আবহাওয়া দক্ষিণবঙ্গ শিক্ষা লাইফ স্টাইল স্বাস্থ্য ভ্রমন ধর্ম কৃষি কাজ ক্রাইম

শিক্ষা লাভের জন্য আজও দিন দরিদ্র পরিবারের ছেলে মেয়েদের ভরসা সমীরণ স্যারের ষোল আনার পাঠশালা

krishna Saha

Published :

WhatsApp Channel Join Now

প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় বর্ধমান ৫ সেপ্টেম্বর

ইচ্ছা থাকলেও অর্থের অভাবে শিক্ষিত হওয়ার সাধ পূরণ করতে পারেনা গরিব ঘরের অনেক ছেলে মেয়ে।স্কুল শিক্ষক জীবনে পড়ুয়াদের মুখ থেকে এমন করুণ কাহিনী শুনে ব্যাথিত হতেন সমীরণপ্রসাদ চক্রবর্তী চক্রবর্তী।তখনই তিনি দুঃস্থ পরিবারের পড়ুয়াদের জন্য কিছু একটা করবেন বলে সংকল্প নিয়ে ফেলেন।সেইমত শিক্ষকতা জীবন থেকে অবসর গ্রহনের পরেই সমীরণপ্রসাদ বাবু নিজের বাড়িতেই খুলে বসেন ’ষোলো আনার’ পাঠশালা।সেই পাঠশালাই এখন গরিব দুঃস্থ পরিবারের ছেলে মেয়েদের শিক্ষা লাভের অন্যতম প্রাণকেন্দ্র হয়ে উঠেছে।

 

 

শিক্ষা দরদি শিক্ষক সমীরণপ্রসাদ চক্রবর্তীর বাড়ি পূর্ব বর্ধমানের কালনা ১ ব্লকের কৃষ্ণদেবপুরের হালদারপাড়ায়। তিনি বাদলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। ২০২১সালের ৩০ নভেম্বর তিনি অবসর নিয়েছেন।সমীরণপ্রসাদ বাবুর একমাত্র ছেলে সৌম্যদীপ ইতিমধ্যেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি সম্পূর্ণ করছেন।বাড়িতে ৯৬ বছরের বৃদ্ধা মা সবিতারাণীদেবী ও স্ত্রী সোমা কে নিয়ে থাকেন ৬২ বছর বয়সী শিক্ষক
সমীরণপ্রসাদ ।

 

শিক্ষকতা জীবন থেকে অবসর গ্রহণ করলেও সমীরণপ্রসাদ বাবু বাবু শিক্ষা দানের ব্রত থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারেন নি। তার উপর গরিব ও দুঃস্থ পরিবারের পড়ুয়াদের জন্য কিছু একটা করার সংকল্পতো সমীরণপ্রসাদ বাবুর মাথায় ছিলই।সেই সংকল্প পূরণের জন্য নিজের বাড়িতে তিনি পাঠশালা খুলে বসেন। বর্তমানে
সমীরণপ্রসাদ বাবুর ’ষোল আনার ’ পাঠশালায় পড়ুয়ার সংখ্যা ৫০ ছাড়িয়েছে । পড়ুয়ারা সবাই গরিব ঘরের। তাদের মধ্যে তপশিলি জাতি ও উপজাতি পরিবারের ছেলে মেয়েরাও রয়েছে। এই
পাঠশালাই এখন সমীরণপ্রসাদ বাবুর ধ্যানজ্ঞান।
ষোল আনা গুরুদক্ষিণার বিনিময়ে কয়েক দফায়
তিনি তাঁর পাঠশালায় প্রথম শ্রেণী থেকে নবম শ্রেণীর পড়ুয়াদের পড়ান।পাঠশালায় থাকা ভাঁড়েই গুরুদক্ষিণা জমা দেয় পড়ুয়ারা ।কোন অতি গরিব পরিবারের ছেলে মেয়ে বই খাতা,পেন না থাকা নিয়ে সমস্যায় পড়লে গুরুদক্ষিণা বাবাদ জমা পড়া অর্থ দিয়ে তা কিনেদেন সমীরণপ্রসাদ বাবু। তাকে নিয়ে গর্বের অন্ত নেই এলাকাবাসীর ।

See also  ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের স্কুল ক্যাম্পাস উন্নয়ন প্রকল্প: কুকুরের কামড়ের পর শিক্ষকদের দায়িত্বশীলতার অভাব

 

 

ষোল আনার পাঠশালা চালুর প্রসঙ্গে শিক্ষক দিবসের প্রাক্কালে সমীরণপ্রসাদ চক্রবর্তী বলেন,
আমার পরিবারের বেশিরভাগ জনই শিক্ষক ছিলেন। বাবা,কাকা,কাকিমা,বড়দি সকলেই শিক্ষক ছিলেন।শিক্ষা মানুষকে শুধু শিক্ষিতই করে তোলে না চেতনা বোধও তৈরি করে ।শিক্ষার প্রসার বৃদ্ধি হলে সমাজও উন্নত হয়। কিন্তু পরিবারিক আর্থিক অবস্থা খারাপ থাকার জন্য গরিব ঘরের ছেলে মেয়েদের শিক্ষকের কাছে পড়তে না যেতে পারাটা সত্যি দুর্ভাগ্যের। তাই গরিব ঘরের পড়ুয়াদের সুশিক্ষিত করে মানুষের মত মানুষ তৈরী করার সংকল্প নিয়েই ষোল আনার পাঠশালা চালু করেছেন। যতদিন শরীর সায় দেবে
ততদিন পাঠশালা চালিয়ে যাবেন বলে সমীরণপ্রসাদ বাবু জানিয়েছেন।

 

 

ষোল আনার পাঠশালার পড়ুয়া শুভ সাহা,প্রীতম ঘরামি প্রমুখরা জানায়,“তাঁরা সবাই গরিব পরিবারের সদস্য। লেখাপড়া শেখার জন্য সমীরণ স্যরই তাদের ভরসা।ষোল আনা গুরুদক্ষিণা নিয়েই স্যার তাদের ভালো ভাবে পড়ান । প্রতিটি বিষয় তাদের সহজভাবে বুঝিয়ে দেন।আমাদের এখানে তাই পড়তে আসতে ভীষণ ভালো লাগে।”

krishna Saha

আমার নাম কৃষ্ণ কুমার সাহা, আমি ফুল টাইম সাংবাদিকতা করি।গত ৮ বছর ধরে এই পেশায় আছি