প্রদীপ কুমার মন্ডল ( দক্ষিণ দামোদর ) :- ঐতিহ্যপূর্ণ দক্ষিণ দামোদর এর বাস পরিবহনে বাধা প্রশাসনের। ক্ষোভ দক্ষিণ দামোদর এলাকাসহ বিভিন্ন জেলায়।উল্লেখ্য ২০১৪ সালে দক্ষিণ দামোদর থেকে বর্ধমান শহরে প্রবেশ করার সমস্ত বাস পরিষেবা বন্ধ করে দেয় প্রশাসন।তৎকালীন সময়ে দক্ষিণ দামোদরের বিভিন্ন সমাজসেবী সংগঠন,বিভিন্ন ব্যাবসায়ী সংগঠন, বিভিন্ন ডেলি প্যাসেঞ্জার অ্যাসোসিয়েশন সহ বিভিন্ন স্টুডেন্ট ইউনিয়ন প্রতিবাদে নামে। সাথে সাথেই বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন গুলি প্রতিবাদে পথে নামেন। তা সত্ত্বেও ওই বিষয়টি নিয়ে কোনো কর্ণপাত করেনি জেলা প্রশাসন।
বাস না ঢুকতে দেওয়ায় দক্ষিণ দামোদর এলাকার মানুষদের বহু অসুবিধা হলেও সহ্য করে নিয়েছিলেন সেই সময়। বর্ধমান শহরের তেলিপুকুর থেকে বাস ন্যাশনাল হাইওয়ে ধরে আলিশা বাস স্ট্যান্ডে স্ট্যান্ড করত এবং আলিশা থেকে বর্ধমান শহরের পারবিরহাটা হয়ে তেলিপুকুর আসতো। দক্ষিণ দামোদর সহ বিভিন্ন জেলার মানুষের অসুবিধা হলেও হাসিমুখে মেনে নিয়েছিলেন তারা সরকারি নির্দেশ কে।কিন্তু আজ মঙ্গলবার থেকে হঠাৎ করেই সরকারি নির্দেশে আলিশা থেকে ন্যাশনাল হাইওয়ে ধরে যাত্রীবাহী বাস চলাচল করতে বাধ্য হয়।

জানা যায় গত কয়েকদিন আগেই সরকারিভাবে বাস মালিকদের নির্দেশ দেওয়া হয় শহরের ভেতর দিয়ে কোন বাস দক্ষিণ দামোদর পৌঁছাবে না। অর্থাৎ দক্ষিণ দামোদর থেকে যাওয়া যাত্রীবাহী বাস এবং দক্ষিণ দামোদর এলাকায় আসা যাত্রীবাহী বাস গুলিকে শহরের বাইরে দিয়ে যাতায়াত করতে হবে। ক্ষোভে ফেটে পড়ে দক্ষিণ দামোদর সহ বিভিন্ন জেলার মানুষরা। সরকারি ভাবে দেওয়া এই নির্দেশকে কোনোভাবেই মানতে পারছেন না দক্ষিণ দামোদর বাস ওয়েলফেয়ার সমিতির সাধারণ সম্পাদক থেকে সমস্ত সদস্যরা। দক্ষিণ দামোদর বাস ব্যবসায়ী ওয়েলফেয়ার সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেখ রিয়াজ উদ্দিন আমেদ বলেন দক্ষিণ দামোদর এলাকা থেকে রাজ্য সড়ক ৭ এর উপর দিয়ে বর্ধমান জেলা সহ হাওড়া হুগলি দুই মেদিনীপুর ঝাড়গ্রাম বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া জেলা থেকে কমবেশি ২৬০ টি যাত্রীবাহী বাস পরিষেবা দেয় প্রতিদিন।
