আবহাওয়া দক্ষিণবঙ্গ শিক্ষা লাইফ স্টাইল স্বাস্থ্য ভ্রমন ধর্ম কৃষি কাজ ক্রাইম

৯ লক্ষ মানুষের বসবাস, নেই সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল থেকে অগ্নিনির্বাপক কেন্দ্র; অসহায় দক্ষিন দামোদর ! খন্ড – ১

krishna Saha

Published :

WhatsApp Channel Join Now

অভাগা দক্ষিণ দামোদর বাসির লজ্জা !!স্বাধীনতার ৭৫ বছরেও মিললো না জনগণের নূন্যতম সুস্বাস্থ্যের চাহিদা সম্পন্ন আধুনিক হাসপাতাল এবং বিপদকালীন রক্ষাময়ী অগ্নিনির্বাপক কেন্দ্র ! চিরজীবনই বঞ্চনার শিকার ! ভুবনজোড়া গোবিন্দ ভোগের সুখ্যাতির মুকুটে রাজপালকধারী ২০২২ সালে দাঁড়িয়েও অসহায়! চলুন একটু অতীতের খোঁজে ; দাদু ঠাকুমার সেই মোটা শাড়ি আর ঢেঁকি ভাঙা চালের দিনগুলিতে!

 

দামোদর নদীর উত্তরে অবস্থিত বর্ধমান শহর ! ছোটনাগপুর মালভূমির আদিবাসী সম্প্রদায় নদীটিকে পবিত্র নদী বলে মনে করেন ! দামোদর নদী বিহারের পালমপুর জেলায় অবস্থিত বিঘোঁসা পাহাড়ের সোনাজুরিয়া জলপ্রপাত থেকে উৎপন্ন হয়েছে ! নদীটি বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার বরাকরের সাথে মিলিত হয়েছে এবং বর্ধমান জেলার বাকি অংশ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে ! পশ্চিমবঙ্গের হুগলি এবং হাওড়া জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে ! ভাগীরথী নদীতে যোগ দেওয়ার আগে বল্লুকা, বেহুলা, গাঙ্গুর, বাঙ্কা ইত্যাদি নামে দামোদরের শাখা নদীগুলির সাথে যুক্ত !

 

“রাঢ়-বাংলা” সভ্যতাও গড়ে উঠেছে এই নদীকে কেন্দ্র করে ! দক্ষিণ দামোদর আসতে হলে সদরঘাটে দামোদর নদীর উপর একটি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে যা “কৃষক সেতু” নামে পরিচিত ! নদীর কোলে পর্যটকদের পাশাপাশি বর্ধমানের বাসিন্দাদের জন্য পিকনিকের জন্য আদর্শ এবং দুর্দান্ত ভাবে পর্যটকদের আকর্ষণ করে ! নদীর জলে নৌকাবাইচ উপভোগ করতে পারেন ! প্রতি বছর নদীর তীরে একটি ঘুড়ি ওড়ানোর মেলা বসে ! যাকে বলা হয় “পয়লা মাঘ” মেলা এবং জাতি ধর্ম নির্বিশেষে বিপুল সংখ্যক দর্শনার্থী তীরে ভিড় করেন ! “কৃষক সেতু”র দক্ষিণ প্রান্তে বিশেষত চারটি ঐতিহ্যবাহী কাদামাটির দেশ রয়েছে, রায়না, মাধবডিহি, খণ্ডঘোষ এবং বাঁকুড়া জেলার অন্তর্গত ইন্দাস !

 

 

যেমনটি সেতুর প্রবেশ এবং প্রস্থানে একদিকে “হাসিমুখে কৃষক দম্পতি” মাঠে কাজ করতে যাচ্ছেন এবং অন্যদিকে, একটি “বাউল চিত্র”, সঙ্গে একতারা এবং ঢোল” যেটির গর্বে পূর্ণতা পেয়েছে খাঁটি গোবিন্দ ভোগের দেবভূমি ! বর্ধমান এবং হুগলি জেলার আরামবাগ শহর কে সংযুক্ত করতে, দামোদর নদীর উপর ১৯৭৮ সালে সাধারণ মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি এবং কংগ্রেস বিধায়কের সহযোগিতায় “কৃষক সেতু” নির্মাণ করা হয়েছে !
সেতুটি বর্ধমান শহর থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ! সেতুতে যাওয়ার জন্য বর্ধমান রেল স্টেশন থেকে টোটো গাড়িতে ২০ টাকা এবং তেলিপুকুর পূর্তভবন থেকে ১০ টাকা ভাড়া লাগে !

