পূর্ব বর্ধমানের ভোটার তালিকা থেকে প্রায় ৫০ হাজার মৃত ভোটারের নাম বাদ পড়তে পারে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। বহু বছর ধরে মৃত ব্যক্তিদের নাম তালিকায় রয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন নির্বাচনে তাঁদের ভোটার কার্ড অপব্যবহারের অভিযোগ উঠেছিল। এবার সেই সুযোগ বন্ধ হতে চলেছে। জেলাজুড়ে জোরকদমে চলছে ভোটার তালিকার ডিজিটাইজেশনের কাজ। এই প্রক্রিয়া শেষ হলে সঠিক চিত্র সামনে আসবে বলে মনে করছে প্রশাসন।
এখনও পর্যন্ত ডিজিটাইজেশনের অগ্রগতি দেখে আধিকারিকদের অনুমান, মৃত ভোটারদের নাম বাদ দিলেই বড় অংশের শুদ্ধিকরণ সম্পন্ন হবে। পাশাপাশি, আরও প্রায় ৫০ হাজার ভোটারকে শুনানিতে ডাক পাঠানো হতে পারে। তবে প্রশাসন সূত্রের দাবি, মৃত ভোটার ছাড়া জেলায় খুব বেশি নাম বাদ যাবে না।
জেলা প্রশাসনের তরফে জানা গিয়েছে, মোট ৪১ লক্ষ ৬৫ হাজার ২৯২টি ফর্ম ভোটারদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ইতিমধ্যেই ৮৩.২৪ শতাংশ ফর্মের ডিজিটাইজেশন শেষ হয়েছে। একাধিক বুথ লেভেল অফিসার (বিএলও) অভিযোগ তুলেছেন, নির্বাচন কমিশনের বিভিন্ন নির্দেশের মধ্যে প্রযুক্তিগত সঙ্কটের ভার তাঁদেরই বহন করতে হচ্ছে। তাঁদের কথায়, একসঙ্গে বহুজন অ্যাপে লগ ইন করলে সার্ভার ডাউন হবে—এটা জানা সত্ত্বেও বিকল্প প্রযুক্তিগত পরিকাঠামোর ব্যবস্থা করা হয়নি। ফলে রাত জেগে কাজ করাই দস্তুর হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবুও, অধিকাংশ বিএলওর প্রচেষ্টায় কাজের বড় অংশ শেষ হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। তাঁদের দাবি, সার্ভার ঠিকঠাক থাকলে অনেক আগেই ডিজিটাইজেশন সম্পূর্ণ করা সম্ভব ছিল।
এদিকে, ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ যাওয়া নিয়ে রাজনৈতিক তরজাও উত্তপ্ত। বিজেপি নেতা মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র জানান,
“আমরা কোনও বৈধ ভোটারের নাম বাদ যাওয়ার পক্ষে নই। কিন্তু যাঁরা অবৈধভাবে তালিকায় ঢুকেছেন, তাঁদের নাম বাদ দেওয়া জরুরি। তৃণমূল মৃত ভোটারদের কার্ড ব্যবহার করে ভুয়ো ভোট দিয়েছে। পাঁচ বছর আগে যাঁরা মারা গিয়েছেন, তাঁদের নামও তালিকায় রয়ে গিয়েছে”।
অন্যদিকে, পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ অপার্থিব ইসলাম বিজেপির অভিযোগকে কটাক্ষ করে আরও জোরালো মন্তব্য করেন। তিনি বলেন,
“এসআইআর নিয়ে বিজেপি নেতারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভুল তথ্য ছড়াচ্ছেন। ওঁরা ভাবছেন ভোটার তালিকা থেকে হাজার হাজার বৈধ নাম বাদ যাবে—এই প্রত্যাশা তাঁদের নিজেরই কল্পনা। আমাদের অবস্থান খুব স্পষ্ট—একটি বৈধ ভোটারের নামও যদি বাদ যায়, আমরা শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলব। রাজ্য নেতৃত্ব আগেই জানিয়ে দিয়েছে, বৈধ ভোটারের অধিকার খর্ব করার যে কোনও চেষ্টা রুখে দেওয়া হবে। মৃত ভোটারদের নাম সংশোধন হবে—এটা স্বাভাবিক। কিন্তু বৈধ ভোটারদের ক্ষেত্রে কোনও অন্যায় হলে প্রশাসন ও কমিশনকে জবাবদিহি করতে হবে”।
প্রশাসন সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, মঙ্গলকোট, রায়না, খণ্ডঘোষ, কেতুগ্রাম, আউশগ্রামের মতো বিধানসভা কেন্দ্রগুলির অধিকাংশ ভোটারের বৈধ নথি রয়েছে। ফলে এই এলাকাগুলিতে শুনানির সংখ্যা তুলনামূলকভাবে অনেক কম হবে বলেই মনে করা হচ্ছে।








