কল্যাণ দত্ত :পূর্ব বর্ধমান
কিঙ্কর মালিক কোনও রাজনৈতিক কর্মী নন, বা তিনি নির্বাচন কমিশনের আধিকারিকও নন, তবে এই নির্বাচনের মরসুমে তিনি যা করেছেন তা পূর্ব বর্ধমান জেলার রাজনৈতিক দল এবং প্রশাসনিক আধিকারিকদের প্রশংসা পেয়েছে সে ৷
৪০ বছর বয়সী পেশায় হকার তার টু-হুইলারে স্ন্যাকস এবং লজেন্স সংগ্রহ করে নিয়ে বর্ধমান শহরের চারপাশে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করে।
কিঙ্কর মালিকের গ্রাম জামালপুর থানার ইটলাতে।
পরিচয়ে এক অন্য হকার। রুজিরুটির টানে হকারি করলেও কাঁধে তুলে নিয়েছেন সমাজের গুরুদায়িত্ব। পেশায় লজেন্স চানাচুর ও মুখরোচক খাবার বিক্রেতা। গাড়িতে করে হকারি করেন জেলার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের কিংকর মালিক নিজেই একটা প্রতিষ্ঠান বলাই বাহুল্য।
হকারি করে জমানো পয়সায় কেনা ছোট দু চাকা গাড়িতে লাগিয়েছে সাউন্ড সিস্টেম। দোকানের প্রচারের বদলে সেখান থেকে সমাজ সচেতনাতার পাঠ দেয় কিংকর। জানা যায় দশটি জেলায় ইতিমধ্যেই ঘুরে ফেলেছে সেই মোটরবাইকে। কখনও তাঁর প্রচার গাড়িতে স্থান পেয়েছে ‘একটি গাছ একটি প্রাণ’ কখনও বা নোংরা আবর্জনা নির্দিষ্ট স্থানে ফেলার শিক্ষা, আবার কখনো সেভ ড্রাইভ সেফ লাইফের মত গুরুত্বপূর্ণ সচেতনতা ।
ভোট পরবর্তী হিংসায় রাজ্যবাসীর কাছে তার আবেদন ছিল, গুজবে কান দেবেন না, হিংসার সাথে নয়, রাজনীতি করুন খুশির সাথে। এখানেই শেষ নয়, সাপে কামড়ালে ওঝার কাছে নয়, নিয়ে যান হাসপাতালে- কিংকরের গাড়ি থেকেই চলে এই সমস্ত সামাজিক প্রচার। খোলা জায়গায় মলত্যাগ করবেন না, গাড়ি চালানোর সময় হেলমেট পড়ার পড়ামর্শ দেন পূর্ব বর্ধমান জেলার জামালপুরের হকার কিঙ্কর । বাইকে পোস্টার লাগিয়ে চলে এই সমস্ত প্রচারপর্ব।
তার মধ্যে রয়েছে সামাজিকতার ছোঁয়া। কিঙ্কর হকারি করে একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান করেছে, যার নাম ইটলা সতীমাতা সেবা সমিতি। যেখানে আশ্রয় সহ আহার পাবে দুঃস্থ- অসহায়, অনাথ মানুষেরা, তবে এইসবের জন্য কোনো মূল্য নেয়না কিঙ্কর। এলাকাবাসীদের জন্য বিনা মূল্যে আইনি সহায়তাও দিতে চায় সে। সারাদিনে ৪০০ টাকা রোজগার করলে ১০০ টাকা তিনি দান করেন দুঃস্থ অসহায়দের উদ্দেশ্যে। ছাত্রছাত্রীদের কেউ ১০ টাকার খাবার খেলে তাদের কাছে নেন ৯ টাকা। একই ছাড়ের নীতি রয়েছে প্রতিবন্ধী মানুষদের জন্যও, তারা ১০ টাকার কিনলে নেন ৪ টাকা।
আগে আখের রস বিক্রি করত কিংকর। দুঃস্থ প্রতিবন্ধীদের বিনামূল্যে আখের রস খাওয়াত সে । ছাত্র-ছাত্রীদের বিশেষ ছাড়ে আখের রস বিক্রি করত। তবে এখন ব্যবসা বদল-এর সঙ্গে সঙ্গে কাঁধে তুলে নিয়েছেন আরও বড় দায়িত্ব, মানুষ সেবার দায়িত্ব। ভবিষ্যতে যাতে থমকে যেতে না হয় মানুষের সেবা থেকে তার জন্য সাহায্যের আবেদন রেখেছে সে।