See also  একঝলকে দেখে নিন পূর্ব বর্ধমান জেলার আজকের করোনা আক্রান্তের সংখ্যা

 

ইতিহাসে আগে দামোদর নদীকে (প্রত্যেন্তরে দামোদর নদ) “দুঃখের নদী” হিসাবে দেখতেন ! কারণ এটি বর্ধমান, হাওড়া, হুগলি এবং মেদিনীপুর জেলার অনেক অঞ্চলে বন্যা সৃষ্টি করার জন্য একটি দুর্দান্ত প্রবণতা ছিল ! জুন থেকে আগস্টের মধ্যে বর্ষাকালে দামোদর নদী এবং উপনদীর নিচ দিয়ে প্রবাহিত বিপুল পরিমাণ জল নদীর পাশ দিয়ে উপচে পড়ত এবং প্রচুর পরিমাণে খাদ্যশস্য ক্ষতি ও জনজীবন ধ্বংস সাধন করত !
১৭৭০, ১৮৫৫, ১৯১৩ ও ১৯৪৩ সালের বন্যার সময় বর্ধমান শহরের বেশিরভাগ অংশ প্লাবিত হয়েছিল এবং জলের নিচে তলিয়ে যাওয়ার কারণে ব্যাপকভাবে অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছিলো !

 

এই বন্যার প্রতিক্রিয়া হিসাবে, ১৭৮৯ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এবং বর্ধমানের মহারাজা কীর্তি চাঁদের মধ্যে একটি চুক্তি হয়েছিল, যেখানে মহারাজাকে বন্যা প্রতিরোধের জন্য একটি বাঁধ নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আরও এক লক্ষ ৯৩ হাজার ৭২১ টাকা দিতে হয়েছিল ! পরবর্তী দুটি ক্ষমতা চুক্তিতে একমত হতে পারেনি এবং একটি বিরোধ দেখা দেয়, যার ফলস্বরূপ, ১৮৬৬ সালে এবং ১৮৭৩ সালে বেঙ্গল অ্যাম্ব্যাঙ্কমেন্ট অ্যাক্ট পাস করা হয়েছিল, যা ক্ষমতাগুলি সরকারের কাছে হস্তান্তর করে – রক্ষণাবেক্ষণ এবং বাঁধ নির্মাণ !

 

১৯০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ব্রিটিশ শাসন থেকে ১৯৪৭ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর দামোদর উপত্যকা প্রকল্পটি পূর্ব ভারতের প্রথম বহুমুখী নদী উপত্যকা উন্নয়ন প্রকল্প ! বর্ষাকালের সময় নিম্ন দামোদর অববাহিকা বর্ষার জলে প্রথমে পরিপূর্ণ হয় এবং দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু ঝাড়খণ্ড রাজ্যে পৌঁছায় এবং প্রবল বর্ষণ হয় !দামোদরের মধ্য দিয়ে বৃষ্টির জল প্রবাহিত হয় এবং প্রতি বছর নিম্নাঞ্চলে বিভিন্ন মাত্রায় বন্যার সৃষ্টি করে ! তাই প্রকৃতির বিধ্বংসী বন্যা নিয়মিত ঘটনা ছিল যার জন্য নদীটি সাধারণত “বাংলার দুঃখ” নামে পরিচিত ছিল ১৭৩০ সালের প্রথম রেকর্ডকৃত বন্যায় তিরবর্তী অঞ্চলে বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছিল !

See also  এবার রবির আলোয় আলোকিত হবে অনুব্রত মুক্ত আউশগ্রাম,কেতুগ্রাম ও মঙ্গলকোট

 

দামোদরে বন্যার জল বিস্তার রোধ করার জন্য ব্রিটিশ শাসক প্রথম উল্লেখযোগ্য প্রকল্প ছিল ইডেন খাল খনন, যাতে বর্ষায় বন্যার জল ভাগীরথী-হুগলি নদীতে সরানো যায় ! তবে নিম্ন দামোদর অববাহিকার মানুষের যন্ত্রণা কমাতে এই উদ্যোগ তেমন কার্যকর ছিল না ! পরবর্তী কালে ভারত সরকার মিস্টার ভুরডুইনকে আমন্ত্রণ জানায়, প্রকল্প রিপোর্ট তৈরি করার জন্য এবং দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন (DVC) অধীনে একটি বহুমুখী নদী উপত্যকা প্রকল্প ভারত সরকার ১৯৪৮ সালে সমগ্র অববাহিকার জন্য কাজ শুরু করেন ! এই প্রকল্পে চারটি বড় বাঁধ যেমন- তিলাইয়া, কোনার, মাইথন ও পাঞ্চেত ! এছাড়া দুর্গাপুরে একটি ব্যারেজ নির্মাণ করা হয়েছিল! (ক্রমশ)

ARTICLE PUBLISHED BY রথীন রায়

krishna Saha

আমার নাম কৃষ্ণ কুমার সাহা, আমি ফুল টাইম সাংবাদিকতা করি।গত ৮ বছর ধরে এই পেশায় আছি