প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় ( বর্ধমান ) :- বয়স ছিয়াত্তরে গণ্ডী ছাড়িয়ে গিয়েছে । ২০০৪ সালে স্কুলের শিক্ষকতা জীবন থেকে অবসর
লাভের পরেও শিক্ষা দান থেকে ছুটি নেননি
সুজিত চট্টোপাধ্যায়। পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রামের উত্তর রামনগর নিবাসী
অশীতিপর ‘মাস্টারমশাই’ নিজের বাড়িতেই খোলেন পাঠশালা । যা এলাকাবাসীর কাছে
‘সদাই ফকিরের পাঠশালা’ নামেই পরিচিত ।
সেই পাঠশালায় ’বাৎসরিক ২ টাকা’ গুরুক্ষিনার বিনিময়ে এলাকার ‘জনজাতি’ পরিবারের ছাত্র ছাত্রীদের শিক্ষাদান করেচলা সুজিত বাবু এবার পাচ্ছেন ‘পদ্মশ্রী’ খেতাব ।
সোমবার রাতে দিল্লি থেকে ফোন আসার পরেই ‘পদ্মশ্রী’ খেতাবে ভূষিত হতে চলেছেন বলে সুজিত চট্টোপাধ্যায় জানতে পারেন ।
সদাই ফকিরের পাঠশালার জনকের এই সন্মান প্রাপ্তির খবরে উচ্ছশিত সমগ্র আউশগ্রামবাসী ।
সোমবার রাতে সুজিতবাবু সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “সন্ধ্যায় দিল্লি থেকে তাঁর কাছে ফোন আসে । যিনি ফোন করেন তিনি জানতে চান ,’আমি জনজাতি পরিবারের ছাত্র ছাত্রীদের পড়াই কি না । সুজিত বাবু বলেন ,আমি উত্তরে বলি
জনজাতি পরিবারের ছাত্র ছাত্রীদেই আমি পড়াই । এরপরেই আমাকে বলা হয় আমি আমি ‘পদ্মশ্রি’ খেতাব পাচ্ছি । “সুজিত বাবু বলেন , আমি হিন্দি ভালো বুঝি না । ধানবাদে থাকা আমার মেয়েকে এরপর বিষয়টি বলি । আমার মেয়ে খোঁজ খবর নিয়ে রাতে আমায় ফোন করে আমায় জানায় আমি ‘পদ্মশ্রী ’ খেতাব পাচ্ছি । মার্চ মাসে পুরস্কার দেবে বলে জানিয়েছে।” এই খবর পেয়ে কেমন লাগছে মাস্টারমশাই ?উত্তরে সুজিত বাবু বলেন , সে রকম অনুভূতি এখনও হয়নি। পুরস্কার গ্রহনের পর তা বলতে পারবো ।
আউশগ্রামের প্রত্যন্ত গ্রাম উত্তর রামনগর ।
বাংলায় স্নাতকোত্তর সুজিত চট্টোপাধ্যায় ১৯৬৫ সালে গ্রামের উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন । শিক্ষকতা জীবনে স্কুল ছুটির পর পিছিয়ে পড়া পরিবারের ছাত্র ছাত্রীদের তিনি ’বিশেষ ক্লাস’ নিতেন । একই সঙ্গে জনজাতি পরিবারের শিশুদের স্কুলমুখী করার কাজও তিনি চালিয়ে গিয়েছেন । ২০০৪ সালে স্কুল শিক্ষক জীবন থেকে অবসর গ্রহনের পর সুজিত বাবু নিজের বাড়িতেই জনজাতী , সংখ্যালঘু ও দরিদ্র পরিবারের ছেলে মেয়েদের তিনি পাঠদান শুরু করেন । পেনশনের টাকার একাংশ খরচ করে তিনি পড়ুয়াদের বই খাতাও কিনে দিনেন ।
শিক্ষা দানের জন্য পারিশ্রমিক নেওয়ার ব্যাপারে প্রবল আপত্তি ছিল সুজিত বাবুর ।কিন্তু নাছোড় ছাত্র ছাত্রীরা শিক্ষা গুরুকে গুরুদক্ষিনা না দিতে পেরে আক্ষেপ করতো । সেই আক্ষেপ মেটাতে অবশেষে সুজিত মাস্টারমশাই নির্ধারণ করেন তাঁর গুরু দক্ষিনা বাৎসরিক ২ টাকা । গুরু দক্ষিনার এই অর্থও পড়ুয়াদের স্বার্থে খরচ করে দেন সদাই ফকিরের পাঠশালার শিক্ষক সুজিত চট্টোপাধ্যায়। বর্তমানে তাঁর ছাত্র ছাত্রী সংখ্যা তিনশোরও বেশী । তাদের বেশীর ভাগই জনজাতি ও সংখ্যালঘু পরিবারের । সদাই ফকিরের পাঠশালায় ছাত্রীর সংখ্যাই সবথেকে বেশী । সুজিত বাবু মাধ্যমিক স্তরে বাংলা, ইংরেজি, ভূগোল, ইতিহাস এবং উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক স্তরে বাংলা পড়ান । জনজাতি পরিবারের ছাত্র ছাত্রীদের শিক্ষা দানের পাশাপাশি ’থ্যালাসেমিয়া’ আক্রান্তদেরও তিনি নিঃস্বার্থ ভাবে সাহায্য করেন ।এলাকাবাসীর কাছে এমন এক মহতি শিক্ষকের নাম করলে
তারা জোড়হাত মাথায় ঠেকান । সেই সুজিত বাবু এবার ‘পদ্মশ্রী ’খেতাব পেতে চলেছেন জেনে আপ্লুত তাঁর ছাত্র ছাত্রী ও গুনমুগ্ধরা ।
krishna Saha
আমার নাম কৃষ্ণ কুমার সাহা, আমি ফুল টাইম সাংবাদিকতা করি।গত ৮ বছর ধরে এই পেশায় আছি