মঙ্গলবার রাতের তুলনায় বৃষ্টি কমলেও নতুন করে ধস নেমেছে ১০ নম্বর জাতীয় সড়কের একাধিক অংশে। এতে করে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার নিয়েছে ওই রাস্তায়। শিলিগুড়ি থেকে কালিম্পংয়ের দিকে যাত্রা আংশিক স্বাভাবিক হলেও শিলিগুড়ি-সিকিম সড়ক পথে যোগাযোগ এখনও বিচ্ছিন্ন। বুধবার যান চলাচল ঘুরপথে হয়েছে।
এদিকে টানা বৃষ্টি ও হড়পা বানের কারণে সিকিমে পানীয়জল সরবরাহ ব্যবস্থা ভয়াবহভাবে ভেঙে পড়েছে। গ্যাংটক শহরে দেখা দিয়েছে তীব্র জলসংকট। এরই মধ্যে বুধবার সকালে সিকিমের পার্বত্য এলাকা অনুভব করেছে একটি হালকা মাত্রার ভূকম্পন।

মঙ্গলবার সিকিমের জন্য ‘কমলা সতর্কতা’ জারি করেছিল আবহাওয়া দপ্তর। তবে রাত পেরোনোর পর বৃষ্টির মাত্রা কিছুটা কমেছে। বুধবার দুপুর নাগাদ তিস্তা নদীর জলস্তরও নামতে শুরু করেছে বলে খবর। এরই প্রেক্ষিতে “জাতীয় মহাসড়ক ও পরিকাঠামো উন্নয়ন কর্পোরেশন লিমিটেড (NHAIDCL)” ১০ নম্বর জাতীয় সড়কটি তিস্তা বাজার পর্যন্ত খুলে দেয়। কিন্তু এরপর ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হয় এবং বহু গাড়ি ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে পড়ে।
যদিও কালিম্পংয়ের দিকে রাস্তা আংশিক খুলে দেওয়া হয়েছে, তবে সকাল ৯.৩০টা নাগাদ চিত্রে ও রংপোর মাঝে তারখোলায় ফের ধস নামে। পাহাড়ি ঢাল থেকে নামা পাথর ও মাটি রাস্তা বন্ধ করে দেয়। পাশাপাশি লিখুভিরের কাছেও ধস নামার খবর পাওয়া গেছে।
“এনএইচআইডিসিএল”-এর সূত্র অনুযায়ী, ধস সরানোর কাজ দ্রুতগতিতে চলছে এবং সন্ধ্যার মধ্যে সিকিমের দিকে রাস্তা সচল করার চেষ্টা চলছে।
“এনএইচআইডিসিএল-এর জেনারেল ম্যানেজার রাহুল কুমার গুপ্ত” বলেন, “এখন পর্যন্ত ১০ নম্বর জাতীয় সড়কে দার্জিলিং-কালিম্পং রুটে যানবাহন চলাচল চালু হয়েছে।”
তবে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, “জাতীয় সড়কে অস্থায়ী ডাইভারশন কালিম্পংগামী যানবাহন চলাচলে বড় অসুবিধার কারণ হয়েছে।”
ভূমিধসের প্রভাবে গ্যাংটক সহ সিকিমের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে পানীয় জলের পাইপলাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শহরের একাধিক এলাকায় পাইপ ফেটে যাওয়ায় সরবরাহে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। বুধবার সকাল থেকে আবারও হালকা বৃষ্টিপাত শুরু হওয়ায় জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের কর্মীরা যুদ্ধকালীন তৎপরতায় পাইপলাইন মেরামতের কাজে নেমেছেন।
এছাড়াও মঙ্গলবার রাতে মানবীর কলোনির লোয়ার বুরতু এলাকাতেও ধস নামায় ওই অংশের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। দক্ষিণ সিকিমের ফোংলা, নামথাং থেকে নামচি পর্যন্ত রাস্তাও ধসে বন্ধ।
তবে ধরগাঁও, লেগশিপ, হিংডাম, কেউজিং, রাভাংলা রুটে রাস্তাগুলি সচল হয়েছে। চোঙ্গা অঞ্চলে ধসের ফলে কয়েকটি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মিরুং গ্রাম থেকে বুসুক সেতুর মধ্যে সড়ক আংশিকভাবে বন্ধ। নান্দোকে জল সরবরাহের পাইপলাইন পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়েছে।
এগারো মাইলে ‘PMGSY’ রোড ধসের কারণে বন্ধ রয়েছে। নাইতামে একই রাস্তায় তিনটি জায়গায় ধস নামায় যান চলাচল অসম্ভব হয়ে উঠেছে।
তদ্ব্যতীত, গ্যাংটক শহর সহ বহু এলাকায় নিকাশি ব্যবস্থাও মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে সড়কপথে সমস্যা হওয়ায় অনেক পড়ুয়া স্কুল-কলেজে পৌঁছতে পারছে না, হাটবাজারেও যাতায়াতে সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
এরই মাঝে বুধবার সকালে ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে সিকিম, যার ফলে এলাকাজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। কম্পনের কেন্দ্র ছিল তাদং থেকে প্রায় ১৪৬ কিলোমিটার দূরে। “রিখটার স্কেলে কম্পনের মাত্রা ছিল ৪.২।”