প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়, বর্ধমান, ২৬ আগষ্ট: এ যেন আর এক ভয়ংকর কাণ্ড। সন্দেশখালির শাহজাহানের মতো হাড়হিম করা সন্ত্রাস চালানোর অভিযোগ ওঠা তৃণমূল নেতা শেখ ফিরোজের গায়ে পুলিশের উর্দি ! হ্যাঁ,এমন ছবিই এখন পূর্ব বর্ধমান জেলার জামালপুর ব্লকের বেরুগ্রাম অঞ্চলের বাসিন্দাদের ফোনে ফোনে ঘুরে বেড়াচ্ছে
। ওই ছবি রাজনৈতিক মহলেও তোলপাড় ফেলে দিয়েছে।দিনে তৃণমূলের হয়ে নেতাগিরি করা ফিরোজ রাতে বালির লরি থেকে ’তোলা’ আদায়ের জন্যই কি গায়ে পুলিশের উর্দি চড়াতেন?এই প্রশ্নই এখন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে।তবে এ নিয়ে এখন আর কোন দ্বিমত রাখেন নি বেরুগ্রাম অঞ্চলের বাসিন্দারা।
তৃণমূল কংংগ্রেস নেতা শেখ ফিরোজের বাড়ি জামালপুরের বেরুগ্রাম অঞ্চলের চক্ষণজাদি গ্রামে
।তিনি বড় কোন পদে থাকা তৃণমূল নেতা নন।তবে তাঁর স্ত্রী হাসনারা বেগম ২০১৮সাল থেকে একটানা বেরুগ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান পদে অধিষ্ঠিত রয়ে আছেন। গ্রামবাসীদের অভিযোগ,’“স্ত্রী পঞ্চায়েত প্রধান হওয়ার পর থেকেই ফিরোজ নিজেকে বেরুগ্রাম অঞ্চলের ’বেতাজ বাদশা’ প্রতিপন্ন করা শুরু করেদেন।২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস দল ফের বাংলায় শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলে ফিরোজ ও তাঁর বাহিনীর সন্ত্রাস,
অত্যাচার সব সীমা ছাড়িয়ে যায়।তারই মধ্যে বেরুগ্রাম অঞ্চল জুড়ে অবৈধ বালির কারবারের রমরমা বৃদ্ধি ঘটে চলে। প্রতিদিন শয়ে শয়ে ওভার লোড বালির লরি যাতায়াতের কারণে পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গিয়েছে কোটি কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত এলাকার প্রধান সড়ক পথ। তা নিয়ে জনমানসে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।এ সবের মধ্যেই অত্যাচার সহ্য করতে করতে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া বেরুগ্রাম অঞ্চলের বাসিন্দারা তৃণমূল নেতা শেখ ফিরোজের বিরুদ্ধে এখন গর্জে উঠছেন।তার গ্রেপ্তারের দাবিতে গ্রামবাসীরা সরব হয়েছেন।

তৃণমূল নেতা শেখ ফিরোজকে গ্রেফতারের দাবিতে এখন তপ্ত পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের বেরুগ্রাম অঞ্চল।এমন আবহেই মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বর্ধমানে প্রশাসনিক বৈঠক করতে আসছেন।তিনি দুই বর্ধমান জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের নিয়ে প্রশাসনিক সভা করবেন।এমন এক সময়ে পুলিশের উর্দি গায়ে তৃণমূল নেতা শেখ ফিরোজের ছবি, জেলায় বেশ হইচই ফেলে দিয়েছে।বেরুগ্রাম অঞ্চলের বহু ব্যক্তির ফোনে ফোনে সেই ছবি এখন ঘুরপাক খাচ্ছে।
এমন ছবির প্রসঙ্গে এলাকার বাসিন্দারা যা জানিয়েছেন সেটাও যথেষ্ট চমকে দেওয়ার মতোন।তাঁরা জানান,সন্ত্রাস,অত্যচার ও তোলাবাজি চালিয়ে বিপুল অর্থ ও ধন সম্পত্তির মালিক হয়ে যাওয়া তৃণমূল নেতা ফিরোজ দেশের আইন কানুন,প্রশাসন,কোন কিছুরই তোয়ক্কা করতেন না’। পুলিশের উর্দি পরা তাঁর ছবি তিনি নিজেই বছর তিনেক আগে নিজের ফেস বুকে পোস্ট করেছিল।সেই ছবি তখন ব্যাপক ভাবে ভাইরাল হয়।একই ছবি এখন ফের ভাইরাল হয়েছে বলে এলাকার বাসিন্দারা জানিয়ছেন।
এলাকাবাসীর কথা অনুযায়ী,পুলিশের উর্দি গায়ে তৃণমূল নেতা শেখ ফিরোজের ছবি ২০২২ সালের প্রথম প্রকাশ্যে আসে। ওই ছবি নিয়ে তদানিন্তন জামালপুর পঞ্চায়েত সমতি ও পঞ্চায়েত গুলির জনপ্রতিনিধিরা জেলার পুলিশ সুপার এবং মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে অভিযোগ জানিয়ে ছিলেন।
সেই অভিযোগপত্রে বেরুগ্রাম অঞ্চল সহ ব্লকের অন্য অঞ্চলে দাদোদর থেকে বালি লুট হয়ে চলার কথা উল্লেখ করা হয়।এছাড়াও বেরুগ্রাম অঞ্চল ও ব্লক তৃণমূলের দায়িত্বপ্রাপ্ত কয়েকজন নেতার নানা অপকর্মের কথাও ওই অভিযোগপত্রে উল্লেখ থাকে ।ওই অভিযোগপত্রেই উল্লেখ থাকে,“রাতের অন্ধকারে ওভারলোড বালির লরি ও ডাম্বার থেকে তোলা আদায়ের জন্য ফিরোজ পুলিশের উর্দি গায়ে রাস্তায় নামতো“। সেই অভিযোগ যে সত্য ছিল সেটা বেরুগ্রাম অঞ্চলের চক্ষণজাদী গ্রামের মানুষজন এখন প্রকাশ্যে বলছেন।মুখ্যমন্ত্রী বর্ধমানে আসার আগের দিন চক্ষণজাদী গ্রামের
একধীক বাসিন্দা সংবাদ মাধ্যমকে জানান, বালির গাড়ি থেকে তোলা আদায়ের জন্যই শেখ ফিরোজ পুলিশের উর্দি গায়ে রাতে রাস্তায় নামতো।“ যদিও ফিরোজ এই অভিযোগ অসত্য বলে দাবি করেছেন
।