স্বাস্থ্য দপ্তরে চাকরি দেবার নামে এক যুবকের এক যুবকের কাছ থেকে ৫ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেবার অভিযোগে গ্রেফতার হল তিন প্রতারক । পূর্ব বর্ধমানের রায়না থানার পুলিশ যে তিন প্রতারককে গ্রেফতার করেছে তারা হল নাজমুল হক মল্লিক ,হাসিবুল রহমান সেখ ও রামপ্রসাদ সরকার।রায়নার মাছখান্ডায় বাড়ি নাজমুলের । বর্ধমান শহরের বাজেপ্রতাপপুরে বাড়ি হাসিবুলের ।আর রামপ্রাদের বাড়ি মাধবডিহি থানার কাইতি গ্রামে । মঙ্গলবার সকালে বাড়ি থেকে পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে ।
এই প্রতারকদের গ্রেফতার করার পরেই সামনে এসেছে প্রতারণার চাঞ্চল্যকর কর্মকাণ্ড ।ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ চালিয়ে পুলিশ জানতে পেরেছে প্রতারকরা বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে চলাচ্ছিল স্বাস্থ্য দপ্তরের ভূয়ো নিয়োগপত্র বিলির কারবার।এতদিন কেউ তার টেরও পায়নি । তিনজনকে গ্রেপ্তার করার পর বিষয়টি সামনে আসতেই পুলিশ নড়েচড়ে বসেছে। ঘটনার তদন্তে এদিন পুলিশ বর্ধমান হাসপাতালেও যায় । ডেপুটি সুপারের সঙ্গে এই বিষয় নিয়ে তদন্তকারী পুলিশ কর্তা কথাও বলেন । সন্দেহভাজন হাসপাতালের এক কর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়।
পুলিস জানিয়েছে , বেশ কয়েকজনের বায়োডাটা, জাল নিয়োগপত্র ও পরিচয়পত্র পাওয়া গেছে নাজমুলের কাছ থেকে । সেগুলি সহ তার মোবাইল ফোনটি বাজেয়াপ্ত করে হয়েছে । পুলিশ জানিয়েছে, নাজমুলের মোবাইল ফোনটি ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে ।এদিনই ধৃতদের পেশ করা হয় বর্ধমান আদালতে । চক্রের বাকিদের হদিশ পেতে এবং হাতিয়ে নেওয়া টাকা ও জাল নিয়োগপত্র ও পরিচয়পত্র তৈরির সরঞ্জাম বাজেয়াপ্ত করার জন্য ধৃতদের ৭ দিন নিজেদের হেফাজতে নিতে চেয়ে আদালতে আবেদন জানান তদন্তকারী অফিসার । ভারপ্রাপ্ত সিজেএম সোমনাথ দাস ধৃতদের ৪ দিন পুলিশি হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন ।
প্রতারণার ঘটনা বিষয়ে রায়না থানায় অভিযোগ দায়ের করে খণ্ডঘোষ থানার উদয়কৃষ্ণপুরে নাসিরুদ্দিন মল্লিক । সে পুলিশকে জানায়,কিছুদিন আগে নাজমুলের সঙ্গে তার পরিচয় হয়।নিজেকে প্রভাবশালী ব্যক্তি বলে দাবি করে নাজমুল ওই যুবককে জানায় তার সঙ্গে স্বাস্থ্য দপ্তরের উপর মহলের অনেকের সঙ্গে জানাশোনা আছে। নাসিরুদ্দিনকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ওয়াড বয়ের চাকরি করে দেবে বলে আশ্বাস দেয় নাজিমুল । চাকরির জন্য নাজমুল ৫ লক্ষ টাকা দাবি করে নাসিরুদ্দিনের কাছে । নাসিরুদ্দিন দু’দফায় সেই টাকা মিটিয়ে দেয় ।পাশাপাশি চাকরির জন্য মাধ্যমিকের মার্কসশিট, অ্যাডমিট কার্ড ও অন্যান্য নথিপত্র নাজমুলকে দিয়ে দিতে হয় ।
নাসিরুদ্দিন জানায় এরপর নাজিমুল তাকে নিয়ে একদিন বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ৪ তলা ভবনে যায় ।সেখানে সে কয়েকজনের সঙ্গে নাসিরুদ্দিনের কথা বলায় । ওই ব্যক্তিরা নিজেদের স্বাস্থ্য দপ্তরের লোক বলে পরিচয় দেয়। নাসিরুদ্দিন বলে সেখানেই তাঁকে চাকরি নিয়োগপত্র দেওয়া হয়। এরপর বিভিন্ন জায়গায় খোঁজখবর নিয়ে নাসিরুদ্দিন জানতে পারেন, এভাবে স্বাস্থ্য দপ্তরে নিয়োগ হয়না। সন্দেহ হওয়ায় সে নাজমুলের কাছে কয়েকজনের নাম ও ফোন নম্বর চায়। নানা অছিলায় সেই বিষয়ে এড়িয়ে যায় নাজমুল। প্রতারিত হয়েছে বুঝতে পেরে সবিস্তার জানিয়ে নাসিরুদ্দিন সোমবার রায়না থানায় অভিযোগ দায়ের করে। দায়ের হওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ নাজিমুল সহ চক্রের তিন পাণ্ডাকে গ্রেফতার করে ।