আবহাওয়া দক্ষিণবঙ্গ শিক্ষা লাইফ স্টাইল স্বাস্থ্য ভ্রমন ধর্ম কৃষি কাজ ক্রাইম

“সোহাগে আদরে” বেলাশুরু

krishna Saha

Published :

WhatsApp Channel Join Now

সুনীতা ঘোষ

অভিনয়ে:- সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত, অপরাজিতা আঢ্য, খরাজ মুখার্জি, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, ইন্দ্রানী দত্ত, মনামি ঘোষ, শংকর চক্রবর্তী, সুজয় প্রসাদ চাটার্জী প্রমুখ।

পরিচালক:- নন্দিতা রায় ও শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়।

সঙ্গীত:- “টাপা টিনি” (ইমন চক্রবর্তী,উপালি চট্টোপাধ্যায়, অনন্যা ভট্টাচার্যী)
“সোহাগে আদরে” (অনুপম রায়)
বেলাশুরু টাইটেল ট্র্যাক (কবির সুমন)
“কি মায়ায়” (শ্রেয়া ঘোষাল)

রেটিং:- ৭.৯/১০

অভিনয়:- শিবু-নন্দিতা জুটির পরিচালনায় “বেলাশেষে(২০১৫, ১মে)”র প্রায় বছর সাতেক পর “বেলাশুরু”র মুখোমুখি হয়েছে গত ২০মে ২০২২ তারিখে। স্বাভাবিকভাবেই ছবি মুক্তির আগে থেকেই সৌমিত্র-স্বাতীলেখার অনুরাগীদের উৎসাহ ছিল তুঙ্গে। অবশেষে ছবি মুক্তির দিন থেকে এখনো পর্যন্ত বেলা শুরু সিনেমা দেখতে সিনেমা হলগুলিতে দর্শকদের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। মূলত শেষ বয়সে এসে এক বয়স্ক ব্যক্তির তার স্ত্রীকে চোখের আড়াল করতে না চাওয়া আর বর্তমান যুগের সম্পর্কের টানাপোড়েনকে কেন্দ্র আবর্তিত হয়েছে এই সিনেমা। জীবনের শেষ ছবিতে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও স্বাতীলেখা সেনগুপ্তর অভিনয় দক্ষতায় যে বিন্দুমাত্র মরচে ধরতে দেয়নি তার প্রমাণ এই সিনেমা। “বেলাশেষে”র বিশ্বনাথ সরকারের ভূমিকায় অভিনয় করা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় যেন এক অন্য মানুষ হয়ে ধরা দিয়েছেন “বেলাশুরু”তে। তেমনই অ্যালজাইমার্সে আক্রান্ত স্ত্রী আরতির ভূমিকায় স্বাতীলেখা সেনগুপ্তের চরিত্রেও এসেছে বদল।

 

Shohage Adore by Anupam Roy from Belashuru

এছাড়াও রয়েছেন অপরাজিতা আঢ্য এবং খরাজ মুখোপাধ্যায়। তারা দুজনে অভিনয়ের জাত চিনিয়েছেন বলাই বাহুল্য। প্রদীপ ভট্টাচার্যর সঙ্গে খরাজের বেশ কিছু মুহূর্ত সিনেমায় এক নির্মল হাস্যরসের সৃষ্টি করেছে। ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত ও সুজয়প্রসাদ সেনগুপ্তর জুটিও যেন আগের থেকে বেশ খানিকটা ম্যাচিওর। বাবা এবং মেয়ের কথোপকথনের সূত্র ধরে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এবং ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তের কথোপকথন দর্শকমনে এক আলাদা অনুভূতি সৃষ্টি করেছে। তবে “বেলাশুরু” সিনেমাতে মনামি ঘোষকে দেখা গিয়েছে একেবারে অন্য রূপে। সে জায়গায় দাঁড়িয়ে তার বিপরীত ভূমিকায় অভিনয় করা অভিনেতা অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের চরিত্রকে কিছুটা হলেও গুরুত্ব কম দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও শংকর চক্রবর্তী এবং ইন্দ্রানী দত্ত জুটির অভিনয় দক্ষতাও নজর কাড়ার মতো। তবে ছবিতে নিজের অভিনয় দক্ষতাকে আরো বেশি মাত্রায় ফুটিয়ে তোলার দিক থেকে নামমাত্র সুযোগ পেয়েছেন ইন্দ্রানী দত্ত।

