আবহাওয়া দক্ষিণবঙ্গ শিক্ষা লাইফ স্টাইল স্বাস্থ্য ভ্রমন ধর্ম কৃষি কাজ ক্রাইম

কালভার্ট থেকে শুরু করে স্কুল এখন মাঠে

krishna Saha

Published :

WhatsApp Channel Join Now

করোনার জেরে যেখানে স্কুল কলেজ বন্ধ, সেখানে বাড়ছে স্কুল ছুটের সংখ্যা। অনেক শিশু পড়াশুনা থেকে বিছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। তাদের শিক্ষার আঙিনায় রাখতে মাঠের মধ্যেই পড়ানো শুরু করলেন প্রাথমিক শিক্ষক। শুরুটা হয়েছিল গ্রামের রাস্তার কালভার্টে বসে বাচ্চা ছেলে মেয়েদের চকলেট দিতে গিয়ে। তারপর স্কুল সরে এসেছে মাঠে।
পূর্ব বর্ধমানের খন্ডঘোষ ব্লকের গুঁইর গ্রামের বাসিন্দা স্কুলশিক্ষক সন্দীপ প্রসন্ন চক্রবর্তী। প্রায়ই বিকেলে পাশের গ্রাম আম্বা তে যেতেন পায়চারি করতে। নিজে একজন প্রাইমারি টিচার তাই সেখানে খেলতে আসা বাচ্চাদের সাথে খুব সহজেই মিশে যান সন্দীপ বাবু।

তাদের সাথে কথা বলে উপলব্ধি করেন, দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকায় পড়াশোনার অভ্যাস থেকে সরে আসছে গ্রামের বাচ্চারা। গ্রামের কয়েকজন প্রাইমারি স্কুলের ছাত্রছাত্রীকে পড়াশুনার কথা বললে রাজিও হয়ে যায় তারা। সেই থেকে আম্বা গ্রামের রাস্তার উপর কালভার্টে বসে শুরু হয় “কালভার্ট স্কুল”। শুরু করেছিলেন দুই জন ছাত্রকে নিয়ে,  ক্রমশই বাড়তে থাকে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা। ফলে কালভার্টে জায়গা না কুলানোয় ক্লাশ সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় পাশের একটি মাঠে বট গাছের নীচে। এখন ছাত্রছাত্রী সংখা পঁচিশ।

শুধু প্রাইমারি লেভেল নয়,  ক্লাশে যোগ দিয়েছে অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীরাও। মাস্ক, দুরত্ববিধি ও স্যানিটাইজার ব্যবহার ও স্বাস্থ্যবিধি মেনেই চলছে ক্লাস।
সন্দীপ বাবু জানালেন, আম্বা গ্রামের বেশিরভাগ মানুষই ছোট চাষি কিংবা দিনমজুর। স্কুল বন্ধ কিন্তু প্রাইভেট টিউটার দেবার সামর্থ অনেকের নেই। সেইসব ছাত্রছাত্রীরা যাতে স্কুলছুট না হয় সেকারণেই তাঁর এই উদ্যোগ বলে জানান সন্দীপ বাবু। তাঁকে সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছেন অনেকেই।  তার বাড়ি থেকে আট কিলোমিটার দূরে খন্ডঘোষ ব্লকেরই কুলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক তিনি। সোশাল মিডিয়ার মাধ্যমে তার এই “কালভার্ট স্কুলের” কথা স্কুলের শিক্ষকদের জানাতেই তারাও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। কেউ মাস্ক, কেউ স্যানিটাইজার, কেউ চকলেট আবার কেউবা পঠন পাঠনের সরঞ্জাম পাঠিয়েছেন ছাত্রছাত্রীদের জন্য।

See also  ‘লাল ঝাণ্ডা’ পুঁতেদিয়ে জোরপূর্বক তৃণমূল নেতার জমি দখল করলেন তৃণমূল নেত্রী

সন্দীপবাবুর মহৎ এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে তাঁকে সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছেন তাঁর স্কুলের আরেক শিক্ষক অরিন্দম পাঁজা। সন্দীপ বাবুর সাথে নিয়মিত ছাত্রছাত্রীদের পড়াচ্ছেন তিনিও। শিক্ষক অরিন্দম পাঁজা জানালেন, সন্দীপ স্যার এত ভাল উদ্যোগ নিয়েছেন যে তার এই উদ্যোগকে সাধুবাদ না জানিয়ে থাকতে পারলাম না। তাই তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসা। শুধু আম্বা গ্রাম নয় তার পাশের গ্রাম গুঁইর গ্রামের ছাত্রছাত্রীরাও আসছেন এই কালভার্ট স্কুলে। গুঁইর ও আম্বা গ্রামের বাসিন্দারা মাষ্টারমশাই এই উদ্যোগকে সাধুবাদ ও ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

স্কুলের পড়ুয়া অর্পিতা ধাড়া, বিশ্বজিৎ ধাড়ারা বলেন, আগে প্রতিদিন বিকালে চকলেট নিতে আসতাম। এখন পড়াশুনার সাথে সাথে চকলেট, মাস্ক, স্যানিটাইজার পাচ্ছি। অনেকে বন্ধুও হয়েছে। ভালো লাগছে। এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন স্থানীয় বিধায়ক নবীনচন্দ্র বাগ। তিনি বলেন, বাচ্ছাদের শিক্ষার জগতে ধরে রাখার এই কর্মকান্ড সাধুবাদযোগ্য। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সুরক্ষার দিকটি খেয়াল রাখতে হবে।
সন্দীপ বাবু জানালেন,  মূলত পিছিয়ে পরা পরিবারের ছেলেমেয়েদের জন্য ভেবেই এই উদ্যোগ নিয়েছিলাম।  তবে অনেকেই আসছেন,  সবাইকে স্বাগত। সকলকে মাস্ক পরিয়ে, নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে, স্বাস্থ্যবিধি মেনেই ক্লাস চলছে।

krishna Saha

আমার নাম কৃষ্ণ কুমার সাহা, আমি ফুল টাইম সাংবাদিকতা করি।গত ৮ বছর ধরে এই পেশায় আছি