প্রদীপ চট্টোপাধ্যয় বর্ধমান ১০ ফেব্রুয়ারি :- চিকিৎসকরা প্রতিবাদী যুবকে প্রাণে বাঁচানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে গেলেও শেষ রক্ষা হল না। টানা পাঁচ দিন ধরে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর কোলেই ঢলে পড়লেন মদ্যপ যুবকদলের মারধোরে গুরুতর জখম হওয়া পার্থপ্রতিম ঘোষ (৩৩)।তার বাড়ি পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়া শহরের নন্দলাল বসু রোডে। সরস্বতী পুজোর রাতে মদ্যপ যুবক দল এলাকায় তাণ্ডব শুরু করলে পার্থপ্রতিম তার প্রতিবাদ করে রুখে দাঁড়ায় ।


তার কারণে ওই মদ্যপ যুবকরা লাঠি- সোঁটা নিয়ে পার্থপ্রতিমের উপর চড়াও হয়ে তাকে ব্যাপক মারধোর করে। মাথায় গুরুতর চোট নিয়ে সেই দিন থেকে পার্থপ্রতিম বর্ধমানের একটি বেসরকারী হাসপাতালে ভর্তি ছিল । বৃহস্পতিবার সকালে সেখানেই সে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে । এই খবর এদিন ছড়িয়ে পড়তেই কাটোয়া শহরজুড়ে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে । পার্থপ্রতিম কে মারধোরের ঘটনায় জড়িত অভিযুক্তদের সকলের ফাঁসির দাবিতে সরব হয়েছেন কাটোয়াবাসী ।
কাটোয়া শহরের নন্দলাল বসু রোডে বাসিন্দারা এদিন জানান ,পার্থপ্রতিম কাটোয়া পুরসভায় অস্থায়ী কর্মী ছিলেন। বছর ছয়েক আগে তাঁর বিয়ে হয়। বাড়িতে রয়েছেন পার্থ প্রতিমের বাবা, মা, স্ত্রী ও পাঁচ বছরের একটি পুত্রসন্তান ।ক্রিকেট খেলাতেও পার্থপ্রতিম যথেষ্ট পারদর্শী ছিল। অত্যন্ত ভদ্র সভ্য এই যুবক কোথাও কোন অন্যায় দেখলেই রুখে দাঁড়াতো ।সেই প্রতিবাদী যুবকে মদ্যপ যুবক দল হত্যার করায় ক্ষোভে ফুঁষছেন কাটোয়াবাসী।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে ,সরস্বতী পুজোর রাতে ১০-১২ জনের মদ্যপ যুবকের একটি দল এলাকার দোকান ঘরের শাটার ও গৃহস্থের বাড়ির গেট ভাঙচুর করা শুরু করে ।তা দেখে প্রতিবাদ না করে থাকতে পারেননি পার্থপ্রতিম ।সে তাঁর দুই প্রতিবেশী বন্ধু অপরূপ চট্টোপাধ্যায় ও সঞ্জয় সিং কে সঙ্গে নিয়ে মদ্যপ যুবকদের তাণ্ডবের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়।ওই সময় মদ্যপ যুবকরা লাঠি-সোঁটা, ইঁট-পাটকেল নিয়ে পার্থপ্রতিম ও তার বন্ধুদের উপর হামলা চালানো শুরু কর । তখন প্রাণ বাঁচাতে দুই বন্ধু লুকিয়ে পড়লে মদপরা পার্থপ্রতিম কে একা পেয়ে তাকে ধরে এলোপাথাড়ি মারধর শুরু করে । মাথায় গুরুতর আঘাত লাগায় পার্থপ্রতিম ঘটনাস্থলে লুটিয়ে পড়েন ।
তখনও রেহাই মেলে নি ।হামলাকারীদের একজন সরস্বতী পূজো মণ্ডপে সাজিয়ে রাখা একটি ভারি ফুলের টব তুলে এনে সজোরে পার্থপ্রতিমের মাথায় মারে ।মাথা ফেটে ফিনকি দিয়ে রক্তপাত শুরু হয় । পার্থপ্রতিম জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন মরে গেছে ভেবে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।অপরূপ ও সঞ্জয় এরপর চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করলে স্থানীরা ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে পার্থপ্রতিমকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করে ।
এই ঘটনা নিয়ে দায়ের হওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে কাটোয়া থানার পুলিশ স্থানীয় ছোট্ট চন্দ্র, বাবু রায়, হুলু পণ্ডিত, সোমনাথ থাণ্ডার, মানিক পণ্ডিত সহ ১২ জনের বিরুদ্ধে এফআইআর রুজু করে। দু’দফায় কাটোয়া থানার পুলিশ ১২ জন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে। এখন জেল হেফাজতে থাকা ওই সকল ধৃতের বুরুদ্ধে খুনের ধারা সংযুক্ত করে তাদের ফাঁসির শাস্তির ব্যবস্থা করার দাবি এদিন করেছেন মৃতর পরিজন ও কাটোয়া শহরের বাসিন্দারা । মৃত পার্থপ্রতিম ঘোষ ও শোকার্ত পরিবার ।