প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় বর্ধমান ১৫ ডিসেম্বর
আবাস যোজনায় বেনিয়ম নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে
নাবান্ন।এমনকি বেনিয়ম রান্ধে কড়া নির্দেশের কথাও জানিয়ে দিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী।আর এর পর থেকেই ভোল বদলাতে শুরু দিয়েছেন পাকাবাড়ি থাকা সত্ত্বেও তালিকায় নাম থাকা পূর্ব বর্ধমানের শাসক দলের জনপ্রতিনিধিরা। ফেঁসে যাবার ভয়ে তাঁরা এখন তালিকায় থাকা নাম কাটানোর জন্য হুড়োহুড়ি শুরু করে দিয়েছেন। এই বিষয়টি হতাশ করেছে
এখনও মাটির বাড়িতে দিন কাটানো জেলার গরিব মানুষজনকে।
তালিকায় থাকা নাম কেটে দেবার জন্য ইতিমধ্যেই প্রশাসনিক দফতরে লিখিত ভাবে জানিয়েছেন
রায়না ১ ও ২ ব্লক পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, বর্ধমানের রায়ান ১ ও জামালপুর ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের দুই সদস্য।এরই মধ্যে আবার মন্তেশ্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানের স্বামী,উপপ্রধানের পরিবারের দুই সদস্য ও এক সদস্যার স্বামীর নাম
আবাস যোজনার তালিকায় থাকা নিয়ে সরব হয়েছে বিজেপি। একই ভাবে জামালপুর ব্লকের জামালপুর ২ গ্রম পঞ্চায়েত প্রধান ও বেরূগ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানের স্বামীর নাম এবং মেমারির
বাগিলা ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ও তাঁর স্বামীর
নাম আবাস যোজনার তালিকায় থাক নিয়েও তৈরি হয়েছে বিতর্ক। বিরোধীরা দাবি করেছেন,
তালিকা প্রকাশ্যে আসার পর স্বজনপোষণ ধরা পড়ে গিয়েছে।তাই তৃণমূলের বিত্তশালী জনপ্রতিনিধিরা এখন তালিকা থেকে নাম কাটিয়ে
ভাবমূর্তি ফেরানোর মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন। যদিও
রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী পরিস্কার জানিয়ে দিয়েছেন,“যাঁদের পাকা বাড়ি রয়েছে তাঁরা কেউ আবাস যোজনার বাড়ি পাবেন না। পাকা বাড়ি রয়েছে এমন কারুর নাম আবাস যোজনার তালিকায় থাকলেও সেই নাম বাতিল করে দিতে হবে“।
এমনটা জানার পরেই আবাস যোজনার তালিকায় থাকা নাম কেটে দেবার জন্য রায়না ১ ব্লক পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি রত্না মহন্ত তাঁর নাম
কেটে দেবার জন্য বিডিওকে লিখিত ভাবে জানান
।নাম কেটে দেবার কারণ প্রসঙ্গে রত্না মহন্ত দাবি করেছেন,“যখন সার্ভে হয়েছিল তখন তাঁর কোন পাকা বাড়ি ছিলনা।ছিল মাটির বাড়ি।কিন্তু দলের ব্লক সভাপতি সহ অন্য নেতৃত্বের সহযোগীতায় এখন তাঁর একটি পাকা বাড়ি হয়েছে।তাই অন্য কোন গরিব মানুষ যাতে পাকা বাড়ি পায় তার জন্য তিনি তাঁর নাম তালিকা থেকে কেটে দেবার কথা বিডিওকে জানিয়েছেন“।একই পথে হেঁটেছেন,
