আমাদের এই বাংলায় রয়েছে পর্যাপ্ত জমি, পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ ভান্ডার, শ্রমিক ভান্ডার, প্রতিভাবান ছাত্রসহ সমস্ত কিছুই। তাই আমি সবার কাছে আবেদন রাখবো বাংলায় বিনিয়োগ করার জন্য। বাংলা এখন বিনিয়োগের আন্তর্জাতিক ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে।
বুধবার পূর্ব মেদিনীপুর জেলার দিঘায় বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের (বেঙ্গল বিজনেস কনক্লেভ) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যে নতুন শিল্প স্থাপনের বিনিয়োগের লক্ষ্যকে সামনে রেখে দিঘা শহরে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে আয়োজন করা হয় এক আন্তর্জাতিক মানের বাণিজ্য সম্মেলনের।
বুধবার এই সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ২০টি দেশের শিল্প প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের চিফ সেক্রেটারি রাজীব সিনহা, স্বরাষ্ট্রসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়, মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী সহ বাংলাদেশের মন্ত্রী নুরুল মজিদ, ভুটানের মন্ত্রী লোকনাথ শর্মা সহ একাধিক দেশ-বিদেশের বিভিন্ন শিল্প প্রতিনিধিরা। এতদিন বাণিজ্য সম্মেলন মূলত শহর কলকাতাতে নামজাদা শিল্পপতিদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হতো।
প্রতি দুই বছরে একবার করে এই বাণিজ্য সম্মেলন করা হবে। কারণ মাঝে শিল্প বিনিয়োগের জন্য বেশ কিছুটা সময় শিল্পপতিদের লেগে থাকে। তাই প্রতি দু’বছর অন্তর করে একবার বাণিজ্য সম্মেলন আমরা রাজ্যের তরফ থেকে করব। কলকাতা থেকে সামান্য দূরে এই দিঘা শহর। যেখানেও একটি কনভেনশন সেন্টার তৈরি করা হয়েছে যার মধ্যে ৭০টি হোটেল রুম সহ বড় বড় সেমিনারের ব্যবস্থা রয়েছে।
“এদিন মুখ্যমন্ত্রী শিল্পের কথা উল্লেখ করে বলেন, ” শিল্পমানে একটি হাসিময় দৃঢ়সম্পর্কের মুখ। আর সেই মুখ একমাত্র বাংলাতেই পাবেন আপনি। বাংলার মধ্যে কোন জাতি ধর্ম বর্ণ বৈষম্য নেই। এখানে সবাই সমান। এখানে কেউ শিল্পে বাধা দেবে না, কোনরকম বিভেদ ছাড়াই শিল্প করা যাবে।” তিনি রাজ্যের এই সৈকত শহর দিঘারসহ রাজ্যের পর্যটন স্থান গুলির কথা উল্লেখ করে বলেন, “আট বছর আগের দিঘা কি ছিল আর এখন কি রূপ নিয়েছে।
দিঘা এখন আন্তর্জাতিক পর্যটন শিল্প হিসেবে স্থান করে নিয়েছে। দিঘায় প্রায় এক হাজারেরও বেশি হোটেল রয়েছে। এখানকার পর্যটন বাণিজ্যের ফলে প্রায় ১৩ লক্ষ মানুষের কর্মের দুয়ার খুলে গেছে। দিঘা ছাড়াও বাংলার মধ্যে আরও বহু ধরনের পর্যটন ক্ষেত্র রয়েছে। গভীর জঙ্গল, উচ্চতম পাহাড়, গভীর সমুদ্র সহ নানাবিধ রয়েছে এই বাংলার মধ্যে। এছাড়াও বাংলার মূল বৈশিষ্ট্য হলো এখানকার জৈব বৈচিত্র।” তিনি বলেন, ” ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্ডাস্ট্রি, এমএসএমই ইন্ডাস্ট্রি সহ নানা ধরনের ইন্ডাস্ট্রিতে বাংলা সবার শীর্ষে রয়েছে।
আজকের এই সম্মেলনে অনেকেই ইতালি, জার্মানি, কোরিয়া প্রভৃতি স্থান থেকে এসেছেন আমরা সকলকে মনে করি নিজের পরিবার। আপনারা জানেন আমাদের এই বাংলা গৌরবের বাংলা। এই বাংলারতেই জন্মেছেন বহু নোবেলজয়ী ব্যক্তি। এখান থেকে নোবেল পেয়েছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সাম্প্রতিক অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়, মাদার টেরিজার মতো গুণী ব্যক্তিরা।
“মুখ্যমন্ত্রী বাংলার যাত্রাপথ উল্লেখ করে বলেন,”বাংলা থেকে নেপাল, ভুটান, বাংলাদেশের দূরত্ব প্রায় আধঘন্টা, এছাড়াও ব্যাংকক ও সিঙ্গাপুরের দূরত্ব বিমানে মাত্র আড়াই ঘন্টা। তাই আমি মনে করি অন্যান্য রাজ্যের থেকে বাংলা শিল্পের জন্য আদর্শ জায়গা। এছাড়াও আমাদের কৃষিজ দ্রব্য ও ইন্ডাস্ট্রি শিল্পও খুব ভালো। কারিগরি শিক্ষার উন্নয়নের দিক থেকেও আমরা এগিয়ে রয়েছি। তাই আপনারা শিল্পের বিনিয়োগ করুন এই আবেদন রাখলাম”।
এদিনের এই সম্মেলনে পোল্যান্ড, নেদারল্যান্ড, আর্জেন্টিনা, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, রাশিয়া, ইতালি, থাইল্যান্ড, জার্মানিসহ ২০টি দেশের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। এদিন মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের পর শিল্প প্রতিনিধিদের সামনে রাজ্যের একাধিক মডেল উপস্থাপন করা হয়।
অতিথিদের কোনরকম আপ্যায়নের ত্রুটি না রাখতে রাজ্য শিল্পোউন্নয়ন দপ্তরের তরফ থেকে রাখা হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। এদিনের এই সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয় দিঘা কনভেনশন সেন্টারে। বিকেলে এই সম্মেলন শেষের পরে দিঘার যাত্রানালা পার্কে বসে সাংস্কৃতিক বিনোদনের আসর। দু’দিন ব্যাপী এই বাণিজ্য সম্মেলন এর আজ বৃহস্পতিবার সমাপ্তি হবে।
বাণিজ্য সম্মেলনকে কেন্দ্র করে নবরূপে সেজে উঠেছে দিঘা শহর। বাণিজ্য সম্মেলনে শিল্প প্রতিনিধিদের জন্য রাখা হয়েছে ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তা বলয়।