালায়’। নিঃস্বার্থে হতদরিদ্র শ্রমিক পরিবারের শিশু সন্তানদের শিক্ষার আলোকে আনার কাজে অবিচল রয়েছে সোমেশ মণ্ডলের পাঠশালা।তাই অজপাড়া গাঁয়ের ইটভাটায় চলা অখ্যাত পাঠশালাটি আজ বিখ্যাত শিক্ষানুরাগী মানুষজনের প্রশংসা কুড়িয়ে নিয়েছে।

বিদ্যা অর্জনের জন্য বহুকাল আগে দেবী সরস্বতী কে আঁকড়ে ধরেন বাংলার পূর্ব বর্ধমানের কালনা ও পূর্বস্থলী এলাকার বাসিন্দারা।তখন থেকেই এইসব এলাকায় একে একে প্রতিষ্ঠা পায় ’টোল’ ও ’চতুষ্পাঠী’।উইলিয়াম অ্যাডামের রিপোর্ট অনুযায়ী,’১৮৩৫ সালে অবিভক্ত বর্ধমান জেলায় ১৯৫টি চতুষ্পাঠী ছিল। তার মধ্যে কালনায় ছিল ৫৭টি। এছাড়াও পূর্বস্থলী-১ ব্লক সহ আশেপাশে ছিল আরও বহু চতুষ্পাঠী“। বিদ্যা অর্জনের এহেন পীঠস্থানে থাকা ইটভাটা শ্রমিক শিশু সন্তানরা শিক্ষা লাভ থেকে বঞ্চিত রয়ে থাকবে,এটা মন থেকে মেনে নিতে পারেনেনি শিক্ষক সোমেশ মণ্ডল ।তাই তিনি ইটভাটাতেই খুলে বসেন পাঠশালা। যা আজ বিদ্যা অর্জনের এক অনন্য পীঠস্থানের রুপ পেয়ে গিয়েছে।

ইটভাটা শ্রমিকের সন্তানদের শিক্ষার আলোকে আনার মহতি এই প্রচেষ্টার তারিফ করেছেন পদ্মশ্রী সন্মানে ভূষিত শিক্ষক সুজিত চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন,“শিক্ষক সোমেশ মণ্ডল মহাশয় পূর্বস্থলীর ইটভাটায় ’পাঠশালা’ খুলে ইটভাটা শ্রমিকদের সন্তানদের পাঠদান করছেন জেনে আমি অবিভূত। এমন মহতি কাজে যাঁরা সোমেশ বাবুর পাশে দাড়িয়েছেন,তাঁদেরও প্রশংসা সুজিত বাবু করছেন ।তিনি বলেন,আমাদের দেশের ইটভাটা শ্রমিকের সন্তানরাও যদি শিক্ষার আলোকে আলোকিত হয়,তাহলে আমাদের দেশ গর্বিত হবে।“সোমেশ বাবুর পাঠাশালায় গিয়ে সেখানকার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মিলিত হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন পদ্মশ্রী সুজিত চট্টোপাধ্যায়।

See also  শিক্ষকের আকালে বন্ধ হয়েযেতে বসা স্কুলের পড়ুয়াদের শিক্ষালাভে ভরসা পাঁচ শিক্ষিত বেকার যুবক যুবতী

শিক্ষক সোমেশ মণ্ডলের বাড়ি পূর্বস্থলী ১ ব্লকের নিমার গ্রামে।তিনি পূর্বস্থলীর নীলমণি ব্রহ্মচারী ইনস্টিটিউশনের ইংরেজির শিক্ষক। প্রায় এক দশক আগের কথা।বাড়ি থেকে স্কুলে যাওয়ার পথে পূর্বস্থলীর ইটভাটায় কর্মরত ভিন রাজ্যের শ্রমিকের শিশু সন্তানদের শিক্ষার আলো থেকে দূরে থাকার বিষয়টি তাঁর নজরে পড়তো।ওইসব শিশুদের রুক্ষ চেহারা ও ধুলোকাদা মাখা শরীর দেখে সোমেশ বাবু ব্যাথিত হতেন।তখনই ইটভাটার শিশুদের শিক্ষার আলোকে আনার ভাবনা জাগে তাঁর মনে।

