পারমিতা মন্ডল
————————
অভিজ্ঞতা আর তারুণ্যের মিশেল বরাবরই চোখে পড়ে আইপিএল এ। আইপিএল এ যেমন অন্যান্য দল ,উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে দিল্লি ক্যাপিটালস ও রাজস্থান রয়্যালসের মতো দল যারা তারুণ্যের জোয়ারে ভাসতে পছন্দ করে, তেমনিই চেন্নাই সুপার কিংস বরাবরই অভিজ্ঞতাকে প্রাধান্য দিয়ে এসেছে। এই দল চার বারের আইপিএল ট্রফি নিজের নামে করেছে। কিন্তু অভিজ্ঞতাকে প্রাধান্য দেওয়ার কারণে বরাবরই চেন্নাইকে অনেক কু-কথারও সম্মুখীন হতে হয়েছে। আইপিএল মরশুম চলাকালীন অনেক নেটিজেনরা ইয়েলো-আর্মি কে বিদ্রুপ করে বলে ‘ ড্যাডস আর্মি ‘ । এই দলের বেশির ভাগ ক্রিকেটারদের ৩৫ এর উর্দ্ধে বয়স হওয়ার কারণে অনেকেই তাদের ‘ বুড়ো ‘ বলে সম্বোধন করেন। কিন্তু এই ধরনের মন্তব্য করার সত্ত্বেও ‘ ইয়েলো আর্মি ‘ এইসব কথাগুলো কে উপেক্ষা করে বারবার নিজেদের সেরাটা দিয়ে এসেছে । তারা দেখিয়ে দিয়েছে আইপিএল যদি শুধুমাত্র তারুণ্যের খেলাই হয়ে থাকে, তাহলে তারুণ্যের দের থেকে তাঁরাও কম যান না। খেলাতে অভিজ্ঞতাই বরাবর প্রাধান্য পেয়ে এসেছে তাদের কাছে।
চেন্নাইয়ের প্রধান ক্রিকেটারদের দিকে চোখ বোলানো যাক –
১. অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি।

আইপিএল এ চেন্নাইয়ের সাথে ধোনির পথ চলা সেই ২০০৮ সাল থেকে। চেন্নাইয়ের সাথে ধোনির সম্পর্ক দীর্ঘ ১৪ বছরের । এখন আইপিএল ২০২২ মরশুমে ও অধিনায়ক ধোনি। ৪০ – এ এসেও মাঠের বাইশ গজে এখনও দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন মাহি । ধোনি শুধুই একজন ব্যাটসম্যান বা উইকেটকিপার নন, ক্রিকেট মহল সব চেয়ে বেশি আলোকিত মাহির মস্তিষ্কের বিচ্ছুরণে। এখন সেই আলো ছড়িয়ে পড়েছে টি-২০ নামক নতুন প্রজন্মের খেলাতেও। কিন্তু বাইশ গজে আজও মাহি বোলারদের কাছে দুঃস্বপ্ন তার অসংখ্য অসংখ্য প্রমান স্বচক্ষে দেখা গেছে আইপিএল এ । যার চাক্ষুষ প্রমাণ গোটা বিশ্ব- দর্শক।
২. সিএসকে দলে প্রধান ক্রিকেটার হিসেবে উঠে আসে আম্বাতি রায়াডুর নাম যার বয়স বর্তমানে ৩৬ বছর। ব্যাট হাতে তিনি রীতিমতো রাজ করেন খেলার মাঠে, প্রতিবছর ‘ অরেঞ্জ ক্যাপের ‘ দৌড়ের তালিকায় নাম থাকে এই তামিলনাড়ুর ক্রিকেটারের। চলতি আইপিএল মরশুমে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর এর বিরুদ্ধে ১৬ তম ওভারে বল করছিলেন স্যার জাদেজা। জাদেজার করা চতুর্থ বলে লেগ সাইডে শট খেলতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে ফেলেন আরসিবির আকাশদীপ । সেই ম্যাচে স্বজোরে ছুটে গিয়ে ডান- দিকের শূণ্যে গা ভাসিয়ে এক দুর্দান্ত ক্যাচ নেন রায়াডুর যা অবিশ্বাস্য ছিল। রায়াডুর নেওয়া এই ক্যাচের প্রবল প্রশংসা করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে এই ক্যাচ আইপিএল মরশুমে নেওয়া সেরা ক্যাচের মধ্যে একটি।
