আবহাওয়া দক্ষিণবঙ্গ শিক্ষা লাইফ স্টাইল স্বাস্থ্য ভ্রমন ধর্ম কৃষি কাজ ক্রাইম

সিরিয়াল কিলার ‘চেনম্যানকে ’ মৃত্যু দণ্ডের সাজা দিল কালনা আদালত

krishna Saha

Published :

WhatsApp Channel Join Now
বাবু সিদ্ধান্ত ( বর্ধমান ) :-
সিরিয়াল কিলার ‘স্টোন ম্যান ’ আতঙ্কে একদা বুক কাঁপতো মুম্বাই ও কলকাতাবাসীর। তেমনই এক সিরিয়াল কিলার ‘চেনম্যান’ কে ঘিরে ২০১৯ শে ত্রাশ তৈরি হয়ে গিয়েছিল পূর্ব বর্ধমানের কালনায় । গলায় চেন পেঁচিয়ে বাড়িতে একা থাকা মহিলার খুন করার পর তাকে ধর্ষণ করে লুটপাত চালাতো ‘চেনম্যান’ ।
সেই সিরিয়াল কিলার ‘চেনম্যান’ কামরুজ্জামান সরকারের মৃত্যু দণ্ডের নির্দেশ দিল আদালত।সোমবার পূর্ব বর্ধমানের কালনার অতিরিক্ত জেলা দায়রা আদালতের বিচারক তপন কুমার মণ্ডল এই সাজা ঘোষনা করেন। আদালত দৃষ্টান্তমূলক এই সাজা ঘোষনা করায় খুশি কামরুজ্জামানের হাতে খুন হয়ে যাওয়া কালনার সিঙ্গেরকোনের নাবালিকা ছাত্রীর পরিবার।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে , ২০১৯ সালের
৩০ মে-র ঘটনা।ওই দিন বিকালে কালনার সিঙ্গেরকোন গ্রামে থাকা নিজেদের বাড়িতে একাই ছিল দশম শ্রেণীতে পড়ুয়া নাবালিকা ছাত্রীটি।তার মা তখন অপরের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ সারতে গিয়েছিলেন । এলাকায় রেইকি চালানোর সময়ে ছাত্রীটি বাড়িতে একা থাকার বিষয়ে জানতে পারে কামরুজ্জামান। সূযোগ বুঝে সে চুপিসারে ছাত্রীর ঘরে ঢুকে পড়ে । অভিযোগ কামরুজ্জামান প্রথমে ছাত্রীকে ধর্ষন করতে উদ্যত হয় । ছাত্রী বাধা দিলে কামরুজ্জামান ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে । এরপরেই কামরুজ্জামান ধারালো ও ভারী কিছু দিয়ে ছাত্রীর মাথায় আঘাত করার পর তাঁর গলায় লোহার চেন পেঁচিয়ে ধরে । ছাত্রী জ্ঞান হারালে কামরুজ্জামান মনেকরে ছাত্রীটি মারা গিয়েছে ।
সংজ্ঞাহীন অবস্থায় পড়েথাকা ছাত্রীর উপর যৌন অত্যাচার চালিয়ে কামরুজ্জামান চম্পট দেয়। সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে মেয়েকে রক্তাত অবস্থায় ঘরে পড়ে থাকতে দেখে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করেন ছাত্রীর মা । খবর পেয়ে পুলিশ ও স্থানীয় মানুষজন ঘটনাস্থলে ছাত্রীকে উদ্ধার করে কালনা মহকুমা হাসপাতালে নিয়েগিয়ে ভর্তি করে। সেখানে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ছাত্রীকে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে স্থানান্তর করাহয়। সেখানে কয়েকদিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে ওই ছাত্রী হার মানে ।
এই ঘটনা নিয়ে ছাত্রীর পরিবার অভিযোগ জানানোর পরেই নড়েচড়ে বসে কালনা থানার পুলিশ । জেলা পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্তারাও খুনি চেনম্যানের খোঁজে নানা ভাবে চেষ্টা চালানো শুরু করেন । খুনির নাগাল পেতে বিভিন্ন থানায় তথ্য পাঠানো হয় । একই সঙ্গে
চলতে থাকে নাকা চেকিং ও খানা তল্লাশী।
ঘটনার কয়েকদিন বাদ ২ জুন নাকা চেকিং
চলাকালীন কাঁকুরিয়া গ্রামে বাইক নিয়ে যাওয়ার সময় সিভিক ভল্যান্টিয়ার অনির্বাণ ঘোষের হাতে ধরা পড়েযায় ‘চেনম্যান ’ কামরুজাম্মান সরকার।

