আবহাওয়া দক্ষিণবঙ্গ শিক্ষা লাইফ স্টাইল স্বাস্থ্য ভ্রমন ধর্ম কৃষি কাজ ক্রাইম

খেত মজুর মায়ের উপার্জনের অর্থ সাহায্যে ফুটবল খেলা চালিয়ে যাওয়া রবি সন্তোষ ট্রফি জয়ের চাণক্য-মুখ্যমন্ত্রী দেবেন চাকরি

By Pradip Chatterjee

Published :

WhatsApp Channel Join Now

খেত মজুরির কাজ করে উপার্জন করা অর্থ মা তুলসী হাঁসদা তুলে দিতেন মস্ত ফুটবল খেলোয়াড় হওয়ার স্বপ্ন দেখা ছেলে রবি হাঁসদার হাতে ।মা চাইতেন,’ফুটবল খেলায় অসামান্য সাফল্য দেখিয়ে ছেলে রবি তাঁর বাবা সুলতান হাঁসদার স্বপ্ন পূরণ করুক। উজ্জ্বল করুক বাংলার মুখ’। ছেলে অবশ্য মাকে নিরাশ করেনি।আধ পেটা খেয়ে বড়হয়ে ওঠা

প্রত্যন্ত গ্রামের ছেলে রবি তাঁর বাবার স্বপ্ন পূরণ করার পাশাপাশি এখন গোটা বাংলার ফুটবল প্রেমিদের কাছে নয়নের মণি। ভারতীয় ফুটবলের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ সন্তোষ ট্রফির সর্বোচ্চ স্কোরার এখন রবি হাঁসদা।শুধু তাই নয়,রবির করা একমাত্র গোলেই সন্তোষ ট্রফিতে জয়জয়কার ঘটেছে বাংলার।এতবড় জয়ের কাণ্ডারী রবির পাশে এবার রাজ্য সরকার দাঁড়াক,এমনটাই চাইছেন রবির মা।


রবি হাঁসদার মাকে নিরাশ করেননি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।বৃহস্পতিবার রবি হাঁসদা সহ সন্তোষ ট্রফি জয়ী বাংলা দলের সকল খেলোয়াড়দের জন্য মুখ্যমন্ত্রী চাকরির ঘোষণা করেছেন।রবি হাঁসদার বাড়ি পূর্ব বর্ধমানের মঙ্গলকোট থানার অন্তর্গত মশারু গ্রামের আদিবাসী পাড়ায়। সেখানে রয়েছে রবিদের মাটির দোতলা বাড়ি।সেই বাড়ির তাকে থরে থরে সাজানো রয়েছে রবির পাওয়া ট্রফি ও মেড়েল।মাস ছয়েক আগে প্রয়াত হয়েছেন রবির বাবা সুলতান হাঁসদা। রবি বাড়ির একমাত্র ছেলে।তাঁর দিদির বিয়ে হয়ে গিয়েছে

রবি এখন সংসারি।বাড়িতে তাঁর স্ত্রী ও এক শিশু কন্যা রয়েছে।পায়ে ফুটবল নিয়ে রবি বাংলার অগুনিত ফুটবল প্রেমিদের মুখে হাসি ফোটালেও এখনও দারিদ্রতা কুরে কুরে খায় রবির পরিবারকে।বেঁচে থাকা কালে রবির বাবা টোটো চালিয়ে উপার্জন করতেন। এখন সংসার টানায় যাবতীয় দায় বর্তেছে রবির মা তুলসী হাঁসদার উপরে। রুটি রুজি জোগাড়ের জন্য তুলসীদেবীকে তাই এখন নিয়মিত খেত মজুরির কাজে যেতে হয়।কষ্ট হলেও ছেলেকে কিছু তিনি বুঝতে দেন নি।

উল্টে ফুটবল খেলায় ছেলে যাতে সফলতার শিখরে পৌছাতে পারে সেটাই তিনি চেয়ে গিয়েছেন।ছেলে রবির দিকে সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিতে তুলসীদেবী নিজের উপার্জনের অর্থ তুলে দিতেও কোনদিন কার্পণ্য করেন নি। এহেন মা তুলসীদেবী তাই আজ তাঁর ছেলে রবির সাফল্যে বড়ই গর্বিত বোধ করছেন।

See also  সালিশী সভায় মারধোরে মৃত্যু প্রৌঢ়ের - গ্রেপ্তার কলকাতা পুলিশের এক কর্মী ও তাঁর সরকারী কর্মচারী ভাই

পরিবার পরিজন ও এলাকাবাসীর কথায় জানা গিয়েছে,আর পাঁচটা বাঙালির মত রবি হাঁসদার বাবা সুলতান হাঁসদাও অসম্ভব ফুটবল প্রেমী ছিলেন।তাই রবিও খুব ছোট বয়স থেকে ফুটবল খেলায় আকৃষ্ট হয়ে পড়ে।তখন পায়ে ফুটবল নিয়ে গ্রামের মাঠেই সে দৌড়া দৌড়ি করতো। ১০ বছর বয়সে ভাতারের বলগোনার স্কুলে ক্লাস ফাইভে পড়ার সময়েই রবি ফুটবলে পুরোপুরি মজে যায়।

