বর্ধমান শহরের দুই কিশোরী বন্ধু—জারিন তাসনিম ও জাহিন তাহসিন—সিবিএসই দশম শ্রেণির পরীক্ষায় অসাধারণ ফল করে নজর কেড়েছে গোটা জেলাজুড়ে। কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের ছাত্রী এই দুই বান্ধবী শুধু একই স্কুলেই নয়, একই সঙ্গে পড়াশোনা, একে অপরের পরিবারের সঙ্গে আন্তরিক সম্পর্ক, এমনকি নামের মিল পর্যন্ত এমনভাবে জুড়ে আছে, যা সাধারণত দেখা যায় না।
জারিন তাসনিম, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলামের কন্যা, বাস করেন বর্ধমানের বাবুর বাগে। অপরদিকে জাহিন তাহসিন, বড় বাজার বিসি রোডের বাসিন্দা শেখ জাকির হোসেনের কন্যা। দুজনেই যথাক্রমে ৯৬% ও ৯৫% নম্বর পেয়ে স্কুল ও পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে। এদের পারস্পরিক বন্ধন, একসঙ্গে পড়াশোনা এবং একই রকম চিন্তাভাবনা দেখে আশপাশের মানুষ পর্যন্ত বিস্মিত।


ধার্মিক দুই পরিবার ধর্মের সঙ্গে আধুনিক শিক্ষার নিখুঁত সমন্বয় ঘটিয়ে সমাজে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে। দুই পরিবারের মধ্যে সম্পর্ক এতটাই আন্তরিক যে, পরীক্ষার ফলাফল আসার পর একে অপরের বাড়িতে উল্লাসের আবহ ছড়িয়ে পড়ে। এই আনন্দঘন মুহূর্তে সেহারা বাজার রহমানিয়া ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের সম্পাদক হাজী মাওলানা আশরাফ আলী নিজে এসে দুই ছাত্রীকে শুভেচ্ছা জানান ও তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কামনা করেন।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে দুই কিশোরীর স্বপ্ন আলাদা হলেও, লক্ষ্য সমাজ ও দেশের জন্য কিছু করা। জারিন তাসনিম বড় হয়ে ডাক্তার হতে চায়—দরিদ্র ও অসহায় মানুষের সেবা করাই তার জীবনের উদ্দেশ্য। তার ভাষায়, “ডাক্তার হয়ে আমি সেই সব মানুষদের পাশে দাঁড়াতে চাই, যাদের চিকিৎসা পাওয়া কঠিন।” অপরদিকে, জাহিন তাহসিন মহাকাশবিজ্ঞানী হয়ে গবেষণার জগতে অবদান রাখতে চায়।

তার অনুপ্রেরণা সুনিতা উইলিয়ামস, কল্পনা চাওলা ও রাকেশ শর্মা। সে বলে, “আমি মহাকাশ নিয়ে কাজ করতে চাই, এমন কিছু করতে চাই যাতে বিশ্বমঞ্চে দেশের নাম উজ্জ্বল হয়। দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি, যুদ্ধ ও মানুষে-মানুষে বিভাজন তাদের মনকে ব্যথিত করে। দুই বান্ধবীই মনে করে—মানবতা ও সহনশীলতাই সমাজে শান্তি ফিরিয়ে আনতে পারে।
জারিন ও জাহিনের এই কৃতিত্ব ও চিন্তাভাবনা প্রমাণ করে—ধর্ম, শিক্ষা ও নৈতিকতার একত্র মেলবন্ধনে সমাজে সুস্থতা ও আলোর দিশা সম্ভব। দুই পরিবার আশাবাদী, ভবিষ্যতে এই দুই মেয়ে শুধু পরিবারের নয়, গোটা দেশের গর্ব হয়ে উঠবে