আর মাত্র কয়েকটা মাস বাকি ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের। ভোটের দামামা বেজে উঠতেই যেন ফের সক্রিয় হয়ে উঠছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলি— ইডি ও সিবিআই। গত কয়েক বছরে পশ্চিমবঙ্গে ভোটের আগে বা মাঝামাঝি সময়ে এই দুই সংস্থার তৎপরতা চোখে পড়েছে। একের পর এক তল্লাশি, জিজ্ঞাসাবাদ, গ্রেফতার— সবই যেন এক বিশেষ সময়কে কেন্দ্র করেই ঘটে।
বিরোধীদের অভিযোগ, ভোটের আগেই রাজনৈতিকভাবে চাপ সৃষ্টি করতে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকে ব্যবহার করছে বিজেপি। শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে বারবার অভিযোগ করা হয়েছে, “যখনই ভোট আসে, তখনই ইডি-সিবিআই সক্রিয় হয়। আর ভোট শেষ হতেই তারা যেন হাওয়ায় মিলিয়ে যায়”।

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কের এই টানাপোড়েন এখন নতুন নয়। কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রিত তদন্ত সংস্থাগুলির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে আগেও। তবে শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, কংগ্রেস বা অন্য বিরোধী দল শাসিত রাজ্যগুলিতেও অনুরূপ অভিযোগ শোনা যায়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, “ইডি ও সিবিআই-এর তদন্তের প্রয়োজনীয়তা কেউ অস্বীকার করছে না, কিন্তু সময়কাল ও বেছে নেওয়া ব্যক্তিদের নাম দেখলেই রাজনৈতিক উদ্দেশ্য স্পষ্ট হয়ে ওঠে”। ভোট যত এগোচ্ছে, তদন্তের ছায়া ততই ঘন হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনে এই ইডি-সিবিআই-র ভূমিকা কতটা প্রভাব ফেলবে, সেটাই এখন দেখার।
তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের অধ্যক্ষ অপার্থিব ইসলাম তিনি বলেন, “ইডি- সি বি আই এখন মানুষের কাছে গুরুত্ব হারিয়ে ফেলেছে! ইডি-সিবিআই ঠিক শীতের পরিযায়ী পাখির মত!
সামনেই ভোট বাংলাতে তাই ইডিসিবিআই এর আসা-যাওয়া শুরু হয়েছে, সেই হিসেবে ভারতবর্ষ সহ বাংলার মানুষ বুঝে নিয়েছে ইডি-সিবিআই কেন্দ্রীয় সরকারের তোতাপাখি। কেন্দ্রীয় সরকার তাদের দিয়ে যেটা বলাবেন সেটাই বলবেন, যেটা করাবেন উনারা সেটাই করবেন, যেখানে যেতে বলবেন ওনারা সেখানেই যাবেন, কাজেই ভারতবর্ষ সহ বাংলার মানুষের কাছে এরা গুরুত্বহীন। যখন ভোট আসে তার আগেই এই রাজ্যে দেখা যায়,ভোট মিটে গেলে তাদের আর পাত্তা পাওয়া যায় না”।
যখন ভোট আসে তার আগেই এই রাজ্যে শাসকদলের অবৈধ কার্যকলাপ বেড়ে যায় তাই ইডি-সিবিআই আসতে বাধ্য হয় বলে প্রতিক্রিয়া দেয় বিজেপি নেতৃত্ব।
বিজেপি নেতার মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র বলেন অবৈধভাবে বালি চুরি, কয়লা চুরি, পাথর চুরি, তোলাবাজি, সরকারি অর্থ তছরূপ করে সেই অবৈধ টাকাই তো নির্বাচনের আগে বুথে বুথে পৌঁছে দেয় শাসকদল। সেই টাকাতেই তো বেআইনিভাবে বোম তৈরি হয়! দুষ্কৃতীদের পোষা হয়! যখন দুর্নীতি হবে তখনই তো ইডি- সিবিআই তদন্ত করবে। ইডি সিবিআই এর যেসব অফিসাররা এই রাজ্যে আসে তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে- তো এখান থেকে যাওয়ার পরে বিভিন্নভাবে আইনি শাস্তির মুখে পড়তে হয়েছে! কারণ তারা কোথাও না কোথাও এই রাজ্যের শাসকদলের অবৈধ টাকার কাছে নিজেদের বিক্রি করে ফেলেছেন এই উদাহরণও আছে।
ইডি সিবিআই এর আসা যাওয়া নিয়ে পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ বিশ্বনাথ রায় প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। বিশ্বনাথ রায় বলেন, “ইডি আর সি বি আই এরা পশ্চিমবাংলার মানুষের কাছে পরিযায়ী পাখি। আমরা দেখতে পাই ঠিক সিটের আমের যখন শুরু হয় দেখে দেখে পিকনিকের একটা রমরমা চলে। চিড়িয়াখানায় বিভিন্ন পরিযায়ী পাখিদের দেখা যায় আমরাও যাই মনোরঞ্জনের জন্য। ঠিক তেমনি ২০২১ সাল থেকে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ এমনটাই দেখতে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন।
ইডি সিবিআই এলেই বাংলার মানুষ তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করেন। বাংলার মানুষ আঁচ করতে পারেন আসছে মানেই বাংলায় নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরু হবে। ইডি সিবিআই যতই আসুন ২০২৬ এ বাংলার মসনদে আবারো বসবেন জননেত্রী তথা বাংলার অগ্নিকন্যা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়”।