ইন্দাস, বাঁকুড়া: সাড়ে তিনশো বছরের ঐতিহ্যকে সঙ্গে নিয়েই এবছরও মহাসমারোহে সম্পন্ন হলো বাঁকুড়া জেলার ইন্দাস থানার মঙ্গলপুর সাহানা পাড়ার সার্বজনীন দুর্গোৎসব। স্থানীয় মিলন সংঘ ক্লাবের উদ্যোগে এবং সমগ্র গ্রামবাসীর সহযোগিতায় প্রাচীন এই পুজো আজও চিরাচরিত রীতি মেনে হয়ে আসছে।
পুজোর দিনগুলোতে গ্রামের প্রতিটি মানুষ উৎসবে মেতে ওঠে। বাড়ির বাইরে কিংবা রাজ্যের বাইরে কর্মসূত্রে থাকা যুবক-যুবতীরাও এই ক’টা দিনের জন্য গ্রামে ফিরে আসে। একাদশীর সকালে সিঁদুর খেলা ও বরণের মধ্য দিয়ে বিদায় জানানো হলো উমাকে। সেই মুহূর্তে আবেগে ভেসে উঠল গোটা সাহানা পাড়া।

স্থানীয় গৃহবধূ পূজা গুহ চোখের জল সামলে বলেন, “যেভাবে আমরা বাপের বাড়ি ছেড়ে শ্বশুরবাড়ি আসার সময় কষ্ট পাই, তেমনই মা-ও কষ্ট পাচ্ছেন। তবুও তাঁকে যেতে হবে, আমরা তো মায়ের জাত। সিঁদুর পরিয়ে তাই চোখের জলে বিদায় জানাতে হলো।” পুজো কমিটির সম্পাদক পরিমল সাহানা জানান, ঐতিহ্য অনুযায়ী বাদ্যযন্ত্র, আদিবাসী নৃত্য ও শোভাযাত্রার মাধ্যমে দেবীকে বিদায় দেওয়া হয়েছে।
বাসিন্দা অনন্যা সাহানার আবেগঘন কণ্ঠে, “সারা বছর মন্দিরটা ফাঁকা থাকে, কিন্তু এই কয়েকটা দিন মায়ের আগমনে প্রাণ ফিরে পাই। আজ আবার সেই শূন্যতা ফিরে এলো।” স্থানীয় মিলন সংঘের সদস্য সীমন্ত সাহানা বলেন, “পুজোর ক’টা দিনে গ্রামবাসী একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া, আনন্দে সময় কাটাই। কিন্তু আজ থেকে আবার একঘেয়েমি জীবনে ফিরে যেতে হবে, অপেক্ষা করতে হবে আগামী বছরের।”
বিদায় বেলায় বিশেষ ভোগেরও আয়োজন হয়েছিল। গ্রামের বাসিন্দা বিশ্বজিৎ গুহ জানান, শোভাযাত্রা শেষে সকলেই একসঙ্গে ভোগ প্রসাদ গ্রহণ করে দেবীর প্রতি চিরাচরিত ভক্তি জানিয়েছেন। চোখের জলে বিদায় জানানো হলেও গ্রামবাসীর মনে জেগে থাকল আগামী বছরের নতুন আশার প্রতীক্ষা।
কৃষ্ণ সাহার রিপোর্ট কৃষকসেতু নিউজ বাংলা বাংলার মাঝে খবরের খোঁজে