৩. সিএসকে দলে প্রধান ক্রিকেটার হিসেবে যার ভূমিকা চিরকালই অনস্বীকার্য তিনি আর কেউ নন তিনি হলেন ক্যারিবিয়ান তারকা ডোয়েন ব্রাভো । যার বয়স বর্তমানে ৩৮ বছর। অলরাউন্ডার হিসেবে DJ ব্রাভোর কোনো জবাব নেই। ব্যাট হাতে তিনি যেমন বিশাল ছক্কা হাঁকান ঠিক সেরকমই হাতে বল নিয়ে প্রায় প্রত্যেক ম্যাচেই তুলে নেন ব্যাটসম্যানদের উইকেট। চলতি আইপিএল এ কেকেআর এর বিরুদ্ধে হওয়া ম্যাচে বল হাতে তিন- উইকেট নিয়েছিলেন ব্রাভো । যার সুবাদে আইপিএল ইতিহাসে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারির তালিকায় লাসিথ মালিঙ্গার সঙ্গে একই আসনে বিরাজমান হয়েছিলেন তিনি । মালিঙ্গা ও ব্রাভো দুজনেরই উইকেট সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল ১৭০ । শীর্ষে ওঠার জন্য দরকার ছিল আর এক উইকেটের । আর লখনউ সুপার জায়ান্টসের বিরুদ্ধে হওয়া ম্যাচে দীপক হুডাকে আউট করে আইপিএল এর ইতিহাসে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি হলেন ব্রাভো । মালিঙ্গাকে পিছনে ফেলে এক নম্বর জায়গা দখল করলেন এই ক্যারিবিয়ান তারকা ।
আসলে ক্রিকেটে ফিটনেসটা যেমন জরুরি ঠিক সেরকমই জরুরি মনে আত্মবিশ্বাস বজায় রাখা । দলের প্রতিটা প্লেয়ারের ওপর আস্থা রাখা । যাতে করে দলের ভিত আরও মজবুত হয় , এই আত্মবিশ্বাসই দলের প্রতিটা খেলোয়াড়ের মনে শক্তি যোগায় , আর এটাই খেলায় ফিটনেস বজায় রাখার মূল মন্ত্র।
কিন্তু সিএসকে যে দল কিনা ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন, যে দল কিনা প্রতি আইপিএল মরশুমে দেখার মতো কীর্তিমান সব নজির গড়ছে, তার সত্ত্বেও তাদের ‘ বুড়ো ‘ – এই কটূকথার শিকার হতে হচ্ছে ।
কে বলেছে, আইপিএল শুধু তরুণ রক্তের খেলা ! সেই ধারনাটা কে প্রতিবছরই বাবুঘাটের গঙ্গায় ভাসিয়ে দিয়ে আসেন ধোনি, ব্রাভোরা । ইডেনের মাঠে যখন খেলা হয় তখন ঠিক বোঝা যায় না খেলাটা আসলে চেন্নাইয়ের চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে হচ্ছে নাকি ইডেনে । দেখে মনে হয় যেন গ্যালারি জুড়ে ফুটে রয়েছে অসংখ্য অসংখ্য সূর্যমুখী।
অনেকে হয়তো অবাক হচ্ছেন দেখে যে, ধোনির ‘ ড্যাডস আর্মি ‘ সফল হচ্ছে কি করে ? আসলে বয়সটাতো একটা সংখ্যা মাত্র যেকোনো খেলাতেই ফিটনেস বজায় রাখাটাই সব , বয়সের মতো একটা সংখ্যা কখনও ই একজন খেলোয়াড়ের ফিটনেসে ছাপ ফেলতে পারে না । আর চেন্নাই সুপার কিংস এর মতো অভিজ্ঞ টিম এর কাছে তো না- ই ।
আর তার কারণ তাদের রাজা ধোনি যার হাত ধরে প্রতি বছর তৈরি হয়ে থাকে নতুন টেমপ্লেট – যে কি ভাবে খেলতে হয় আইপিএল।