আবহাওয়া দক্ষিণবঙ্গ শিক্ষা লাইফ স্টাইল স্বাস্থ্য ভ্রমন ধর্ম কৃষি কাজ ক্রাইম

বাল্য বিধবা তারাসুন্দরীকে নবাব সিরাজদৌলা বিয়ে করতে চেয়েছিলেন

By krishna Saha

Published :

WhatsApp Channel Join Now

রথীন রায়:- সংষ্কৃতি বাংলার হৃদয়ে, শয়নে স্বপনে প্রাণ বন্ধু ! আমরা কি অস্বীকার করে চলেছি প্রতি নিয়ত ?
সালটা ১৭৫৫ ! পলাশীর যুদ্ধের দু’বছর আগে ভাগীরথীর তীরে মুর্শিদাবাদে এলেন নাটোরের রানী ভবানী ! উদ্দেশ্যে, গঙ্গাতীরে আজিমগঞ্জে জীবনের বাকি দিনগুলো কাটাবেন ! ১৭৬০ সাল নাগাদ আজিমগঞ্জের বড়নগরে একের পর এক মন্দির তৈরি করেন রানী ! জনশ্রুতি অনুযায়ী, বড়নগরে দ্বিতীয় বারাণসী গড়তে চেয়েছিলেন তিনি ! সেই লক্ষ্যে একের পর এক মন্দির তৈরি করতে থাকেন ! শোনা যায়, খুব অল্প সময়ে শুধু বড়নগরে প্রায় ১০৮ টি মন্দির তৈরী করেছিলেন রানী ভবানী ! যার বেশিরভাগই এখন নদীগর্ভে বিলীন ! রানী ভবানীর তৈরি মন্দিরগুলির মধ্যে অন্যতম ‘চার বাংলা’ মন্দির !

 

পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় এক বাংলা, জোড়া বাংলা মন্দির দেখা গেলেও আজিমগঞ্জেই একমাত্র চার বাংলা মন্দির রয়েছে ! একটি উঠানকে ঘিরে চারটি একচালা বাংলা মন্দির ! এই বিশেষ স্থাপত্য রীতির জন্যই চারটি মন্দির একত্রে ‘চার বাংলা’ নামে পরিচিত ! বাংলার প্রাচীন টেরাকোটা শিল্পের উৎকৃষ্ট নিদর্শন দেখতে পাওয়া যায় মন্দিরগুলিতে ! তিনটি খিলান দেওয়া দরজার প্রতিটি মন্দিরে তিনটে করে শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠিত ! এখনও ১২টি শিবলিঙ্গের পুজো হয় রোজ ! উত্তরদিকের দক্ষিণমুখী মন্দিরের দেওয়ালে টেরাকোটার কাজে রামলীলা কৃষ্ণলীলা দৃশ্য দেখা যায়, এছাড়াও শিকার ও শোভাযাত্রারও দৃশ্য রয়েছে ! পশ্চিমদিকের মন্দিরে লঙ্কা যুদ্ধ ও দেবী যুদ্ধের দৃশ্যের টেরাকোটার কাজ দেখতে পাওয়া যায় ! অন্য একটি মন্দিরের দেওয়ালে প্লাস্টার দিয়ে ভরাট করে তাতে খুব সূক্ষ্ম কারুকার্য করা হয়েছে !

 

 

