প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় বর্ধমান ১৯ জুন
দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে যেসব দুর্নীতিগ্রস্তরা নির্দল হয়ে মনোনয়ন জমা দিয়েছিল তাঁদেরই তৃণমূলের প্রতীক দিতে চাইছেন দলের বিধায়িকা শম্পা ধারা। এমন অভিযোগ এনে সোমবার বিক্ষোভে ফেটে পড়েন পূর্ব বর্ধমানের রায়না ২ ব্লক তৃণমূলের নেতা ও কর্মীরা।এর জবাবদিহি চেয়ে লেখা লিফলেট হাতে নিয়ে পঞ্চায়েত ভোটে প্রতিদ্বন্দী তৃণমূলের বহু প্রার্থীও ওই বিক্ষোভে সামিল থাকেন। তাঁরাও বিধায়িকা শম্পা ধারার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে মুখর হন। আর পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন দাখিল পর্ব শেষ হতে না হতেই তৃণমূলের কোন্দল এইভাবে প্রকাশ্যে চলে আসায় বেজায় উৎফুল্ল রায়নার বিরোধী শিবির।
মনোনয়ন দাখিল পর্ব মেটার পর সোমবার থেকে শুরু হয়েছে মনোনয়ন প্রত্যাহার পর্ব। একই সাথে চলছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পূরণ করা নির্দিষ্ট ‘ফর্ম’ গ্রহন করে দলীয় প্রার্থীদের প্রতীক প্রদান।
এমন দিনেই দলের প্রতীক পাওয়া নিয়ে রায়না ২ ব্লকের তৃণমূল প্রার্থী ও নেতা কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ মাত্রা ছাড়ায়।এদিন রীতিমতো সাংবাদিক বৈঠক করে রায়না ২ ব্লকের তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা হুমকি দেন,“প্রতীক প্রদান নিয়ে কোনরকম দ্বিচারিতা হলে তাঁরা পদত্যাগ করবেন“।
ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি অসীম পাল বলেন,’দলের নির্দিষ্ট করে দেওয়া প্রার্থীরা বিভিন্ন আসনে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন।তা জেনেও দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে অনেকে নির্দল হয়ে মনোনয়ন দাখিল করেন। এখন আবার আমাদের বিধায়িকা শম্পা ধারা বেশকিছু দুর্নীতিবাজ নির্দলকেই দলীয় প্রতীক দিতে চাইছেন। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে এটা কি করে হতে পারে! রাজ্য নেতৃত্ব তো জানিয়ে দিয়েছে ,নির্দলের মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিতে । নির্দলরা মনোনয়ন প্রত্যাহার না করলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারিও দলের রাজ্য নেতৃত্ব দিয়েছেন।
এত কিছুর পরেও রায়না ২ ব্লকে নির্দলরা কি করে দলের প্রতীক পেতে পারে ?এমনটা হলে রায়না ২ ব্লকে দল চরম বিড়ম্বনায় পড়বে বলে অসীম পাল মন্তব্য করেন।
আরও এক ধাপ এগিয়ে ব্লক তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক মুন্সি হাসিবুর রহমান বলেন,’তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কমাণ্ড অভিষেক বন্দোপাধ্যায় তাঁর নবজোয়ার কর্মসূচি থেকেই ঘোষণা করেছিলেন, যোগ্য ব্যক্তিদের পঞ্চায়েত ভোটে প্রার্থী করে দল তাঁদের নামের তালিকা প্রকাশ করবে। সেইমত দল আমাদের ব্লকের যোগ্য প্রাথীদের নামের তালিকা পাঠায় ।সেই তালিকা অনুযায়ী দলের প্রার্থীরা মনোনয়ন জমা করেদেয় ।তারই মধ্যে দলের ওইসব প্রার্থীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতিগ্রস্ত বেশকিছু তোলাবাজ মনোনয়ন দাখিল করে। এখন দলের নির্দিষ্ট করেদেওয়া প্রার্থীদের পরিবর্তে দুর্নীতিবাজদের দলের প্রতীক দিয়ে প্রথী করাতে চাইছেন দলেরই বিধায়িকা শম্পা ধারা। হাসিবুর রহমান এও বলেন,রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশ মতো দলের জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ও দু’দিন আগে জানিয়ে দিয়েছেন,অফিসিয়াল তালিকার প্রার্থীরাই থেকে যাবেন। নির্দলদের
মনোনয়ন প্রত্যাহার করেনেওয়রও নির্দেশ দেন জেলা সভাপতি। এরপরেও নির্দলরা যদি দলের প্রতীক পায় তাহলে ব্লকে দলের অনেক নেতাই
সব পদ থেকে পদত্যাগ করবে বলে হাসিবুর রহমান হুঁশিয়ারি দিয়েছেন’ । আর দলের প্রার্থী হয়ে যাঁরা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাঁরা স্পষ্ট জানিয়েদেন,তাঁদের নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হলে পস্তাতে হবে।
এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া পাবার জন্য রায়নার বিধায়িকা শম্পা ধারা ফোন নম্বারে একাধীকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেন নি। দলের জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন,
যাঁরা মনোনয়ন দাখিল করেছেন তাঁদের দল যতক্ষণ না পর্যন্ত প্রতীক দিচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত তাঁরা সবাই নির্দল প্রার্থী । রায়না ২ ব্লকে দলের প্রার্থী তালিকা অনুযায়ী সবাই মনোনয়ন জমা দিয়েছে ঠিকই । তবে তাঁদের সবাই যে দলের প্রতীক পাবে এমনটা নয়।কারণ দলের ঘোষিত প্রার্থী তালিকার মধ্যেও কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। অনেক সিটে দলের ঘোষিত প্রার্থী তালিকার বাইরে আরো ভালো প্রার্থী পাওয়া গিয়েছে। তাঁদেরই সম্ভবত দলীয় প্রাথী হিসাবে প্রতীক দেওয়া হবে। এদিন রাতের মধ্যে রায়না ২ ব্লকের সকল দলীয় প্রার্থীথের প্রতীক দিয়েদেওয়া হবে“। তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাস বলেন,’দল ভেবেচিন্তে যাঁদের প্রার্থী করেছে। তারই প্রতীক পাবে’।
এইসব শোনার পর জেলা বিজেপি নেতা মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র বলেন,“যেমন দল তেমন তার প্রার্থী তালিকা । যে দলে শৃঙ্খলা বলে কিছু নেই,সেই দলের প্রার্থী অদল বদল হয়ে যাওয়টাও আশ্চর্যের নয়।তোলাবাজরাই তৃণমূলের সম্পদ। বড় মাপের তোলাবাজের সন্ধান পেয়েই হয়তো তৃণমূল নেতৃত্ব
তাদের ঘোষিত প্রার্থি তালিকায় বদল আনলো । রায়না ২ ব্লকের তৃণমূল নেতাদের কথাতেও সেটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে“। আর সিপিএমের জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য মির্জা আখতার আলী বলেন,’আসলে সবটাই বখরার ব্যাপার । তৃণমূলের ভাণ্ডারে যে যত বখরা দেবে তার গুরুত্ব তত বেশী
হয়তো ভালো বকরা দেবার লোক পেয়েছে ,তাই তাকেই এখন প্রার্থী হিসাবে বেছে নিচ্ছে“।