আবহাওয়া দক্ষিণবঙ্গ শিক্ষা লাইফ স্টাইল স্বাস্থ্য ভ্রমন ধর্ম কৃষি কাজ ক্রাইম

বাবার মৃত্যু শোকে একই দিনে মৃত্যু মেয়ের-স্তম্ভিত গলসির বাসিন্দারা

krishna Saha

Published :

WhatsApp Channel Join Now

প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় ( বর্ধমান ) :- ছোট থেকে পরম স্নেহে মেয়েকে মানুষ করেছিলেন বাবা।তাই মেয়েও ছিল বাবা অন্ত প্রাণ।আর বৃহস্পতিবার বাবা যখন চির ঘুমের দেশে পাড়ি দেন তখনও বাবার হাত ছাড়লেন না মেয়ে।ধর্মিয় রীতি মেনে শুক্রবার একই কবর স্থানে কবরস্থও করা হল বাবা ও মেয়ের দেহ ।পিতা শেখ নাজির আলি(৫৮)ও কন্যা
মুসকান আলি-র(২৬)এমনই এক নজীর বিহীন স্নেহ-মমতার যুগলবন্দি চাক্ষুষ করে আত্মীয় ,পরিজন ,প্রতিবেশী কেউ-ই চোখের জল ধরে রাখতে পারলেন না। সবাই এক শুরে বললেন,সামাজিক অবক্ষের যুগেও এই পিতা ও কন্যা পারস্পরিক স্নেহ-মমতার, শ্রদ্বা ও ভালবাসার ইতিহাস তৈরি করে গেলেন।


গলসি বাজার এলাকায় বাড়ি শেখ নাজির
আলির । তার স্ত্রী পূর্ণিমা আলি সাধারণ গৃহবধূ ।এই দম্পতির ছেলে শেখ মইনুদ্দিন ২০০৯ সালে ডিভিসির জলে স্নান করতে নেমে তলিয়ে গিয়ে মারা যায় । সন্তান কে হারানোর সেই শোক কুরে কুরে খাচ্ছিল নাজির আলি ও তাঁর স্ত্রীকে। কিন্তু তাঁদের কন্যা মুসকান সেবা ,যত্ন ,ভালবাসা দিয়ে বাবা মাকে আগলে রাখতেন । মেধাবী ছাত্রী মুসকান এম-এ পাশ করে বিএড কোর্সও সম্পূর্ণ করে।ছেলে মইনুদ্দিন মারা যাওয়ার পর কন্যা মুসকানই ছিল নাজির আলি ও তাঁর স্ত্রীর একমাত্র ভরসা ও অবলম্বন ।


পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে , ছোট থেকেই মেয়ে মুসকান কে পরম স্নেহ , আদর ও
ভালবাসা দিয়ে বড় করেন বাবা নাজির আলি ।বাবা ও মেয়ের মধ্যেও ছিল আত্মিক সম্পর্ক । নাজির আলি ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার পর প্রথমে চেন্নাই ও পরে কোলকাতার টাটা মেমোরিয়াল ক্যানসার হাসপাতালে তার চিকিৎসা হয় । কিন্তু নাজির আলি পুরোপুরি
সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন নি।তাই দীর্ঘদিন ধরে মেয়ে মুসকান-ই তাঁর বাবার শুশ্রুষায় আত্মনিয়োগ করে । গত বৃহস্পতিবার দুপুর নাগাদ হঠাৎই নাজির আলির শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। বাড়িতে অক্সজেন আনিয়ে বাবার চিকিৎসা শুরু করায় মেয়ে মুসকান। বিকালের
দিকে খানিকটা সুস্থতা বোধ করলেও ওই দিন
রাতে ফের গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন নাজির আলি। তাঁকে গলসির পুরসা ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয় ।সেখানে
কতব্যরত চিকিৎসকরা শেখ নাজির আলিকে মৃত ঘোষণা করেন। পরিবারের লকজন রাতেই
মৃতদেহ নিয়ে বাড়ি ফেরেন । বাড়ির বাবার মৃতদেহ আসতেই বুক ফাটা কান্নায় ভেঙে পড়ে মেয়ে মুসকান। পরিবার সদস্য ও প্রতিবেশীরা বলেন বাড়ির দেতলা ঘরে কান্নাকাটি করতে
করতে সেখানে হঠাৎ করে মৃত্যুর কোলে ঢলে
মুসকান ।এমন অস্বাভাবিক ঘটনা দেখে বাড়িতে থাকা সকলে স্তম্ভিত হয়ে যান ।বাবার মৃত্যু শোকে হার্টফেল করেই মুসকানের মৃত্যু হয়েছে বলেই তারা মনে করেনেন। একই দিনে স্বামী ও কন্যাকে হারিয়ে শোকে বিহ্বল হয়ে পড়েন পূর্ণিমা আলি । একই ভাবে শোকাতুর
হয়ে পড়েছেন মুসকানের সহপাঠী , আত্মীয় পরিজন ও প্রতিবেশীরা । শক্রবার আলি পরিবারের দেশ বাড়ি ছোটমুড়িয়া গ্রামের কবর স্থানে কবরস্থ করা হয় বাবা ও মেয়ের দেহ ।


পূর্ণিমা আলি বলেন , বাবার মৃত্যু শোকে মেয়েটাও যে এই ভাবে মৃত্যুর কোলো ঢলে পড়বে তা তিনি কল্পনাও করতে পারেন নি ।
আত্মীয় ও প্রতিবেশীরা বলেন ,সত্যি তাা এক বিরল ঘটনার স্বাক্ষী থাকলেন ।বাবা ও মেয়ের মধ্যে যেমন ছিল পরস্পরিক স্নেহ-মমতা ,শ্রদ্ধা ও ভালবাসা।চির ঘুমের দেশে পড়ি দেওয়ার সময়েও তাঁরা অটুট রাখলো তাঁদের পরস্পরের প্রতি স্নেহ-মমতার যুগলবন্দি ।

See also  ১৯৯৩ মুম্বই বিস্ফোরণ কাণ্ডের অন্যতম অভিযুক্ত আবু বকর পুলিশের জালে

krishna Saha

আমার নাম কৃষ্ণ কুমার সাহা, আমি ফুল টাইম সাংবাদিকতা করি।গত ৮ বছর ধরে এই পেশায় আছি