দক্ষিণ দিকের মন্দিরে বিশেষ কারুকার্য দেখা যায়না ! ঐতিহাসিকদের একাংশের মতে, প্রথম দিকে বড়নগরে একের পর এক মন্দির তৈরি করলেও পরে তিন এই কাজ এক প্রকার বন্ধ করে দেন ! কারণ, রানীর একমাত্র বাল্য বিধবা মেয়ে তারাসুন্দরীকে নবাব সিরাজদৌলা বিয়ে করতে চেয়েছিলেন ! একদিন গঙ্গাবক্ষে ভ্রমণের সময় তারাসুন্দরীকে দেখেন নবাব ! প্রথম দেখাতেই তারাসুন্দরীকে তাঁর ভালোলেগে যায় ! যদিও ধর্মপ্রাণ রানী ভবানী সিরাজের প্রস্তাব মেনে নিতে পারেননি ! জানা যায়, জগৎ শেঠের সঙ্গে পরামর্শ করে নবাবের নাগাল থেকে একমাত্র মেয়েকে দূরে রাখতে, তারাসুন্দরীকে কাশী পাঠিয়েছিলেন রানী ! ১৭১৬ সালে বগুড়া জেলার ছাতিয়ান নামক এক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন রানী ভবানী ! খুব অল্প বয়েসে নাটোরের জমিদার রাজা রামকান্তের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয় ! ১৭৪৮ নাগাদ রামকান্তের মৃত্যু হলে, নবাব অলিবর্দীর নির্দেশে জমিদারির দায়িত্ব পান রানী ভবানী !

See also  নন্দীগ্রামে শুভেন্দুর বস্ত্র বিতরণ

 

 

১৭৪৮ থেকে ১৮০২ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ৫৪ বছর সুদক্ষ হাতে জমিদারি পরিচালনা করেন রানী ! সেই সময়ের সমাজ ব্যবস্থার নিরিখে যা একটি বিরল ঘটনা ! তাঁর আমলেই বাংলার সব থেকে বড় জমিদারিতে রূপান্তরিত হয় নাটোর ! জমিদারি বিস্তৃত ছিল এখনকার রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, কুষ্টিয়া, যশোর, রংপুর, মুর্শিদাবাদ, বীরভূম ছাড়িয়ে মালদা পর্যন্ত ! তাঁর আমলে জমিদারির এই বিশাল বিস্তৃতির জন্য অবিভক্ত বাংলায় তিনি ‘অর্ধবঙ্গেশ্বরী’ নামে পরিচিত হন ! ইতিহাস বলছে, রানীর আমলে নাটোরের জমিদারির তরফে নবাবকে বছরে ৭০ লক্ষ টাকা রাজস্ব দেওয়া হত ! কয়েকবছর আগেও ভাগীরথীর গ্রাসে প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছিল ‘চার বাংলা’ ! মন্দির দেখভালের দায়িত্বে থাকা বিকাশ সরকার জানান, বর্তমানে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া এবং রাজ্য সরকারের উদ্যোগে মন্দির সংলগ্ন নদীর পাড় কংক্রিটের বোল্ডার দিয়ে বাঁধানো হয়েছে ! ফলে পাড়ের ভাঙন অনেকটাই আটকানো গিয়েছে !

 

 

 

মুর্শিদাবাদ ঘুরতে গিয়ে হাজার দুয়ারী থেকে ৭ কিমি দূরে জিয়াগঞ্জ ঘাট থেকে নৌকো পেরিয়ে পৌঁছে যেতে পারেন আজিমগঞ্জ ! সেখান থেকে টোটো নিয়ে পৌঁছে যান বড়নগর ! এছাড়াও হাওড়া থেকে সরাসরি আজিমগঞ্জের ট্রেন রয়েছে ! স্টেশন থেকে ২ কিমি দূরেই রয়েছে বড়নগর ! চার বাংলা ছাড়াও বড়নগরে রানী ভবানীর তৈরি বঙ্গেশ্বর মন্দির, ভুবনেশ্বর মন্দির, জোড়া বাংলা মন্দির, রাজরাজেশ্বরী মন্দির, তারকেশ্বর শিব মন্দির রয়েছে ! দিন দু’য়েকের ছুটি নিয়ে বেরিয়ে পড়ুন ! নবাবের শহরের উপকণ্ঠে ছুঁয়ে দেখুন ২৫০ বছরের এক বিস্মৃত ইতিহাসকে ! চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে স্মৃতি স্মৃতি আর স্মৃতি !!

krishna Saha

আমার নাম কৃষ্ণ কুমার সাহা, আমি ফুল টাইম সাংবাদিকতা করি।গত ৮ বছর ধরে এই পেশায় আছি