প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় বর্ধমান ২৩ আগষ্ট
করোনার থাবা থেকে রেহাই পাচ্ছেন না করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেচলা পুলিশ কর্মীরা। শনিবার রাত পর্যন্ত আসা রিপোর্ট আনুযায়ী পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশের ৭৮ জনের করোনা পজিটিভ ধরা পড়েছে ।তার মধ্যে ১৮ জনই জেলার খণ্ডঘোষ থানার পুলিশ আধিকারিক ও কর্মী।তার জেরে রজ্যে প্রথম
তালা পড়লো খণ্ডঘোষ থানায়। পুলিশ কর্মী মহলে সংক্রমণ এত ব্যাপক ভাবে ছড়াতে থাকায় উদ্বিগ্ন জেলা পুলিশের শীর্ষ মহল ।
রাজ্যের অন্যান অংশের পাশাপাশি পূর্ব বর্ধমান জেলাতেও প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা । ইতিমধ্যেই জেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ২ হাজার ছাড়িয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ৩৯ জনের। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি পুলিশ কর্মীরাও করোনার থাবা থেকে রেহাই পাচ্ছেন না ।
স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে , গত শুক্রবার
পুলিশ আধিকারিক ও কর্মী মিলিয়ে খণ্ডঘোষ থানার ৪ জনের করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসে । সেই রিপোর্ট মেলার পরেই উদ্বেগ বাড়ে পুলিশ প্রশাসনের ।সেই কারণে শনিবার থানার পুলিশ অফিসার ও কর্মী মিলিয়ে ১৮ জনের ‘অ্যান্টিজেন টেস্ট ’ হয় । ওই দিন রাতে রিপোর্ট আসলে জানাযায় ১৮ জনের মধ্যে ১৪ জনের রিপোর্ট পজেটিভ । আক্রান্তদের মধ্যে খণ্ডঘোষ থানার অফিসার ইন-চার্জ রয়েছেন । ২৪ ঘন্টার ব্যবধানে খণ্ডঘোষ থানার এতজন পুলিশ কর্মীর করোনা পজিটিভ ধরা পড়ার পরেই থানা ভবনে যাবতীয় প্রশাসনিক কাজকর্ম বন্ধ করেদেওয়া হয় । আক্রান্তদের মধ্যে ৪ জনের করোনা উপসর্গ থাকায় তাঁদেরকে ভর্তি করা হয়েছে বর্ধমানের কোভিড হাসপাতালে ।দেড় মাসের ব্যবধানে অফিসার ইন-চার্জের দ্বিতীয় বার করোনা পজিটিভ ধরা পড়ায় তাকে চিকিৎসার জন্য কলকাতার হাপাতালে পাঠানো হয়েছে ।বাকি আক্রান্তদের ‘হোম আইসোলেশনে’ পাঠানো হয় ।এরপর রাত থেকেই তালা পড়েযায় খণ্ডঘোষ থানায় । থানার অদূরে থাকা একটি অনুষ্ঠান বাড়ি ভাড়া নিয়ে এখন সেখান থেকেই প্রসাসনিক কাজকর্ম চালানো হচ্ছে ।
জেলার পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন ,‘পরিষেবা পেতে সাধারণ মানুষের যাতে কোন অসুবিধা না হয় তার সমস্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে । তিন দিনের মধ্যে খণ্ডঘোষ থানা ভবন জীবানু মুক্ত করা যাবে বলে মনে করা হচ্ছে । ’জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে ,পূর্ব বর্ধমান জেলায় করোনা আক্রান্ত পুলিশ কর্মীর সংখ্যা এখন পর্যন্ত প্রায় ৮০ ছুইছুই । পুলিশ কর্মীর করোনা পজিটিভ ধরা পড়েছে ।আক্রান্তদের মধ্যে জেলা পুলিশের দুই শীর্ষ আধিকারিক ছাড়াও ওসি পদ মর্যাদার অফিসাররাও ছিলেন । সম্প্রতি মেমারি থানা অধীন পালসিট পুলিশ ফাঁড়ির ৯ পুলিশ কর্মীর এক সঙ্গে করোনা পজিটিভ ধরা পড়ায় ফাঁড়ি বন্ধ করে দিতে হয়েছিল । এবার করোনার থাবায় প্রায় ৬৮ বছরের পুরানো খণ্ডঘোষ থানায় এই প্রথম তালা পড়লো ।পুলিশ কর্মী বিহীন তালা বন্ধ খণ্ডঘোষ থানা দেখে এদিন কার্যতই হতবাক হন খণ্ডঘোষের প্রবীন নাগরিকরা ।
খণ্ডঘোষের জেলাপরিষদ সদস্য অপার্থিব ইসলাম এদিন বলেন ,ছোট বয়স থেকে কোন দিন দেখিনি তালা বন্ধ খণ্ডঘোষ থানা ।আপার্থিব বাবু বলেন , ‘বর্ধমানের ইতিহাস গবেষক সর্বজিৎ যশের সঙ্গে কথা বলে তিনি জেনেছেন ,১৮৮৬ সালে আরামবাগ পরিচিত ছিল জাহানাবাদ নামে । আজকের খণ্ডঘোষ থানা তদানিন্তন সময়ে ছিল পুলিশ ফাঁড়ি । ১৯৫২ সালে খণ্ডঘোষ পুলিশ ফাঁড়ি খণ্ডঘোষ থানায় উন্নিত হয় । ’সেই থেকে কোনদিন খণ্ডঘোষ থানায় তালা পড়েনি ।কিন্তু করোনার থাবায় রাজ্যে মধ্যে প্রথম তালা পড়লো খণ্ডঘোষ থানা । অপার্থিব ইসলাম আরও বলেন এখন সারা বাংলার পুলিশ করোনার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে জীবন বাজি রেখে।তারই নিদর্শন খণ্ডঘোষ থানা। খণ্ডঘোষের মানুষ কে করোনা থেকে সুরক্ষিত রাখার লড়াই চালাতে গিয়েই খণ্ডঘোষ থানার ১৮ জন কর্মি করোনা আক্রান্ত হলেন। রাজ্যের করোনা যোদ্ধা পুলিশ কর্মীরা যাতে সুস্থ শরীরে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে পারে তার জন্য সাধারণ মানুষ কে পুলিশের বার্তা মেনে চলার অনুরোধ জানিয়েছেন অপার্থিব ইসলাম।