আবহাওয়া দক্ষিণবঙ্গ শিক্ষা লাইফ স্টাইল স্বাস্থ্য ভ্রমন ধর্ম কৃষি কাজ ক্রাইম

অটলবিহারী বাজপেয়ী ও আদবানিজী আশ্রয় না দিলে ২০০১ সালে তৃণমূল পার্টিটাই উঠে যেত – বললেন শুভেন্দু

krishna Saha

Published :

WhatsApp Channel Join Now

প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় ( বর্ধমান ) :- পুলিশ ভাবছে দিদি ওদের বাঁচাবে । কিন্তু ভগবানও দিদিকে আর বাঁচাতে পারবেনা । ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলকে গঙ্গায় বিসর্জন দেবই ।মঙ্গলবার পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রামের কাঁদরার জনসভা থেকে এমনই
দাবি করলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ । একই সঙ্গে দিলীপ বাবু জানিয়ে দেন, তাঁদের কর্মীদের মারধোর করে যারা কষ্ট দিচ্ছে তারও কেউ পার পাবেনা । মে মাসের পর সব হিসাব তাঁরা বুঝে নেবেন। যদিও দিলীপ ঘোষের এই সব বক্তব্যকে কোন গুরুত্ব দিতে চান নি তৃণমূল নেতৃত্ব । তাদের বক্তব্য অমিত শাহ ও দিলীপ ঘোষেদের বাংলা জয়ের স্বপ্ন অধরাই রয়েযাবে ।


কেতুগ্রামের জনসভায় সদ্য তৃণমূল ত্যাগ করে বিজেপিতে যোগদেওয়া শুভেন্দু অধিকারী উপস্থিত থাকবেন বলে বিজেপির তরফে ঘোষনা করা হয়েছিল। কিন্তু কেতুগ্রামের সভায় শুভেন্দু অধিকারী গড়হাজির ছিলেন ।
তবে দিলীপ ঘোষের সঙ্গেই পূর্বস্থলীর জনসভায় যোগদেন শুভেন্দু অধিকারী ।


জনসভায় নিজের বক্তব্যে দিলীপ ঘোষ আরও বলেন ,শুধুমাত্র বিজেপিকে আটকানোর জন্য যারা বিনা কারণে মানুষকে কষ্ট দিচ্ছে , অসন্মান করছে তাদের কাউকে ছাড়া হবে না ।
সে তিনি নেতা, অফিসার যেই হন না কেন । কার্যত হুঁশিয়ারির সুরে দিলীপ ঘোষ সভামঞ্চ থেকে বলেন , যারা এইসব করছেন তারা জেনে রাখুন বাংলায় বিজেপিকে আটকাতে পারবেন না । আপনাদের কপালে আগামীদিন কি আছে জেনে নিয়ে সেই কাজ করুন । কারণ আমাদেরও সহ্যের সীমা আছে । আমাদের লোকেদের পার্টি করতে দেবেন না ,রাস্তায় বেরুতে দেবেন না ,পার্টি অফিস ভেঙে দেবেন , মারধোর করবেন ।

এইসব আর সহ্য করবোনা । এরপরেই দিলীপ বাবু বলেন ,আমরা খেপে গেলে কি হয় তা শিউড়িতে তো দেখেছেন । শিউড়ির সভায় যোগদিতে আমাদের যে লোকেরা যাচ্ছিল তাদের গাড়ি আটকানো হয়েছিল । গাড়ি আটকে ভাঙচুর চালানো ছাড়াও গুলি চালানো হয়েছিল । যারা এইসব করেছিল তাদের কাঁচা বাঁশেকরে কুকুর পেটানো করেছিল আমাদের ছেলেরা । তৃণমূলের গুণ্ডারা তখন হাতে পায়ে ধরা শুরু করে দিয়েছিল। এবার পায়ে ধরলেও আর ছাড়া হবে না । সেই দিন আসছে । এইসব কথা বলার ফাঁকেই দিলীপবাবু পুলিশের উদ্দেশ্যে হুংকার ছাড়েন । তিনি বলেন ,“পুলিশ ভাবছে দিদি ওদের বাঁচিয়ে দেবে । কিন্তু বলে রাখি ভগবানও দিদিকে আর বাঁচাতে পারবে না । ২০২১ শে তৃণমূলকে বিসর্জন দেবই । আগামী মে মাসে দিদিকেও গঙ্গায় বিসর্জন দেব। ”


