প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় বর্ধমান ৬ ফেব্রুয়ারি :- এ যেন ভূতের মুখে রাম নামের মত ব্যাপার । ’বজরংবালীকে’ স্মরণ করে চিঠি লিখছে মাওবাদীরা। তাও আবার যে সে চিঠি নয়।৫ লক্ষ টাকা তোলা চেয়ে ওই চিঠি পাঠানো হয়েছে পূর্ব বর্ধমানের ভাতার থানার আমবোনা গ্রাম নিবাসী অর্থশালী কৃষ্ণা হাজরা নামে এক প্রৌঢ়ার বাড়িতে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে টাকা না দিলে বৃদ্ধার ছোট ছেলে অয়নকে প্রাণে মেরে দেওয়া হবে বলেও ওই চিঠিতে হুমকিও দেওয়া হয়েছে।এমন চিঠি শনিবার রাতে পাওয়ার পর থেকে ভয়ে কাঁটা হয়ে রয়েছেন হাজরা পরিবারের সদস্যরা।ভাতার থানার পুলিশও চিঠির প্রেরক কারা হতে পারে তা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে। যদিও চিঠি লেখার ধরণ ধারণ দেখে ভাতারের অনেকেই মনে করছেন এইসব স্থানীয় দুস্কৃতিদেরই কাজ।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে,ভাতারের আমবোনা গ্রাম নিবাসী কৃষ্ণা হাজরার স্বামী দেবীপ্রসাদ হাজরা সরকারী চাকরি করতেন । বছর সাতেক আগে দেবীপ্রসাদবাবু মারা যান। কৃষ্ণাদেবীর দুই ছেলের মধ্যে বড় ছেলে পরিবার নিয়ে গলসিতে থাকেন। আমবোনার বাড়িতে থাকেন কৃষ্ণাদেবীর বৃদ্ধা শাশুড়ি, ছোট ছেলে অয়ন ও তাঁর স্ত্রী এবং এক নাবালক নাতি ।সম্পন্ন পরিবার হিসাবেই এলাকায় পরিচিত হাজরা পরিবার ।

অয়ন হাজরা রবিবার জানান,’শনিবার রাত আনুমানিক সাড়ে দশটা নাগাদ তিনি বাড়ির সদর দরজায় তালা লাগাতে যান । তখনই তিনি দেখেন সদর দরজার সামনে হাতে লেখা একটি চিঠি পড়ে রয়েছে। সেটি হাতে তুলে নিয়ে পড়ে দেখেন তাঁর মা’কে উদ্দেশ্য লেখা হয়েছে চিঠিটি।ওই চিঠি যাঁরা লিখেছেন তাঁরা নিজেদের মাওবাদী বলে পরিচয় দিলেও চিঠির শুরুতে ’বজরংবালী’কে স্মরণ করেছেন।অয়ন বলেন , চিঠিতে আমার মাকে উদ্দেশ্য করে লেখা রয়েছে ,“আপনি তো অয়নের মা ।
আপনার তো বহু টাকা আছে । আপনি আমাদের ৫ লাখ টাকা দেবেন । টাকাটা আমবোনার বেলতলায় রেখে দেবেন । আমাদের লোকেরা ফলো রাখবে । টাকাটা নিয়ে চলে আসবে । আপনার স্বামী ৪০ থেকে ৫০ লাখ টাকা দিয়ে গেছে । আমাদের ৫ লাখ টাকা দিলে আপনার কিছুই এসে যাবে না । না দিলে আপনার ’ছেলের’ ক্ষতি হয়ে যাবে । কথাটা মনে রাখবেন । টাকাটা যেন অবশ্যই দেবেন ।
ইতি মাওবাদী পক্ষ“।এ ছাড়াও চিঠির শেষাংশে লেখা রয়েছে ,“খুব সাবধান আপনারা যেন পাশের বাড়িকে জানবেন না । মাথার দাম ৫ লাখ “অয়ন জানান ,বছর ৩-৪ আগে তাঁর জ্যাঠামশাইয়ের বাড়িতেও এমন চিঠি দেওয়া হয়েছিল।এবার একই রকম চিঠি তাঁরা পাবার পর থেকে পরিবারের সবাই ভীষণ আতঙ্কে রয়েছেন’।

কৃষ্ণাদেবী জনান ,“এমন চিঠি পাবার পর থেকে তাঁরা পরিবারের সবাই ভীষণ আতঙ্কে রয়েছেন। ভাতার থানার পুলিশকেও চিঠির কথা জানান।পুলিশ তাঁদের বাড়িতে তদন্তে আসে। চিঠি প্রেরকদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেবার ব্যাপারে পুলিশ আশ্বস্ত করে গিয়েছে বলে কৃষ্ণাদেবী জানিয়েছেন “।
এদিকে এই চিঠির বিষয়টি এদিন জানাজানি হতেই সমগ্র ভাতার জুড়ে চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে।ভাতারের বাসিন্দাদের সবার মুখে মুখে একটাই প্রশ্ন ঘুরে বেড়াচ্ছে ,’উগ্র বামপন্থী সংগঠন মাওবাদী দলের সদস্যরা তো আপাদমস্তক নাস্তিক বলেই সবাই জানে । সেই
মাওবাদীরা আবার ’বজরংবালীর’ ভক্ত কবে হল ?“ চিঠি আদৌ কোন মওবাদীদেরই নয়,
দুস্কৃতিরা মাওবাদী পরিচয় দিয়ে ৫ লাখ টাকা চেয়ে এমন চিঠি পাঠিয়েছে বলেই মনে করছেন আমবোনার বাসিন্দারা ।তাঁদের বক্তব্য ,দুস্কৃতিরা পুলিশের হাতে ধরা পড়লেই পরিস্কার হয়ে যাবে মাওবাদী পরিচয় দেওয়া ওই বজরংবালী ভক্তরা আসলে কারা । ভাতার থানার এক পুলিশ কর্তা জানান,’চিঠির সূত্র ধরে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে“ ।