See also  মঙ্গলবার থেকে খুলে গেল কালীঘাট মন্দিরের দুয়ার

 

 

সঙ্গীত:- “বেলাশুরু” ছবির সঙ্গীত পরিবেশনায় অনবদ্য ভূমিকা গ্রহণ করেছেন অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় এবং অনুপম রায়। বিশেষত ইমন চক্রবর্তী,উপালি চট্টোপাধ্যায় ও অনন্যা ভট্টাচার্যীর গাওয়া গান “টাপা টিনি” গানটি ইতিমধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে নিয়েছে। যার প্রমাণ ফেসবুক ইনস্টা রিল। এছাড়াও কবীর সুমনের গাওয়া বেলাশুরু সিনেমার টাইটেল ট্র্যাক “খেলা কি শেষ, নাকি বেলা শুরু” কোথাও যেন একটা প্রশ্ন চিহ্ন রেখে যায়, যা ছবির সঙ্গে মানানসই। ঠিক যেমন রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্পে “শেষ হয়েও হইল না শেষ” তেমনই এই ছবির বিভিন্ন বয়সী জুটির জীবনে এরপর কি হতে চলেছে সেই উত্তর খুঁজতে বাধ্য দর্শক। অনুপম রায়ের “সোহাগে আদরে” গানটির মধ্যে দিয়ে সিনেমার বিভিন্ন বয়সী জুটির সম্পর্কের টানাপোড়েনের মাঝেও প্রেমকে বেশি করে প্রতিফলিত করেছে। এছাড়াও “কি মায়ায় জড়ালে আমায়” গানটির লিরিক্সকে যেন সুরের জাদুতে প্রাণবন্ত করে তুলেছেন শ্রেয়া ঘোষাল।

 

 

গল্প:- “বেলাশেষে” ছবির গল্প কে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে “বেলাশুরু”। শেষ বয়সে এসে একেবারে অন্য ধারায় বয়ে চলেছে বিশ্বনাথ এবং আরতির জীবন। দীর্ঘ পঞ্চাশটা বছর ধরে স্বামীর সেবায় নিয়োজিত আরতি অ্যালজাইমায় ভুগছে। তাই জীবনের শেষ লগ্নে এসে কোনো পরিচারিকা না রেখে, স্ত্রীর দেখভালের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন বিশ্বনাথ। দুর্ভাগ্যবশত অ্যালজাইমায় ভুক্তভোগী আরতির কাছে তার স্বামী বিশ্বনাথ এখন অন্য পুরুষ। আরতির স্মৃতি থেকে মুছে গিয়েছে বেশকিছু মানুষ, বেশ কিছু মুহূর্ত। তাই বলে সব থেকে কাছের মানুষ স্বামী? হ্যাঁ, শেষ বয়সে এসে আরতি যাতে তার স্বামী বিশ্বনাথকে চিনতে পারে, তারই প্রানপন চেষ্টা করেছেন স্বামী বিশ্বনাথ সরকার।

 

 

পুরো সিনেমার গল্প আবর্তিত হয়েছে জীবনের শেষ লগ্নে স্ত্রীর স্মৃতি ফেরানোর চেষ্টায় এক স্বামীর হার মেনে না নেওয়ার শপথ। কখনোবা তিনি নিজের হাতে ধৈর্যে, মমতায় খাইয়ে দিচ্ছেন স্ত্রীকে, কখনোবা দিচ্ছেন চুল আঁচড়ে। কখনো আবার স্ত্রী হারিয়ে গেলে হন্যে হয়ে খুঁজে চলেছেন। আরতির চেতনায়, সবসময় “যে লোকটা” সব সময় তাঁর সঙ্গে থাকে, পাশে শুয়ে ঘুমোয়, সে একটা অন্য লোক, স্বামী নয়। স্ত্রীর শিশুসুলভ আচরণকে কখনোবা বলেছেন “স্বাভাবিক”। আসলে এতদিন যাকে সময় দিতে পারেননি,জীবনের বাকি সময়টা শুধু তাঁকেই দিতে চান তিনি। অন্যদিকে মায়ের স্মৃতির ফেরানোর চেষ্টায় সন্তান-সন্ততিরা একত্রিত হয়।