কেন্দ্রের নতুন কৃষি বিল প্রসঙ্গে দিলীপ বাবু বলেন ,’কৃষক স্বার্থে কেন্দ্রের মোদি সরকার কৃষি বিল পাস করেছে । কিন্তু তৃণমূল সহ বিরোধীরা তা নিয়ে মিথ্যা প্রচার করছে । কাটমানি পাবেনা বলে তৃণমূল সরকার এই রাজ্যের চাষিদের কেন্দ্রীয় সরকারের প্রদেয় টাকা পেতে দিচ্ছে না ।দেশের ৯ কোটি চাষি ৬ হাজার টাকা করে পেয়ে গেল । শুধু বাংলার
৭৩ লক্ষ চাষিকে ওই টাকা পেতে দেওয়া হল না । দিলীপ বাবু অভিযোগ করেন ,‘আয়ুস্মান যোজনা’ এই রাজ্যে কার্যকর করা হচ্ছে না । অথচ চিকিৎসা ব্যবস্থার দুরাবস্থা রয়েই আছে । চিকিৎসার জন্য বাংলার মানুষজনকে দক্ষিন ভারতে যেতে হচ্ছে । কাটমানি খাওয়া যাবেনা বলে তৃণমূল সরকার কেন্দ্রীয় সরকারের জনহিতকর প্রকল্পগুলি বাংলায় কার্যকর করছে না ।

See also  রাজ্যে লকডাউন কিছুটা শিথিল হলেও , বন্ধ থাকছে লোকাল ট্রেন

কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সুবিধা পেয়ে যদি বাংলার মানুষ মোদিজীর দিকে ঢলে যায় সেই ভয়ও আবার ওদের তাড়া করে বেড়াচ্ছে ।’ ‘দুয়ারে সরকার ’ কর্মসূচি নিয়েও কটাক্ষ করেছেন দিলীপ ঘোষ । তিনি বলেন ’,সরকারী পয়সা খরচ করে ‘দুয়ারে সরকারের’ নামে ভোটের প্রচার হচ্ছে । তৃণমূলের ভোট কৌশলী প্রশান্ত কিশোরের টুইট নিয়েও কটাক্ষ করতে ছাড়েন নি রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ । জনসভার আগে কাটোয়ায় চায়ে পে চর্চায় যোগদিয়ে দিলীপ বাবু সাংবাদিকদের বলেন,“বিজেপিকে নিয়ে কুৎসা প্রচারের হোতা হলেন প্রশান্ত কিশোর । তিন অক্ষর দুই অক্ষর প্রসঙ্গ সামনে এনে দিলীপ বাবু এদিন দাবি করেন , “বাংলায় পরিবর্তন আসবেই । ওনাকে বিজেপির কথা ভাবতে হবে না । পিকের উদ্দেশ্যে পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে দিলীপ বাবু বলেন , এবারের বিধানসভা ভোটে তৃণমূল কি আদৌ দুই অক্ষর টপকাতে পারবে ?তৃণমূলের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন বলে এর উত্তর পিকে কেই তৃণমূলের কাছেই দিতে হবে । বিজেপিকে নিয়ে পিকের ভেবে লাভ নেই । কারণ মে মাসেই পিকের চাকরি চলে যাবে। ”