এতে করে বাস ব্যবসায়ীরা যেমন বিপদে পড়ল তেমনি বিপদে পড়ল নিত্যযাত্রী সহ অন্যান্য যাত্রীরা। কলকাতা মহানগরী,আসানসোল সহ রাজ্যের বিভিন্ন শহরে রেল স্টেশন বা শহরের মধ্যস্থলে বিভিন্ন এলাকা থেকে যাত্রীবাহী বাস প্রবেশ করে। সেখানে কোন যানজটের সৃষ্টি হয় না। শুধুমাত্র বর্ধমান শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে যাত্রীবাহী বাস ঢুকলেই বর্ধমান শহরের যানজট সৃষ্টি হয়। তিনি আরো বলেন বিষয়টি তা নয় একশ্রেণীর মানুষ অঙ্গুলিহেলনে টোটো ব্যবসার মাধ্যমে অধিক লভ্যাংশের জন্য বর্ধমান শহরে যাত্রীবাহী বাস ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। পূর্ব বর্ধমান জেলার পাঁচটি বিধানসভার যে সব বিধায়ক আছেন ওনারা দক্ষিণ দামোদর এলাকাতেই জন্মগ্রহন এবং বসবাস করেন।
দক্ষিণ দামোদর এলাকায় জেলা পরিষদের সদস্য আছেন ৭ জন তারাও দক্ষিণ দামোদর এর মানুষ। ওই পাঁচ বিধায়ক এবং সাত জেলা পরিষদের সদস্যদের মধ্যে অধিকাংশ জনই বলেন এই নির্দেশিকার বিষয়ে আমরা জানি না। আমাদেরকে না জানিয়ে কেন এমন সিদ্ধান্ত সেটাও বুঝে উঠতে পারছিনা। পূর্ব বর্ধমান জেলা সভাধিপতি তথা রায়না বিধানসভার বিধায়িকা শম্পা ধাড়া বলেন ২০১৪ সালে তৎকালীন এস পি, ডি এম, বি ডি এর চেয়ারম্যান এবং সভাধিপতি সহ আরো অন্যান্য আধিকারিকদের নিয়ে বর্ধমান শহরে বাস প্রবেশ বন্ধ করেছিলেন। এমনিতেই তেলিপুকুর বাস স্টপেজ নেই যাত্রীনিবাস নেই কোনো শৌচাগার। বয়স্ক যাত্রীদের সহ মহিলাদের প্রচুর অসুবিধা। আমরা এই বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে অতিসত্বর জানাবো।
পূর্ব বর্ধমান জেলার যুব সভাপতি তথা জামালপুর বিধানসভার বিধায়ক অলোক কুমার মাঝি বলেন ২০১৪ সাল থেকে যে পদ্ধতিতে যাত্রীবাহী বাস গুলি যাতায়াত করতো সেই পদ্ধতি চালু রাখার জন্যই আর্জি জানিয়েছে সর্ব ধরনের জেলা আধিকারিকদের কাছে। তিনি আরো বলেন বর্ধমান শহরের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে না দিলে অতি অবশ্যই দক্ষিণ দামোদর এলাকায় সাব ডিভিশনাল অফিস সাব-ডিভিশনাল কোর্ট সহ সাবডিভিশনাল হসপিটাল তৈরি করে দেওয়ার আর্জি জানিয়েছি।
খণ্ডঘোষ বিধানসভার বিধায়ক নবীনচন্দ্র বাগ বলেন বর্ধমান শহরের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ না হওয়ায় দক্ষিণ দামোদর এর মানুষ তাদের প্রাণকেন্দ্র শহর ঢুকতে না পারার জন্য ব্যাপক ব্যথা পাবে বলে মনে করি। অতি অবশ্যই লিখিতভাবে বিধানসভার স্পিকার কে এই বিষয়টি জানাবো। খণ্ডঘোষ ব্লক সভাপতি অপার্থিব ইসলাম বলেন মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী মানবিক মুখ্যমন্ত্রী সহ প্রিয় দিদি মমতা ব্যানার্জির কানে এই বিষয়টি অবগত করানো হয়নি বলেই আজ এই অবস্থা। প্রশাসনিকভাবে বর্ধমান শহরে যানজট মুক্ত করার জায়গায় টোটো ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে বেশি যানজট তৈরি হচ্ছে। প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।