কোলে নাড়ুগোপাল, কপালে তিলক, মুখে হরিনাম — ভক্তির আবহে নিজেকে ধর্মপরায়ণা ভক্তা হিসেবে পরিচিত করতেন এক মহিলা। তীর্থস্থান থেকে মন্দির, হরিনাম সংকীর্তনের আসর— সর্বত্র তাঁর অবাধ যাতায়াত ছিল। কিন্তু সেই ‘ধর্মপ্রেম’ই শেষ পর্যন্ত পরিণত হল প্রতারণার মুখোশে।
অভিযোগ, ভক্ত সেজে প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা হাতিয়ে উধাও ওই মহিলা। বুধবার কাটোয়া থানায় নালিশ করেন চরপানুহাট এলাকার ৭৭ বছরের অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষিকা স্বাতী মণ্ডল। তাঁর অভিযোগ, উপাসনা তেওয়ারি ওরফে কল্পনা নামে ওই মহিলা বৃন্দাবনে বাড়ি কিনে দেওয়ার নাম করে তাঁর কাছ থেকে ৬ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা নিয়েছিলেন। কিন্তু পরে আর বাড়ি কেনা তো দূরের কথা, উপাসনাদেবী এলাকা থেকেই উধাও হয়ে যান।
শুধু স্বাতীদেবী নন— পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কাটোয়া, কেতুগ্রাম, দাঁইহাটসহ একাধিক এলাকা মিলিয়ে আরও বেশ কয়েকজনের কাছ থেকে উপাসনা প্রায় ৩৫–৪০ লক্ষ টাকা প্রতারণা করে পালিয়েছেন। প্রতারিতদের অনেকে ইতিমধ্যেই পুলিশের কাছে নালিশ করেছেন।
স্বাতীদেবী জানান, “উপাসনা নামের ওই মহিলা তাঁর মেয়ে শুক্লা ভকত ও নাতি সুজয় ভকতকে নিয়ে মণ্ডলহাটে ভাড়াবাড়িতে থাকতেন। মন্দিরে আলাপ হয়েছিল। কোলে গোপাল নিয়ে আসতেন, কথা বলতেন ধর্ম নিয়ে। ধীরে ধীরে বাড়িতে আসা–যাওয়া শুরু হয়। একদিন বলেন, বৃন্দাবনে ভালো জায়গায় বাড়ি কিনে দেবেন, কেবল অগ্রিম টাকা লাগবে। আমি বিশ্বাস করে ৬ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা দিই। তারপর থেকে আর দেখা নেই। পরে জানতে পারি, আরও অনেকের সঙ্গেও একই কাজ করেছে।”
পুলিশ সূত্রে খবর, স্থানীয়ভাবে উপাসনাদেবী হরিনাম সংকীর্তনের দলে সক্রিয় ছিলেন। তাঁর ধর্মীয় ভাবভঙ্গি ও আচার-অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের মাধ্যমে তিনি সমাজে আস্থা ও সুনাম অর্জন করেছিলেন। সেই বিশ্বাসকেই কাজে লাগিয়েই তিনি একের পর এক মানুষকে ফাঁদে ফেলেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
কাটোয়া থানার এক আধিকারিক জানান, “অভিযোগ পেয়ে আমরা তদন্ত শুরু করেছি। প্রাথমিকভাবে প্রতারণার অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। অভিযুক্তের সন্ধানে একাধিক জায়গায় তল্লাশি চলছে। তিনি এখন এলাকা ছেড়ে গা ঢাকা দিয়েছেন।”
এদিকে, প্রতারিত আরও কয়েকজন মহিলা পুলিশের কাছে নালিশ জানিয়েছেন— তাঁদের সন্তানদের চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে একই মহিলা বিপুল পরিমাণ টাকা নিয়েছেন।








