উজ্জ্বল বন্দ্যোপাধ্যায়, সোনারপুর: কলকাতা শহরতলিতে এবার ডেঙ্গির প্রকোপে মৃত্যু দুজনের।প্রশ্নের মুখে পুরসভার ভূমিকা নিয়ে।কলকাতার লাগোয়া রাজপুর সোনারপুর পুরসভার ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডে কয়েক দিনের ব্যবধানে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে একই পরিবারের দুই সদস্যের। শনিবার এমআর বাঙ্গুর হাসপাতালে মৃত্যু হয় রেনিয়া ক্ষুদিরাম সরণির বাসিন্দা বন্দনা সর্দারের (৪৩)। চলতি মাসের ৬ তারিখে মারা যান বিপ্লব সর্দার (৪৫)। বিপ্লব সম্পর্কে বন্দনার ভাসুর। বিপ্লবের ছেলেও ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন।
এলাকার বহু মানুষ জ্বরে আক্রান্ত। তাঁদের অনেকের শরীরে ডেঙ্গির সন্ধান মিলেছে।আর তা নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়েছে বাঁশদ্রোণী মেট্রো স্টেশন সংলগ্ন রেনিয়া এলাকায়। চিন্তার ভাঁজ পুরকর্তাদের কপালে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা না গেলে এখান থেকে অচিরেই কলকাতা শহরে ডেঙ্গি ছড়িয়ে পড়বে। কয়েক বছর আগে রাজপুর সোনারপুর পুরসভা থেকে ডেঙ্গি ছড়িয়েছিল কলকাতায়। সে কথা মাথায় রেখে রাজপুর–সোনারপুর পুরসভার লাগোয়া এলাকা গুলিতে নজরদারি বা়ডানো হয়েছে। জঞ্জাল সাফাই এবং নিকাশি বিভাগকেও সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।

এলাকায় ডেঙ্গি বাড়ার পিছনে মানুষের অসচেতনাতেই দায়ী করছেন রাজপুর–সোনারপুর পুরসভার ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার দেবব্রত মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘পুরসভার কোনও ড্রেনে জল জমে নেই। এলাকায় কিছু মাটির বেড় দিয়ে নির্মিত সেপটিক ট্যাঙ্কের জল উপচে আশেপাশে জমা হচ্ছে। মানুষের অসতর্কতার জন্যই এমনটা হচ্ছে।ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে ইতিমধ্যেই পুরসভার পক্ষ থেকে সব ধরনের সাবধানতা অবলম্বন করা হয়েছে।’স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করছেন, রেনিয়ায় ক্ষুদিরাম সরণি এবং তার আশপাশের এলাকায় পুজোর পর থেকে জ্বরের প্রকোপ বেড়েছে। মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ হয়ে উঠছেন মানুষ। এর জন্য পুরসভার দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলছেন বিপ্লবের স্ত্রী শম্পা সর্দার।
তিনি বলেন, ‘পুরসভা যদি আমাদের এলাকায় ঠিকঠাক স্প্রে করত, জল নিকাশি ব্যবস্থা যদি ঠিক থাকত, তাহলে এ ভাবে দুটো প্রাণ চলে যেত না। কাউন্সিলার কোনও কাজ করছেন না। আমার স্বামী সেচ দপ্তরে চাকরি করতেন। এখন আমাদের কী ভাবে চলবে, সেটাই বুঝে উঠতে পারছি না।’ তিনি জানান, পরপর দুটো মৃত্যুতে এলাকার মানুষ এখন আতঙ্কিত। অনেকেই পাড়া ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। শম্পা নিজেও ঠাকুরপুকুরে বাপের বাড়িতে থাকছেন।ডেঙ্গি প্রতিরোধে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে তৃণমূল পুরবোর্ডের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে বিরোধীরা।
পুরসভার স্বাস্থ্য দপ্তরের সিআইসি রঞ্জিত মণ্ডলের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিজেপি নেতা সুনীপ দাস বলেন, ‘সাধারণ মানুষ যে ভাবে ডেঙ্গিতে মারা যাচ্ছেন, সেটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের। পুরসভার উদাসীনতার জন্য এমনটা হচ্ছে। মানুষের উচিত, ভোট দিয়ে সঠিক জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করা, যাতে তাঁদের প্রাণটা অন্তত বাঁচে।’এই মুহুর্তে রাজপুর-সোনারপুর পুরসভা এলাকায় কতজন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত এবং ডেঙ্গিতে এখনও পর্যন্ত কতজনের মৃত্যু হয়েছে, সে সম্পর্কে সঠিক কোনও তথ্য দিতে পারেননি রাজপুর সোনারপুর পুরসভার চেয়ারম্যান ডা: পল্লব দাস।
তাঁর দাবি, ‘পুরসভার টিম খুব ভালো কাজ করছে। অন্য বছরের তুলনায় এ বছর পুর এলাকায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা কম। পুরসভার কোনও ড্রেনে জল জমে নেই। নিচু এলাকায় কিছু কিছু পকেটে জল জমে আছে। সেখানে পুরসভার পক্ষ থেকে যা যা ব্যবস্থা নেওয়া দরকার, তা নেওয়া হয়েছে। ওই এলাকায় ‘ফিভার ক্লিনিক’ খোলা হয়েছে। যাঁদের জ্বর আছে, তাঁদের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হচছে।তবে এই ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।







