প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় ( বর্ধমান ) :- দৃষ্টিহীন কিশোর মহঃ হায়দার আলির স্বপ্ন গয়ক হবার ।কিন্তু পরিবারিক দারিদ্রতা কিশোরের সেই স্বপ্নপূরণে অন্তরায় হয়ে দাড়িয়েছে ।সাধ থাকলেও সাধ্যে কুলোনি বলে ছেলেকে একটা হারমোনিআমও কিনেদিতে পারেননি বাবা শেখ আনসার আলি।সুরেলা কন্ঠে গান গেয়েই মনের এই দুঃখের কথা সবাইকে শোনাতো হায়দার ।গায়ক হবার স্বপ্নে বিভোর দৃষ্টিহীন এক কিশোরের সেই বেদনাভরা গান ব্যাথিক করেছিল হাবড়ার অশোকনগর নিবাসী সংগীত প্রেমী রিয়া রুবি মহাশয়াকে । তাই তিনি নিজের জন্মদিনের অনুষ্ঠান বাতিল করেদিয়ে সেই অর্থে হায়দারকে কিনেদিলেন নতুন একটি হারমোনিয়াম।নতুন হারমোনিয়াম পেয়ে এখন আনন্দে আত্মহারা দৃষ্টিহীন হায়দার । সে জানিয়েছে ,এবার তাঁর কাজ হবে হারমোনিয়ামের শুরে শুর মিলিয়ে গানের জগৎতে নিজেকে মেলে ধরা ।
দৃষ্টিহীন কিশোর হায়দারের বাড়ি পূর্ব বর্ধমানের গুসকরার আলুটিয়ার গ্রামে। হায়দারের বাবা শেখ আনসার আলি পেশায় রাজমিস্ত্রী । মা হাফিজা বেগম সাধারণ গৃহবধূ । হায়দাররা তিন ভাই ,তিন বোন । বড় দুই দিদির বিয়ে হয়েগেছে ।ছোট দিদি মোমিনা খাতুনের এখনও বিয়ে হয়নি ।এক দাদা ও বাবার সামান্য রোজগারেই হায়দারদের পরিবারের সকলের অন্নসংস্থান হয় ।

আনসার আলি জানিয়েছেন , তাঁর ছেলে হায়দারের বর্তমান বয়স চোদ্দ বছর । ছোট থেকেই সে দৃষ্টিহীন ।আনসার আলি জানান , অনেক ছোট বয়স থেকেই গান বাজনার প্রতি
হায়দারের আকর্ষন বাড়তে থাকে ।ওই সময়ে ছেলে কান্নাকাটি শুরু করলে ওকে রেডিওয় গান শোনালেই কান্নাকাটি বন্ধ হয়েযেত । পরে একটু বড় হওয়ার সাথে সাথে হায়দার নিজের মনে মনেই গানগাইতে শুরু করে । এখন মোবাইলে বিভিন্ন শিল্পির কন্ঠে গান শুনে তা আয়ত্ত করেনিয়ে হায়দার নিজেই সুমধুর কন্ঠে সেই গান গায়। আনসার আলি বলেন ,গান শেখার জন্য ছেলের যে একটা হারমোনিয়ামের প্রয়োজন তা তিনি বোঝেন । ছেলেও দীর্ঘদিন ধরে তাঁর কাছে একটা হারমোনিয়াম কিনে দেবার আবদার করে আসছিল ।কিন্তু অভাব অনটনের কারণে
তিনি গান শেখার জন্য ছেলেকে একটা হারমোনিয়াম কিনেদিতে পারেননি ।গানের তালিম নেবার জন্য ছেলেকে কোন সংগীত গুরুর কাছে পাঠানোর ব্যবস্থাও করতে পারেন নি । তবুও ছেলে হায়দার হাল ছাড়েনি । নিজের প্রচেষ্টাতেই চর্চা চালিয়ে গিয়ে হায়দার দু’তিনটে বড় রিয়ালিটি শোয়ে গানের অডিশন দিয়েছিল । কিন্তু উপযুক্ত তালিমের অভাবে ছেলেকে পিছিয়ে আসতে হয়েছিল । আনসার আলি বলেন , তিনি না পারলেও তাঁর ছেলের হারমোনিয়ামের আবদার পূরণ করে দিলেন হবড়ার অশোকনগর নিবাসী সংগীত প্রেমী রিয়া রুবি মহাশয়া।আনসার অলি জানালেন , রিয়া রুবি মহাশয়ার দেওয়া হারমোনিয়াম কে অাঁকড়েই হয়তো আগামীদিন তাঁর ছেলে হায়দারের গায়ক হবার স্বপন পূরণ হবে ।
সংগীত প্রেমী রিয়া রুবি মঙ্গলবার জানান ,
একটা হারমোনিয়ামের জন্য গায়ক হবার স্বপ্নে বিভোর হায়দারের আকুতি তাঁকে ব্যাথিত করেছিল । তাই হায়দারের ইচ্ছা পূরণের জন্য
নিজের জন্মদিনের অনুষ্ঠান বাতিল করেদিয়ে তার অর্থে তিনি একটি নতুন হারমোনিয়াম কেনেন । এছাড়াও পূর্ব বর্ধমানের গলসি নিবাসী তাঁর গুনমুগ্ধ আজিজুর রহমান ও লালন শেখ নতুন জামা কাপড় ও বেশকিছু খাদ্যসামগ্রী হায়দারের পরিবারের জন্য কেনে । তারাই সোমবার নতুন হারমোনিয়াম সহ ওই কিছু হায়দারদের বাড়িতে পৌছে দিয়েছে ।
রিয়াদেবী জানিয়েছেন , দৃষ্টিহীন কিশোর হায়দারের গায়ক হবার স্বপ্ন পূরণ হোক ঈশ্বরের কাছে সেই প্রার্থনাই তিনি জানাবেন ।