সারাদিন তাঁর মুখে মুখে শুধুই ঘুরতো ফুটবলের কথা। একটু বড় হতেই ফুটবল খেলায় দক্ষতা অর্জনের জন্য রবি বলগোনা থেকে ভাতারে গিয়ে ফুটবল খেলা শুরু করে।প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু করে ভাতার একাদশ ক্লাবের তৎকালীন ফুটবল প্রশিক্ষক মুদরাজ সেডেনের কাছে।তারপর থেকে সেডেনের হাত ধরেই রবির ফুটবল জীবনের ভাগ্য বদলাতে শুরু করে।

মুদরাজ সেডেনের কাছে কয়েক বছর প্রশিক্ষণ নিয়ে রবি হাঁসদা ফুটবল খেলায় বেশ দক্ষ হয়ে ওঠে। কাস্টমসের হয়ে খেলে সাফল্য দেখিয়ে ২০১৭ সালে অনুর্ধ্ব ১৯ বাংলা দলের হয়ে খেলার জন্য ডাক পান রবি। ট্রায়ালে তিনি নির্বাচিত হন।পরে অধিনায়কত্বও তিনি পান।২০২২ সালে ন্যাশনাল গেমসে পাঁচ গোল করে রবি তাক লাগিয়ে দেয়। চাম্পিয়ন হয় বাংলা।তারপর ২০২৩ সালে সন্তোষ ট্রফির বাছাই পর্বে খেলতে গিয়ে শুরুতে হাঁটুতে চোট পান তিনি।

চোটের কারণে ওই বছরটা রবিকে মাঠের বাইরেই রয়ে থাকতে হয়।চোট সারলে ২০২৪ সালের শুরু থেকে মাঠে ফেরার লাড়াইয়ে নামেন রবি হাঁসদা।কিন্তু সময়টা তাঁর ভাল যায় না। হঠাৎই হৃদ রোখে আক্রান্ত হয়ে তাঁর বাবা সুলতান হাঁসদা মারা যান ।পিতৃ শোক কাটিয়ে ফের মাঠে নেমে কোচ সঞ্জয় সেনের কথা মত অনুলীলন চালিয়ে গিয়ে রবি হাঁসদা নিজেকে আগের মত দক্ষ করে তোলে।২৪ শের সন্তোষ ট্রফিতে রবি কার্যত বাজিমাত করে ফেলেন। বাংলার ফুটবল দল ভারত সেরা হতেই ফুটবল প্রেমিদের মুখে মুখে এখন শুধুই ঘুরছে রবি হাঁসদার নাম।বাংলার তাবর তাবর ফুটবল কর্তারাও এখন রবির প্রশংসায় পঞ্চমুখ ।এমনকি এককালের অনেক সফল ফুটবল খেলোয়াড়ের সঙ্গেও রবি হাঁসদার সাফল্যের তুলনা টানা চলছে।

See also  ন্যায্য ক্ষতিপূরণ না মেলায় মাটির নিচ দিয়ে ইণ্ডিয়ান অয়েলের পাইপলাইন বসানোর কাজ বন্ধ করেদিল চাষিরা

রবি হাঁসদার মা তুলসীদেবী বৃহস্পতিবার বলেন, ছেলের সাফল্যে আমি আনন্দিত ,গর্বিতও বটে ।
তবে দুঃখ লাগছে একটা করণে,যে রবির বাবা তাঁর ছেলের এই সাফল্য দেখেযেতে পারলেন না। তুলসীদেবী বলেন,“আমাদের পরিবারে নুন আনতে পান্তা ফুরানো অবস্থা।তাই আমাকে এখনও খেত মজুরির কাজে যেতে হয়।তা সত্ত্বেও আমার ছেলে রবি যাতে মস্ত ফুটবল খেলোয়াড় হয়ে তাঁর বাবার স্বপ্ন পূর্ণ করতে পারে তাই সব কষ্ট আমি হজম করে গিয়েছি।খেত মজুরি করে যে অর্থ আমি উপার্জন করেছি সেই অর্থও ছেলের তুলে দিয়ে গিয়েছি যাতে আমার ছেলে সফল ফুটবলার হতে পারে।কোন দিনও পান্তা ভাত আবার কোন দিন আধপেটা ভাত খেয়ে ভোরে আমার ছেলে রবি কলকাতার মাঠের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে।শত কষ্ট সহ্য করে খেলে গিয়ে রবি নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে গিয়েছে ।

রবি হাঁসদার মায়ের আবেদন বিফলে যায় নি।সন্তোষ ট্রফি জয়ী বাংলার ফুটবল দলে সকল খেলোয়াড়ররা তাদের কোচ সঞ্জয় সেনের সঙ্গে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পৌছে গিয়েছিলেন নবান্নে। ট্রফি নিয়ে তারা দেখা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে।সেখানে রাজ্যের ক্রীড়া মন্ত্রী অরুপ বিশ্বাস ছাড়াও বাংলার ফুটবল সংস্থার কর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।সন্তোষ ট্রফি জয়ী খেলোয়াড়দের সামনে দাড়িয়েই মুখ্যমন্ত্রী তাদের প্রত্যেকের ক্রীড়া দফতরে চাকরির কথা ঘোষণা করেন। মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষনাই হাসি ফুটিয়েছে
রবি হাঁসদার মায়ের মুখে।আপ্লুত রবির পরিজনরা।

Pradip Chatterjee

Senior Reporter Jamalpur, Purba Bardhaman. প্রদীপ চ্যাটার্জী কৃষকসেতু নিউজ বাংলার সিনিয়র কনটেন্ট রাইটার। বিগত ১০ বছরের বেশি সময় ধরে সাংবাদিকতা পেশায় যুক্ত।