সৈয়দ মফিজুল হোদা ( বাঁকুড়া ) :- বাংলা মায়ের বুকে চরৈবেতিতে বেরিয়ে মাঝে মাঝে ইতিহাস আমাদের হাতছানি দেয় এমন কিছু ইতিহাস যা আজো মানুষের দৃষ্টির অগোচরে, হাজারও বই এর পাতা ঘাটলে সে ইতিহাস খুঁজে পাওয়া যাবে না হয়তো। লাল মাটির জেলা বাঁকুড়া, আর এই লালমাটিও ইতিহাস প্রসিদ্ধ, সাক্ষী অনেক সংগ্রামের।নিপীড়িত মানুষের,নিজের ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন গ্রাম বাংলায় সংঘটিত হয়েছে একাধিক বিদ্রোহ। বাঁকুড়া জেলার রাইপুরের হরিহরগঞ্জও সাক্ষী এমন এক বিদ্রোহের।

শতাধিক বছর আগে বাংলায় উভয় সংকট একদিকে বর্গী হানা অন্যদিকে ব্রিটিশ আগ্রাসন, এই দুই এর ঘেরা টোপে নাজেহাল সাধারন মানুষ থেকে শুরু করে তৎকালীন রাজারা।তৎকালীন বাঁকুড়ার রাইপুর প্রদেশে ক্ষত্রিয় রাজা ছিলেন রাজা দুর্জন সিংহ দেব নিজ হস্তে তাঁর প্রজাদের সাথে নিয়ে সংগঠিত করেছিলেন এক প্রতিবাদ,যাকে ইতিহাস তকমা দিয়েছিলো চূয়াড় বিদ্রোহ নামে।রাজপ্রাসাদের মধ্যে গভীর একগুহা যার মধ্যে মুজুত থাকতো অস্ত্রসস্ত্র, চলতো ব্রিটিশ শাষনের বিরুদ্ধে এক সসস্ত্র আন্দোলন।

রাজা দুর্জন সিংহের অবর্তমানে তাঁর সুপুত্র ফতে সিং একই ভাবে সংগঠিত করেছিলেন ব্রিটিশের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে এক যুদ্ধ। সেই যুদ্ধে পরাস্ত হয়ে ফতে সিং বন্দী হলেন বর্ধমান জেলে এবং সন্ধি হয় তিনি তাঁর রাজত্ব চালিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন কিন্তু বছরে ২২০০০ টাকা করে প্রদান করতে হবে ব্রিটিশদের। ফতে সিং এর পরবর্তীতে তার পুত্র বীর সিং তার পূর্বপুরুষদের দেখানো পথেই শুরু করে বিদ্রোহ সব কিছু চলতে থাকে রাজত্বের নিয়মেই। কিন্তু আরেক সমস্যার সম্মুখীন হয় এই রাজ পরিবার উত্তরাধিকারকে কেন্দ্র করে।

বীর সিং এই দুই রাণীর কোলে নেমে আসে দুই সন্তান, একই দিনে জন্ম হয় দুই পুত্র সন্তানের একজন সকালে একজন বিকেলে। বিষয় হলো কে রাজত্ব করবে? এই নিয়ে শুরু হলো তুমুল তর্জা। সকালে জন্মালেন বীর সিং এর ছোট রাণীর পুত্র হরিহর সিংহ, বিকেলে জন্মালেন বড় রাণীর পুত্র রঘুনাথ সিংহ। তৎকালীন এই প্রদেশে পুরুলিয়া আদালতে বিচার বিবেচনার পর রাজত্ব পেলেন রাজ বীর সিং এর বড় পুত্র হরিহর সিংহ, তারপরই গড়ে উঠলো এক নগর নাম হলো হরিগঞ্জ, শুরু হলো সিংহ বাড়ীর রাজত্বের এক নতুন ইতিহাস।

বেশ কয়েকদশক রাজত্ব চলেছিল ঠিকঠাক ভাবেই, তার পরই ঝরে পড়তে শুরু করলো রাজার মুকুট থেকে একটি একটি করে পালক।রাজপ্রাসাদের এই গুহা এখন বন্ধ আস্তানা হয়েছে সাপখোপ আর কিছু আগাছার। এখন “মুকুটাতো পড়েই আছে রাজাই শুধু নেই”। একটা ঐতিহ্য যে কিভাবে শেষ হতে পারে তার সাক্ষী এই হরিহরগঞ্জের রাজবাড়ী।

এখন রাজার উত্তরসূরীদের একমাত্র অবম্বন বলতে শুধু রাজার তকমা, বাকিটা জুড়ে শুধু অভাব আর অনটন্, কিছু পাওয়া এবং কিছু না পাওয়ার গল্প। ঐ পরিপারের এক সদস্য হরিপদ সিংহ দেব জানান ” আমরা এখন বিপিএল তালিকা ভুক্ত, এই ইতিহাস যেন সবার কাছে পৌঁছে যায় এই আবেদন তিনি রাখছেন সবার কাছে”। একটা সোনালী যুগের অবসান ঘটে ইতিহাসের সাক্ষ কিভাবে বহন করে নিয়ে যাওয়া যায় তার উদাহরন রুপে পড়েই রইলো বাঁকুড়ার রায়পুরের হরিহরগঞ্জ, একবার ঘুরতে আসবেন নাকি?।