পুলিশের দাবি ম্যারাথন জেরায় কামরুজ্জামান ছাত্রীর উপর হামলা ও যৌন নির্যাতন চালানোর কথা কবুল করে।জিজ্ঞাসাবাদে কামরুজ্জামান পুলিশকে জানায় তার আদি বাড়ি মুর্শিদাবাদে হলেও স্ত্রী ও তিন সন্তানকে নিয়ে সে কালনার সমুদ্রগড়ের সুজননগরে থাকা শুরু করেছে । ৩ জুন ধৃত কামরুজ্জামানকে কালনা আদালতে পেশ করে পুলিশ নিজেদের হেপাজতে নেয় । কামরুজ্জামানকে হেপাজতে নিয়ে পুলিশ তদন্ত চালালে উঠে আসে
আরও নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য ।
তদন্তকারী পুলিশ কর্তারা জানতে পারেন সিঙ্গেরকোনের ছাত্রী কামরুজ্জামানের প্রথম শিকার নয় ।ওই বছর ৬ মাসের মধ্যে কালনা
মহকুমার ৬ মহিলা কামরুজ্জামানের বর্বরোচিত হামলার শিকার হয়েছে ।এছাড়াও
হুগলী ও পূর্ব বর্ধমান জেলার বিভিন্ন থানা এলাকায় ঘটানো ১৩ টি ঘটনার মধ্যে সে ১১ টি খুনের ঘটনা ঘটিয়েছে। পুলিশ
আরও জানিয়েছে ,বাড়িতে একা থাকা মহিলারাই ছিলেন কামরুজ্জামানের টার্গেট । তার জন্য বাইকে চড়ে নানা অছিলার এলাকায় এলাকায় ঘুরে সে রেইকি চালাতো ।এরপর সূযোগ বুঝে বাড়িতে একা থাকা মহিলার ঘরে ঢুকে গিয়ে অতর্কিতে আক্রমন শানাতো কামরুজ্জামান । প্রথম সে ধারালো ও ভারী ধরনের লোহার রড দিয়ে মাথায় আঘাত করে মহিলাকে ঘায়েল করতো ।
পরে গলায় চেন পেঁচিয়ে ওই মহিলাকে খুন করে সে তার যৌন লালসা পূরণ করতো । এই কার্যসিদ্ধি হবার পর মহিলার ঘরে থাকা মূল্যবান সামগ্রী হাতিয়ে নিয়ে কামরুজ্জামান চম্পট দিত ।চুরি করেনেওয়া সেইসব সামগ্রী বিক্রী করা টাকায় কেনা দামি পোষাক পরিহিত হয়ে ও নিত্য নতুন বাইক চড়ে ঘুরে বেড়াতো কামরুজ্জামান ।পুলিশ দাবি করেছে সিঙ্গেরকোনের ছাত্রীকে খুনের ঘটনায় ধরা পড়ার পরেই কামরুজ্জামানের সমস্ত কুকীর্তির পর্দা ফাঁস হয়েযায় ।
কালনা আদালতের বিচারক এদিন কামরুজ্জামানের ফাঁসির সাজা ঘোষনার পর
নিহত ছাত্রীর মা বলেন , “এবার আমার মেয়ের আত্মা শান্তি পাবে ।বিচারক এই নিষ্ঠুর খুনিকে যোগ্য সাজাই দিয়েছেন । “আদালতের সরকারী আইনজীবী সৌম্যদীপ রাহা বলেন ,‘সমস্ত সাক্ষ্য প্রমানের ভিত্তিতে বিচারক খুনির এই সাজা ঘোষনা করেছেন । ’ যদিও কামরুজ্জামানের ফাঁসির সাজা মেনে নিতে পারেননি তার স্ত্রী জাহানারা বিবি । অভিযুক্তের আইনজীবী অরিন্দম বাজপেয়ী জানিয়েছেন,এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে দরবার করবেন ।
See also  বর্ধমানের মাটি মঞ্চে মুখমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

krishna Saha

আমার নাম কৃষ্ণ কুমার সাহা, আমি ফুল টাইম সাংবাদিকতা করি।গত ৮ বছর ধরে এই পেশায় আছি