ভাবনাকে বাস্তবায়িত করার জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠেন স্কুল শিক্ষক সোমেশ মণ্ডল। সময় নষ্ট না করে তিনি হিন্দী জানা এলাকার ছাত্র-ছাত্রী সুদীপ্ত ঘোষ,অঙ্কিতা বন্দ্যোপাধ্যায়,সুলতানা খাতুন,প্রদীপ অধিকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।তাদের কে তিনি ইটভাটায় পাঠশালা চালু করা সংক্রান্ত তাঁর ভাবনার কথা জানান এবং সহযোগীতা চান।হিন্দি জানা ছাত্র-ছাত্রীরা সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দেয় । তাদের কে সঙ্গে নিয়েই সোমেশ মণ্ডল পূর্বস্থলীর মসজিদ পাড়ার ইটভাটাতেই শুরু করেন ’বিনে পয়সার’ পাঠশালা।

ইটভাটার শ্রমিকরা যেহেতু হিন্দিভাষী তাই পাঠশালায় তাঁদের ছেলে মেয়েদের পাঠদান করা হয় হিন্দিতেই।ইংরাজিও পড়ানো হয়। ইটভাটা শ্রমিকের ছেলে-মেয়েদের পাঠশালায় আসার আগ্রহ বাড়াতে রংবাহারি বইয়ের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি টিফিনের ব্যবস্থাও করা হয়। এর জন্য সোমেশ বাবু কখনও নিজের পকেট থেকে পয়সা খরচ করেন,আবার কখনও কোন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও স্থানীয় শিক্ষানুরাগীরা সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দেন।এইভাবে সপ্তাহে তিন-চারদিন চলা পাঠশালাটি আজ ইটভাটা শ্রমিকদের ছেলে মেয়েদের কাছে ’প্রাণের পাঠশালা’ হয়ে উঠেছে। ইটভাটা মালিকপক্ষও তা দেখে মুগ্ধ।তাঁরা ইটভাটার গাছতলায় চলা পাঠশালায় বসার জায়গাটি কংক্রিট করে বাঁধিয়ে দিয়েছেন।তার সাথে তাঁরা সেখানে ব্ল্যাক বোর্ডও তৈরি করে দিয়েছেন। বর্তমানে পাঠশালায় পড়ুয়া সংখ্যা ৫০ ছুঁইছুঁই।।

শিক্ষক সোমেশ মণ্ডল জানিয়েছেন,“ বিহার ও ঝাড়খণ্ড থেকে আসা শ্রমিকরা ইটভাটায় কাজ করেন। তারা সকলেই হিন্দিভাষী।অক্টোবর মাসে তারা পূর্বস্থলীর ইটভাটায় চলে এসে কাজ যোগ দেন। সেই থেকে টানা জুন মাস পর্যন্ত ইটভাটায় কাজ করে তারা নিজেদের দেশের বাড়িতে ফিরে যান। শৈশব থেকেই শিক্ষা লাভ থেকে বঞ্চিত রয়ে থাকে হতদরিদ্র এই শ্রমিকদের সন্তানরা।সেটা দেখেই ইটভাটার গাছতলায় পাঠশালা খুলে তাঁদের পাঠদানের ব্যবস্থা করি। পাঠশালাটি ইটভাটা শ্রমিকদের ছেলে-মেয়েদের কাছে ’প্রাণের পাঠশালা’ হয়ে উঠেছে, এটা আমার কাছে অনেক বড় প্রাপ্তি“।

krishna Saha

আমার নাম কৃষ্ণ কুমার সাহা, আমি ফুল টাইম সাংবাদিকতা করি।গত ৮ বছর ধরে এই পেশায় আছি