আবহাওয়া দক্ষিণবঙ্গ শিক্ষা লাইফ স্টাইল স্বাস্থ্য ভ্রমন ধর্ম কৃষি কাজ ক্রাইম

কার্তিক সংক্রান্তিতে ‘মুঠ পুজো’: নবান্নের সূচনা-উৎসব আজও বেঁচে আছে পূর্ব বর্ধমানের গ্রামবাংলায়

krishna Saha

Published :

WhatsApp Channel Join Now

মুট পুজো—বাংলার গ্রাম্য জীবনের এক অতি প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী লৌকিক উৎসব। প্রধানত কৃষক পরিবারগুলিতে প্রচলিত এই পূজা অনুষ্ঠিত হয় কার্তিক সংক্রান্তির দিনে, অগ্রহায়ণের প্রথম প্রভাতে। বিশ্বাস, মাঠের সোনালি ধান গোলায় তোলার আগে লক্ষ্মীর আশীর্বাদ পেতে এবং ফসলকে সব বিপদ থেকে রক্ষা করতেই কৃষকরাই এই আচার পালন করেন।

গ্রামবাংলায় প্রচলিত বচন—“নবীন ধান্যে হবে নবান্ন”। তবে নবান্নের সেই শুভক্ষণে পৌঁছনোর প্রস্তুতি শুরু হয় কার্তিক পেরোলেই। খনার বচনই বলে, “বেদের কথা না হয় আন, তুলা বিনা না পাকে ধান”। অর্থাৎ তুলা বা কার্তিক না গেলে ধান পাকেই না। তাই নবান্ন উৎসবের আনুষ্ঠানিক সূচনা হয় অঘ্রাণের পয়লা তারিখে, শালিধান্যের ক্ষেত্র-উৎসবের মধ্য দিয়ে।

তার আগের দিন কার্তিক সংক্রান্তিতে অনুষ্ঠিত হয় নবান্নের দেবতা ‘নবানে কার্তিক’-এর পূজা। লোকবিশ্বাসে কার্তিকই শস্যরক্ষার দেবতা—বিশেষত কাটোয়া মহকুমা ও উত্তরবঙ্গের কোচবিহার অঞ্চলে এই বিশ্বাস আরও গভীর। মাঠে তখন ধান্যলক্ষ্মীর সমাহার, সোনালি ফসল ভূমিলক্ষ্মীর পায়ে নিবেদনের জন্য প্রস্তুত।

এই দিনই কৃষক কেটে আনেন ‘আকবোল ধান’—যে ধান আগেই লক্ষ্মীপূজার জন্য নিবেদিত বলে ঘোষিত। আড়াই মুঠো ধান গোছসহ কেটে তা ‘মুঠ’ হিসেবে বাড়িতে আনা হয়। কৃষকের ভাষায়—‘মুঠ আনা’। সাধারণ মানুষের পরিশ্রমে যেন ধরণীর উপহার—‘নজরানা’।

এদিন গ্রামের গৃহস্থ পুরুষ মাথায় করে ধান্যলক্ষ্মীকে ঘরে তুলে আনার যে প্রথা, তা আজও অটুট পূর্ব বর্ধমান জেলার দক্ষিণ দামোদর এলাকার গ্রামে গ্রামে। আধুনিকতার ছোঁয়া যতই লাগুক, মাটির টানে, ফসলের আশীর্বাদে এই উৎসব আজও একই আবেগে বেঁচে আছে বঙ্গজীবনের অন্তরে।

See also  করোনায় মৃত্যু হয়েছে সন্দেহে শ্মশান থেকে বৃদ্ধার মৃতদেহ তুলেনিয়ে গেল পুলিশ

krishna Saha

আমার নাম কৃষ্ণ কুমার সাহা, আমি ফুল টাইম সাংবাদিকতা করি।গত ৮ বছর ধরে এই পেশায় আছি