রায়না ২ ব্লক রায়না ২ ব্লক পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি পার্বতী ধারা মালিক। তিনি তাঁর ছেলের তন্ময়ের নাম আবাস যোজনার তালিকা থেকে কেটে দেবার জন্য বুধবার ব্লক প্রশাসনের দফতরে আবেদন জানান।বিতর্ক এড়াতে বর্ধমানের রায়ান ১ নম্বর পঞ্চায়েতের বিজয় রাম সংসদের সদস্যা ফাতেমা বিবি-ও সমিতির সভাপতিদের দেখানো পথই অনুসরণ করেন। জানা গিয়েছে,পাকা বাড়ি থাকা সত্ত্বেও আবাস যোজনার তালিকায় তাঁর ও তাঁর পরিবারের ছ’সদস্যের নাম রয়েছে । ফতেমা বিবি জানান ,“এই বিষয়টি জানার পরেই তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়ার জন্য তিনি মঙ্গলবার পঞ্চায়েত প্রধানের কাছে লিখিত ভাবে জানিয়েছেন“।
এত কিছুর মধ্যেই মন্তেশ্বরের বিজেপি নেতা ঝুলন হাজরা অভিযোগে জানিয়েছেন,তাঁদের পঞ্চায়েতের প্রধান গীতাঞ্জলী প্রকল্পে একবার টাকা পেয়েছেন। তার পরেও ফের ওনার স্বামীর নাম আবাস যোজনার তালিকায় রয়েছে। এছাড়াও উপপ্রধান ও এক পঞ্চায়েত সদস্যদের পাকা বাড়ি থাকা সত্বেও তাঁদের পরিবার সদস্যদের নাম আবাস যোজনার তালিকায় নাম রয়েছে।এটা কিভাবে হয় ? ঝুলন হাজরা জানান ,এইসব নাম কেটে দেবার জন্য তিনি ব্লকের বিডিওকে লিখিত ভাবে জানিয়েছেন।ব্লকের বিডিও গোবিন্দ দাস
অবশ্য জানিয়ে দিয়েছেন ,“তালিকায় নাম রয়েছে মানেই তিনি সরকারী আবাস যোজনার ঘর পেয়ে
যাবেন এমনটা নয়। গ্রাম সংসদ সভায় ওনাদের সবার নাম অবিবেচিত হয়েছে“। আর জামালপুর ২
গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য তথা অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতি নিতাই কুণ্ডু বলেন,যখন তালিকা তৈরি হয় তাঁর নিজের নামে কোন বাড়িতো ছিলই না। এমনকি দু’বছর আগে পর্যন্ত ছিল না । দু’বছর হল
তাঁর নিজের বাড়িটি আমার নামে দলিল করে লিখে দিয়েছেন।তাই এখন তালিকায় নাম থাকলেও তিনি সরকারী আবাস যোজনার ঘর নেবেন না বলে প্রসাসনকে জানিয়ে দিয়েছেন।
জামালপুর ২ পঞ্চায়েতের প্রধান মণিকা মুর্মুর স্বামী সুন্দর মুর্মুর নাম তালিকায় থাকলেও এখন তাঁরা পাকা বাড়িতেই বসবাস করেন বলে এলাকাবাীর দাবি। সদস্য নিতাই কুণ্ডু তাঁর মতামত জানিয়ে দিলেও এ নিয়ে কোন সিদ্ধান্তের কথা এখনও জানান নি প্রধান মণিকা মুর্মু। বেরুগ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান হাসনাহারা বেগমের স্বামী ফিরোজ শেখের নাম আবাস যোজনার তালিকায়
রয়েছে বলে বিরোধীদের দাবি।বিরোধীদের অভিযোগ, চক্ষণজাদি গ্রাম নিবাসী হাতেম আলী শেখের ছেলে ফিরোজ শেখ একাধীক দামি গাড়ি ও পাকা বাড়ির মালিক। তা সত্ত্বেও ফিরোজ শেখের নাম আবাস যোজনার তালিকায় কি ভাবে জায়গা পেল সেটাই তাঁরা বুঝে উঠতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন। ।
এইসব জেনে বিজেপির জেলার সাধারণ সম্পাদক মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র বলেন,“আবাস যোজনা নিয়ে আমরা এতদিন স্বজনপোষণের যে অভিযোগ করে আসছিলাম তা এইসব ঘটনা থেকে আরো একবার সত্যি প্রমানিত হল“ । পাল্টা উত্তরে জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাস বলেন,এই আবাস যোজনার তালিকা ২০১৫ – ১৬ সালের। সেই সময় যাঁদের কাঁচা বাড়ি ছিল তাঁদের নাম শ ঘর পাবেন।তা নিয়ে কোন দ্বিমত নেই বলে প্রসেনজিৎ বাবু দাবি করেছে।