বর্ধমান জেলা
বর্ধমান জেলা ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত বর্ধমান বিভাগের একটি জেলা। এটি মূলত কৃষি প্রধান জেলা। একে পশ্চিম বঙ্গের শস্য ভান্ডার বলা হয়। জেলার বৃহত্তম শহর বর্ধমান মহানগর। ধান এ জেলার প্রধান ফসল। এ ছাড়া গম, পাট, আলু, পেঁয়াজ, আখ হয়। জেলার রানিগঞ্জ এবং আসানসোল কয়লাখনির জন্য প্রসিদ্ধ। দূর্গাপুরে আছে লৌহ-ইস্পাত কারখানা। জেলা সদর বর্ধমান থেকে অল্প দূরে কাঞ্চন নগর ছুরি, কাচির জন্য প্রসিদ্ধ। ধাত্রিগ্রাম তাঁতের কাপড়ের জন্য প্রসিদ্ধ।
বর্ধমান জেলা | |
---|---|
পশ্চিমবঙ্গের জেলা | |
![]() ![]() পশ্চিমবঙ্গে বর্ধমানের অবস্থান
|
|
দেশ | ভারত |
রাজ্য | পশ্চিমবঙ্গ |
প্রশাসনিক বিভাগ | বর্ধমান |
সদরদপ্তর | বর্ধমান |
সরকার | |
• লোকসভা কেন্দ্র | ৫টি |
• বিধানসভা আসন | ২৫টি |
আয়তন | |
• মোট | ৭০২৪ কিমি২ (২৭১২ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (২০১১) | |
• মোট | ৭৭,২৩,৬৬৩ |
• জনঘনত্ব | ১১০০/কিমি২ (২৮০০/বর্গমাইল) |
• মূল শহর | ৩৬.৯৪ |
জনতাত্ত্বিক | |
• সাক্ষরতা | ৭৭.১৫ %[১] |
• লিঙ্গানুপাত | ৯২২ |
প্রধান মহাসড়ক | জাতীয় সড়ক ২, গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোড, পানাগড়-মোরগ্রাম হাইওয়ে, জাতীয় সড়ক ৬০ |
গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাত | ১৪৪২ মিমি |
ওয়েবসাইট | দাপ্তরিক ওয়েবসাইট |
ইতিহাস[সম্পাদনা]
বর্ধমানের ইতিহাস শুরু খ্রীষ্টপূর্ব ৫০০ সন তথা মেসোলিথিক বা প্রস্তর যুগের অন্তিম সময়। Burdwan নামটি সংস্কৃত বর্ধমান থেকে ইংরেজ কর্তৃক প্রদত্ত। গলসি থানা সংলগ্ন “মল্লসরুল” গ্রামে প্রাপ্ত ষষ্ঠ শতকের একটি তাম্রলিপিতে প্রথম নামটির উল্লেখ পাওয়া যায়। নামের মূল নিয়ে দুটি মত রয়েছে। প্রথম মতানুযায়ী, নামটি ২৪ তম জৈন তীর্থাঙ্কর বা বর্ধমানস্বামী’র নামানুসারে প্রণীত হয়েছে। জৈন কল্পসূত্রাণুসারে, মহাবীর কিছুসময় অস্তিকগ্রামে কাটিয়েছিলেন, যা পরে বর্ধমান নামে পরিচিত হয়।অন্যমতানুযায়ী, বর্ধমানা অর্থ সম্পন্ন কেন্দ্র। গাঙ্গেয় উপত্যকায় আর্য সভ্যতার বিকাশের সময়ে, উন্নতি এবং সম্পনতার প্রতীক হিসেবে স্থানটি পরিচিত ছিল। রাজস্ব আদায়ের সুবিধার জন্য মুঘল সম্রাট আকবর বাংলা সুবাকে উনিশটি সরকারে ভাগ করেন। আইন-ই-আকবরী অনুযায়ী বর্ধমান জেলার সঙ্গে সম্পর্কিত যে তিনটি সরকারের নাম পাওয়া যায় তার মধ্যে একটি শরিফাবাদ। শরিফ শব্দের অর্থ সম্ভ্রান্ত। সেই অর্থে এলাকাটি ছিল অপেক্ষাকৃত সম্ভ্রান্ত অঞ্চল। পরে বর্ধমানের নাম হয় শরিফাবাদ। সেই সময় বীরভূমের দক্ষিণাংশ, মুর্শিবাদ জেলার কান্দি আর বর্ধমান জেলার মধ্য অংশ জুড়ে এর সীমানা ছিল। রাজা তিলকচাঁদ ছিলেন বর্ধমানের প্রথম মহারাজধিরাজ। তাদের বংশের অন্যতম রাজারা হলেন প্রতাপচাঁদ ও মহতাবচাঁদ। ব্রিটিশ আমলে রানী বেনদেয়ী তাঁর দেওয়ান বনবিহারীর পুত্র বিজনবিহারীকে দত্তক নিয়ে বিজয়চাঁদ নাম দিয়ে বর্ধমানের সিংহাসনে বসান।
জেলার বিখ্যাত ব্যক্তি[সম্পাদনা]
- ভবদেব ভট্ট-১০ শতকের শেষে বা ১১ শতকের শুরুতে গুসকরার কাছে সিদ্ধল গ্রামে জন্ম (মতান্তরে মঙ্গলকোটের শীতল গ্রামে)
- মুকুন্দরাম চক্রবর্তী ষোড়শ শতাব্দীর বাঙালি কবি।
- বৃন্দাবন দাস– পদাবলী সাহিত্যের বিখ্যাত কবি। বর্ধমানের কাছে দেনুর গ্রামে ১৬ শতকের শুরুতে জন্ম।
- কাশীরাম দাস (সময়কাল আনুমানিক ষোড়শ-সপ্তদশ শতাব্দী) বাঙালি কবি।
- অকিঞ্চন (১৭৫০ – ১৮৩৬, প্রকৃত নাম রঘুনাথ রায়), শ্যামাসংগীত ও বৈষ্ণব পদকর্তা। জন্মস্থান চুপি।[২]
- হটু বিদ্যালঙ্কার (১৭৭৫ – ১৮৭৫), মহিলা পন্ডিত, বৈয়াকরণিক ও চিকিৎসক।
- অক্ষয়কুমার দত্ত (১৮২০ – ১৮৮৬), ব্রাহ্ম ধর্মসংস্কারক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক। কালনা মহাকুমার চুপি গ্রামে জন্ম।[৩]
- যাদবেন্দ্রনাথ পাঁজা, (১৮৮৫ – ১৯৬১) ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন ব্যক্তিত্ব এবং আইন ব্যবসায়ী।
- রাসবিহারী বসু, (১৮৮৬ – ১৯৪৫) ভারতে ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন বিপ্লবী নেতা।
- কালিদাস রায় (জন্ম: ২২ জুন ১৮৮৯ – মৃত্যু: ২৫ অক্টোবর ১৯৭৫) ছিলেন রবীন্দ্রযুগের বিশিষ্ট রবীন্দ্রানুসারী কবি, প্রাবন্ধিক ও পাঠ্যপুস্তক রচয়িতা।
- কাজী নজরুল ইসলাম (১৮৯৯ – ১৯৭৬) বাঙালি কবি। আসানসোলের চুরুলিয়া গ্রামে কবির জন্ম।
- সুবোধ চৌধুরী (১৯১৪ – ২৬ আগস্ট, ১৯৭২) ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন ব্যক্তিত্ব ও অগ্নিযুগের বিপ্লবী।
- অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় (১৯৩৩ – ১৯৮৩), নাট্য ও চলচ্চিত্র অভিনেতা। জন্মস্থান রেপো, আসানসোল।[৪]
- সাধক কমলাকান্ত
- লালবিহারী দে
- কুমুদরঞ্জন মল্লিক[৫]
- সুকুমার সেন (১৯০০-১৯৯২)
- শৈলবালা ঘোষজায়া (১৮৯৪-১৯৭৪), ঔপন্যাসিক ও ছোটগল্পকার।
- বিনয় চৌধুরী, স্বাধীনতা সংগ্রামী ও বামপন্থি রাজনীতিবিদ