পূর্ব বর্ধমানের কালনা স্টেশনের কাছে রেল লাইনের ধার থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর মেধাবী ছাত্রী অঙ্গনা হালদারের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। ঘটনাটি নিয়ে আত্মহত্যা নাকি পরিকল্পিত হত্যা – এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। অঙ্গনার মায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে জিআরপি তদন্ত শুরু করেছে।
মৃত্যুর আগের মায়ের কাছে ফোন
অঙ্গনা হালদার, যাকে সবাই পিউ নামে চিনতো, মৃত্যুর আগে তার মাকে ফোন করে জানিয়েছিল, “ওরা আমাকে বাঁচতে দেবেনা মা।” ফোনের কিছুক্ষণের মধ্যেই কালনা স্টেশনের কাছ থেকে তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার হয়, যা নিয়ে তৈরি হয়েছে রহস্যময় পরিস্থিতি।
দুর্ঘটনা ও পুনর্বাসনের গল্প
দুই বছর আগে এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় অঙ্গনা তার বাবাকে হারায়। সেই দুর্ঘটনায় অঙ্গনাও গুরুতরভাবে আহত হয়েছিল এবং প্রায় দুই বছর চিকিৎসার পর সে পুরোপুরি সুস্থ হয়। সেই ঘটনা অঙ্গনার মনের ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছিল এবং সুস্থ হওয়ার পর সে উচ্চমাধ্যমিকে ভালো ফলাফল করার স্বপ্ন দেখেছিল।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শেষদিনের ঘটনা
কালনার কৃষ্ণদেবপুর হাই স্কুলে দ্বাদশ শ্রেণীতে পড়ছিল অঙ্গনা। ইংরেজি বিষয়ে প্রাইভেট টিউটরের কাছে পড়তে গিয়ে সে হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যায়। সেদিন সে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই প্রাইভেট টিউটরের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে বেরিয়ে যায় এবং কিছুক্ষণ পরেই তার মাকে ফোন করে আশঙ্কার কথা জানায়।
মায়ের অভিযোগ: পরিকল্পিত হত্যা
অঙ্গনার মা রিংকু হালদার জিআরপিতে লিখিতভাবে অভিযোগ করেছেন যে তার মেয়েকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। তার দাবি, অঙ্গনার পক্ষে অন্ধকারে রেল লাইনের সেই স্থানে একা যাওয়া সম্ভব নয়। অঙ্গনার কাকা শরবিন্দু হালদারও একই দাবি করেন যে, অঙ্গনা দৃঢ়চেতা মেয়ে ছিল এবং আত্মহত্যা করার মতো মনোভাব তার ছিল না।
জিআরপির পদক্ষেপ ও তদন্ত
রেল স্টেশন এলাকার সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, অঙ্গনা একা স্টেশনের মধ্যে ঘুরছিল। সিসিটিভিতে তার সাথে অন্য কোনো ব্যক্তিকে দেখা যায়নি। কালনা জিআরপির ওসি রফিকুল ইসলাম জানান, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসার পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।
এলাকাবাসীর প্রতিক্রিয়া
এলাকার বাসিন্দারা অঙ্গনার এই মর্মান্তিক মৃত্যুতে শোকাহত। ধাত্রীগ্রাম গ্রামের বাসিন্দারা এই ঘটনায় গভীর ভাবে বেদনাহত এবং স্থানীয় পুজোতেও শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
মন্ত্রী ও স্থানীয় প্রতিনিধিদের সমবেদনা
রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ এবং কালনার বিধায়ক দেবপ্রসাদ বাগ অঙ্গনার বাড়িতে গিয়ে তার মায়ের সাথে দেখা করে সমবেদনা জানিয়েছেন। তারা আশ্বাস দিয়েছেন যে এই ঘটনার সঠিক তদন্ত হবে এবং প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটন হবে।
অঙ্গনা হালদারের রহস্যময় মৃত্যুর ঘটনাটি বর্তমানে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। আত্মহত্যা নাকি পরিকল্পিত হত্যা, এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে পুলিশ। মৃত্যুর প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটনের মাধ্যমে যেনো ন্যায়বিচার হয়, এটাই এলাকাবাসীর একান্ত চাওয়া।