See also  প্রেমের আদর্শ জায়গা প্রিন্সেপ ঘাট ; যে ইতিহাস আজও অজানা

 

 

দীর্ঘদিন ধরে সম্পর্কের টানাপোড়েনের যুঝতে থাকা সম্পর্ক গুলো যেন প্রাণ ফিরে পেতে শুরু করে আরতির স্মৃতি থেকে মুছে যাওয়া তার স্বামী বিশ্বনাথ সহ বাকিদের স্মৃতিতে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টায়। স্ত্রী আরতির স্মৃতি ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টায় তার এর বাড়ি বাংলাদেশের ফরিদপুরে সপরিবারে গিয়েছেন তিনি। এমনকি বৃদ্ধ বয়সেও বিয়ের পিঁড়িতে বসতে দ্বিধাবোধ করেননি বিশ্বনাথ। শেষ বয়সে এসে স্ত্রীর প্রতি স্বামীর একপাক্ষিক ভালোবাসা যেনো মানব মনে সারা জীবন পাশে থাকার রসদ যোগায়। বিশ্বনাথ এবং আরতির জীবনের মিষ্টি মধুর স্মৃতি ফিরিয়ে আনতে গিয়ে তাদের মেয়ে জামাই এবং ছেলে বৌমাদের বাঁধন আলগা হয়ে যাওয়া সম্পর্ক গুলো কেমন যেন ভালোবাসার বন্ধনে জুড়ে যায়। তবে এই ছবির গল্প জানো কোথাও গিয়ে অসমাপ্ত। কারণ এরপর বিভিন্ন বয়সী জুটিদের জীবনের মোড় কোন দিকে ঘুরে যাবে, বারবার এই প্রশ্ন জাগে দর্শক-মনে।

 

 

ট্রিটমেন্ট:- শিবপ্রসাদ নন্দিতার জুটির পরিচালিত সিনেমা “বেলাশুরু”র কাহিনী আদ্যোপান্ত বাস্তবতা নির্ভর। যেখানে কল্পনার কোনো আশ্রয় গ্রহণ করা হয়নি। এই সিনেমায় নেই কোনো প্রেমিক প্রেমিকার জীবনের ওঠাপড়ার নিছক গল্প। রয়েছে একটা সম্পর্কেকে বাঁচিয়ে রাখা এবং ভালোভাবে বেঁচে থাকার কিছু টিপস। তাইতো ছবির শুরুতেই অপরাজিতা আঢ্য কথাই উঠে এসেছে, যে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসতে জানে তাকেই বিয়ে করা উচিত। কখন আবার একসময় স্ত্রীর বলা কথা স্মরণ করে নিজের আগে স্ত্রীর মৃত্যু চেয়েছেন সৌমিত্র। কারণ তাঁকে ছাড়া তাঁর স্ত্রী আরতি এক মুহূর্তও বাঁচতে পারবে না। সিনেমার মাঝেই দেখা গিয়েছে বাবার সাথে কথোপকথনের সময় ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তের একটি সংলাপ। “একটা সময় পর আর শরীর থাকেনা, আকর্ষণ থাকে না। যেটা থাকে সেটা হলো বন্ধুত্ব”, ঋতুপর্ণার এই সংলাপ প্রতিটা বয়সের মানুষের কাছেই ভীষণভাবে গ্রহণযোগ্য।

krishna Saha

আমার নাম কৃষ্ণ কুমার সাহা, আমি ফুল টাইম সাংবাদিকতা করি।গত ৮ বছর ধরে এই পেশায় আছি