প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় বর্ধমান ৮ মে

দারিদ্রতা কেড়ে নিয়েছিল ছাত্রী রাত্রির জীবনের আলো।তাই মাত্র চোদ্দ বছর বয়সে সংসারের হাল ধরতে টোটোরিক্সা চালানোকেই পেশা হিসাবে বেছে নিতে হয়েছিল রাত্রি মালিক কে। এই খবর
প্রকাশ হবার পরেই নড়ে চড়ে বসলো পূর্ব বর্ধমান জেলা শিশু সুরক্ষা দফতর ও চাইল্ড লাইন।সোমবার এই দুই দফতরের আধিকারিকরা কালনা ১ ব্লকের নিভুজি বাজার এলাকায় থাকা রাত্রি মালিক দের বাড়িতে যান। তাঁরা ওই ছাত্রী ও তার অভিভাবকদের সাথে কথা বলার পাশাপাশি ব্লক প্রশাসনের সঙ্গেও কথা বলেন।ফিরে যাবার সময়ে জেলা শিশু সুরক্ষা আধিকারিক সুদেষ্ণা মুখোপাধ্যায় জানান,“ছাত্রী রাত্রি মালিককে স্কুলমুখী করার পাশাপাশি তার পরিবার যাতে সরকারি ঘর পায় সেই ব্যাপারে তাঁরা উদ্যোগ নিচ্ছেন“।
কালনার কৃষ্ণদেবপুর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী রাত্রি মালিক । আর পাঁচটা পরিবারের ছেলে মেয়ের মত রাত্রিও লেখাপড়া শিখে জীবনে বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখতো । কিন্তু রাত্রির সেই স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যায় তাঁর বাবা মদন মালিক দু’বছর আগে সেরিব্রাল স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার পর।বাড়ির একমাত্র উপার্জন শীল বাবা শারীরিক অসুস্থতার কারণে কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলায় রাত্রিদের গোটা পরিবার যেন অথৈ জলে পড়ে যায়।বাড়িতে রয়েছে ছাত্রীর দেড় বছর বয়সী ভাই। মা গৌরী মালিক অপরের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ শুরু করেছেন।কিন্তু পরিচারিকার কাজের সামান্য পারিশ্রমিকে অসুস্থ স্বামীর চিকিৎসার খরচ জোগানো ও সংসার চালানো সম্ভব হচ্ছিল না।অভাব কুরে কুরে খাচ্ছিল পরিবারকে। কোনদিন একবেলা আবার কোনদিন আধপেটা খেয়ে মালিক পরিবারের সদস্যদের দিন কাটছিল।এই পরিস্থিতিতে পরিবারের সবার অন্নের সংস্থানের জন্য ছাত্রী রাত্রি লেখাপড়ার পাঠ শিকেয় তুলে রেখে নিজেই টোটো চালিয়ে অর্থ উপার্জনের পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়।সাংবাদিক মাধ্যমে রাত্রি মালিক ও তার পরিবারের এই দুর্দশার কথা জানতে পারেন রাজ্যের নারী ,শিশু ও সমাজকল্যান দফতরের মন্ত্রী শশী পাঁজা ।
এর পর এদিনই রাত্রি মালিকদের টালির চালার বাঙাচোরা বাড়িতে পৌছান জেলা শিশু সুরক্ষা আধিকারিক সুদেষ্ণা মুখোপাধ্যায় এবং চাইল্ড লাইন আধিকারিক সুচেতনা ভট্টাচার্য। এঁনারা
রাত্রির অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন সরকারি আবাস যোজনায় তালিকায় রাত্রির অভিবাবকের নাম রয়েছে।সেই ঘর তারা যাতে পান সেই বিষয়ে কালনা-১ ব্লক প্রশাসনের সঙ্গে সুদেষ্ণা মুখোপাধ্যায় ও সুচেতনা ভট্টাচার্য।
এছাড়াও ছাত্রীর বাবা-মায়ের জাতিগত শংসাপত্র যাতে হয় সেই দিকটিও তারা দেখেন বলে আশ্বস্ত করেন। ছাত্রী রাত্রির পড়াশুনা ও স্কুল যাওয়া সংক্রান্ত স্পনশরশিপের বিষয়ে নিয়েও আলোচনা হয়।
চাইল্ড লাইনৈর পক্ষে সুচেতনা ভট্টাচার্য বলেন,“জেলা শিশু সুরক্ষা দফতরের নির্দেশে এদিন আমরা ওই ছাত্রীর বাড়িতে যাই।দেখলাম খুবই কষ্টের মধ্যেই ওই বাড়িতে বসবাস করেন ছাত্রী ও তার পরিবারের সদস্যরা।ছাত্রী ও তার পরিবারের সবিস্তার রিপোর্ট শিশু সুরক্ষা দফতর ও চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটিকে পাঠানো হবে।”