পূর্ব বর্ধমানের গলসি থেকে চাঞ্চল্যকর ভিডিও প্রকাশ্যে এসেছে। দরজা বন্ধ কেবিনে চলছে কাড়ি কাড়ি টাকার ভাগাভাগি — আর তাতেই তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি।
ভিডিওতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, ব্যাগে করে টাকা ভরে এনেছেন গলসি ১ পঞ্চায়েত সমিতির সহকারী সভাপতি অনুপ চ্যাটার্জ্জী। তিনিই টেবিলে নামিয়ে দিচ্ছেন থোকা থোকা টাকার গোছা। এরপর দেখা যায়, সেই টাকা গুনে ভাগ করছেন পঞ্চায়েত সমিতির কৃষি কর্মাধ্যক্ষ পার্থ মণ্ডল। বিধায়ক নেপাল ঘরুইও উপস্থিত ওই কেবিনে, তিনিও টাকার ভাগ নিচ্ছেন বলে অভিযোগ।

ভিডিওতে আরও দেখা যাচ্ছে, বিধায়কের পাশে বসে সিগারেটে টান দিতে দিতে ডাইরিতে কিছু লিখছেন অনুপ চ্যাটার্জ্জী। প্রশ্ন উঠছে— তিনি কি টাকার হিসাব লিখছেন?
তৃণমূল নেতাদের নামে কাড়ি কাড়ি টাকার অভিযোগ নতুন নয়। এর আগেও রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা উদ্ধার করেছে ইডি। অভিযোগ, জেল খেটেছেন একাধিক তৃণমূল নেতা।
তবে এই সিসিটিভি ফুটেজের সত্যতা আমরা যাচাই করিনি। তবুও প্রশ্ন উঠছে— ওই থোকা থোকা টাকা এলো কোথা থেকে? কেনই বা গুনে গুনে ভাগ করা হচ্ছিল? সাতটি বান্ডিলে মোট প্রায় লক্ষাধিক টাকা ছিল বলে অনুমান।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমানে গলসি ১ পঞ্চায়েত সমিতির সমস্ত ক্ষমতা অনুপ চ্যাটার্জ্জীর হাতেই। ভোটাভুটির মাধ্যমে তাঁকেই দ্বিতীয়বার সমিতির চেয়ারে বসিয়েছেন পার্থ মণ্ডল। পার্থ বিধায়ক নেপাল ঘরুইয়ের ঘনিষ্ঠ সহযোগী বলেই পরিচিত। সমিতির যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেয় এই অনুপ–পার্থ জুটি। পার্থকে আবার রাজ্য সরকার পুলিশি নিরাপত্তাও দিয়েছে।
তাহলে কি এই কাড়ি কাড়ি টাকা সমিতির কাটমানির টাকা? বিরোধীদের অভিযোগ, “এই নিরাপত্তা হয়তো কাটমানির টাকাকেই নিরাপদে বহনের জন্য”! উল্লেখ্য, বছর দুয়েক আগে বিনা টেন্ডারে, এমনকি কাজ না করেই মিড-ডে-মিল রান্নাঘর সংস্কারের ১৩,৭১,৯০৫ টাকা পেয়েছিলেন অনুপ চ্যাটার্জ্জীর ঘনিষ্ঠ এক ঠিকাদার বলে অভিযোগ। দুর্নীতির অভিযোগ প্রকাশ্যে আসতেই তড়িঘড়ি করে রান্নাঘর সারাইয়ের কাজ শুরু করেছিলেন তৎকালীন বিডিও দেবলীনা দাস।
ভাইরাল হওয়া ঘটনার ভিডিও নিয়ে তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিজেপি নেতা মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র বলেন, “গলসির বিধায়ক নেপাল ঘড়ুই, গলসি ১ পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি অনুপ চ্যাটার্জী এবং কৃষি কর্মাধ্যক্ষ পার্থ মন্ডল এই তিন ব্যক্তি একটি ঘরের মধ্যে বিপুল পরিমাণ প্রায় কয়েক লক্ষ টাকার বান্ডিল নিজেদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা করছে সেই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে! সেই ভিডিও দেখে বাংলার সাধারণ মানুষের পাশাপাশি আমরাও অবাক!
আমরা বিজেপির পক্ষ থেকে যে দাবি করে আসছিলাম তৃণমূল মানেই কাট মানির টাকা চুরির নেতা। আমরা বারবার এই অভিযোগ করেই আসছিলাম আমাদের অভিযোগের সত্যতা এই ভাইরাল হওয়া ভিডিও। আমরা প্রশাসন এবং ইডির কাছে আবেদন করব আপনারা অবিলম্বে এনাদের জিজ্ঞাসাবাদ করুন”।
ঘটনার প্রতিক্রিয়া জানিয়ে তৃণমূল নেতা দেবু টুডু বলেন, কবে কার ভিডিও সেটা আগে দেখতে হবে। হতে পারে এটা অনেক পুরনো ভিডিও। তবে টাকা- তো মানুষ গুনতেই পারে , আমরা বাড়িতেও টাকা গুনি, অফিসেও টাকা গুনি। কোনো ট্রাং থেকে তো টাকা বের হয়নি বা গাড়ি থেকে টাকা উদ্ধার হয়নি। এটা বিজেপির চক্রান্ত”!