অন্যদিকে পূর্বস্থলীর জনসভা থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে বেনজীর আক্রমন শানান
সদ্য তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগদেওয়া শুভেন্দু অধিকারী ।এদিন তিনি বলেন ,
তৃণমূল কংগ্রেস দলটা এখন কোম্পানিতে পরিণত হয়েছে । দেড়খানা লোক এখন তৃণমূল কংগ্রেস চালাচ্ছে । যাদের আত্মসন্মান বোধ আছে তার কেউ ওই দলে থাকতে
পারবেন না । সেই কারণে তৃণমূল কংগ্রেস দল থেকে ইস্তফা দেবার পাশাপাশি মন্ত্রিত্ব পদ ও অন্য সব পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছি বলে শুভেন্দু মন্তব্য করে । শুভেন্দু বাবু আরও বলেন , বিজেপিতে যোগ দেবার আগে অমিত জী , দিলীপ দা ও কৈলাশ বীজয় বর্গীয় জীকে বলেছিলাম আমার কোন দাবি নেই । শর্ত একটাই তোলাবাজ ভাইপোর হাতথেকে বাংলাটাকে বাঁচান । কয়লা পাচার হয়ে গেছে । ধরাও পড়েগেছে । গরু পাচার হয়েগেছে ধরাও পড়েগেছে । অমিত শাহজীরা টাইট দিয়ে দিচ্ছেন বিএসএফকে দিয়ে । আর বালির গাড়ি গুলো রাস্তা ঘাট সব তছনছ করে দিচ্ছে । ট্রাকে ট্রাকে প্যাড । রাস্তায় রাস্তায় তোলা আদায় চলছে । গোটা বাংলায় আজ ২ কোটি বেকার । আর সাড়ে ৯ বছর বাদে জমের দুয়ারে সরকার । জানুয়ারি অবধি এই নাটক চলবে । কাগজ ফিলাপ করে জমা দেবেন । স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের নাম মুখে না এনে শুভেন্দু বাবু বলেন ,ফেব্রুয়ারিতে একটা করে কার্ড আসবে । কিন্তু টাকা পাবেন না । তাই বলি আয়ুস্মান ভারতে যেতে গেলে বিজেপিকে চাই । ৭৩ লক্ষ কৃষককে ছয় হাজার টাকা করে পেতে গেলে বিজেপিকে চাই । রাজ্যে শিল্প নেই ,অন্ধকার । সেই কারণে এই রাজ্যে পরিবর্তনের আর একটা পরিবর্তন আনার জন্য মাঠে নেমেছি । তা নয়তো কিডনি পাচার টা বাকি আছে । ওরা ফের ক্ষমতায় এলে এবার সেটাও করবে ।


এরপরেই তৃণমূল নেত্রী ও তার দলকে কটাক্ষ করে শুভেন্দু বাবু বলেন ,তৃণমূল কংগ্রেস কোম্পানি ও তার নেত্রীকে বলবো , নিজের দমে যদি মুখ্যমন্ত্রী হতেন ২০০১ সালে হতেন । আমার জন্য হতেন বলবো না ।মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কে উদ্দেশ্য করে শুভেন্দু বাবু বলেন ,‘ নন্দিগ্রামের ওই শবদেহ গুলোর উপরে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন । যে কংগ্রেস ভেঙে তৃণমূল কংগ্রেস করেছিলেন সেই কংগ্রের হাত ধরতে হয়েছিল ২০১১ তে । তবুও সেই সময়ে বিজেপি পরোক্ষভাবে বলেছিল ভোট মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কে দাও । কারণ বিজেপি বলেছিল অত্যাচারী কমিউনিষ্টদের খতম হওয়া দরকার । তাই বাংলায় পরিবর্তন হয়েছিল । এবার তাই পরিবর্তনের আর একটা পরিবর্তন চাই । রাজ্য টাকে মোদিজীর হাতে তুলে দিতে হবে । কলকাতা ও দিল্লিতে একই দলের সরকার তৈরি করতে হবে । শিল্প আনতে হবে , বেকারদের চাকরি দিতে হবে । ওই দু হাজার , এক হাজার , চার হাজার টাকার চাকরিতে কারুর সংসার চলেনা । আর -’এম জি নারেগা ’থেকে সব পঞ্চায়েতের কাজের দুর্নীতি ফাঁস করতে হবে । যারা শুভেন্দু অধিকারীকে মিরজাফর বলে কটাক্ষ করছেন , তাদের উদ্দেশ্যে শুভেন্দু বাবু প্রশ্ন রাখেন ১৯৯৮ সালের পঞ্চায়েত ভোট , বিধানসভা ভোট ও পরবর্তিতে১৯৯৯ সালে লোকসভা ভোটে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে কারা ছিল । সেদিন যদি প্রাধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী ও আদবানী জী তৃণমূল কংগ্রেসকে আশ্রয় না দিতেন তাহলে ২০০১ সালের আগেই তৃণমূল পার্টিটা উঠে চলে যেত । সিঙ্গুরে অনশন মঞ্চে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফলের রস খাইয়ে যে বিজেপি নেতা রাজনাথ সিং অনশন ভাঙিয়ে ছিলেন সেই কথাও এদিন সামালোচকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরেন শুভেন্দু অধিকারী ।

krishna Saha

আমার নাম কৃষ্ণ কুমার সাহা, আমি ফুল টাইম সাংবাদিকতা করি।গত ৮ বছর ধরে এই পেশায় আছি