রথীন রায় :- চাহিদা অনুযায়ী রাজ্যে বিয়ারের পর্যাপ্ত উৎপাদন নেই বলেই আবগারি দফতরের দাবি ! বিক্রেতাদের বক্তব্য, সরবরাহ ব্যবস্থাতেই যত ত্রুটি !
চৈত্রের শেষবেলায় কলকাতায় তাপমাত্রা ছাড়িয়েছে ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস ! জেলায় জেলায় আরও বেশি ! আর এক দিন পরে বৈশাখ শুরু ! আবহাওয়া দফতর কোনও আশার বাণী শোনাচ্ছে না ! উল্টে বলছে, বৈশাখে গরম আরও বাড়বে ! কালবৈশাখী আসবে কি না, তারও ঠিক নেই ! উপায় একটাই ছিল, বিয়ার সেবন এবং গলা ও শরীর ঠান্ডা রাখা !

কিন্তু সে বিয়ারেও বালি ! কারণ, রাজ্য জুড়ে বিয়ারের আকাল দেখা দেওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে ! যতটা চাহিদা, ততটা জোগান নেই ! আর সেটা সামাল দিতেই বিয়ার সরবরাহের ক্ষেত্রে রেশন চালু করল রাজ্য আবগারি দফতর ! ঠিক হয়েছে এক বছর আগে ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে যে দোকান থেকে যত পরিমাণে বিয়ার বিক্রি হয়েছিল, এখন ঠিক ততটাই সরবরাহ হবে ! এর একটা নীতিও ঠিক করেছে আবগারি দফতর ! চাহিদা অনুযায়ী, রাজ্যে বিয়ারের পর্যাপ্ত উৎপাদন নেই বলে আবগারি দফতর দাবি করলেও বিক্রেতারা অন্য অভিযোগ তুলছেন ! তাঁদের বক্তব্য, আবগারি দফতরের পর্যাপ্ত সরবরাহ ব্যবস্থা নেই ! সে কারণেই জেলায় জেলায় দোকানে বিয়ার বাড়ন্ত !
যদিও সেই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন রাজ্য আবগারি দফতরের কমিশনার এস উমাশঙ্কর ! জোগানের সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘উৎপাদন কম হওয়াতেই কিছুটা সমস্যা তৈরি হয়েছে ! সাধারণ ভাবে গরমে চাহিদা মেটাতে বিয়ারের উৎপাদন শুরু হয়ে যায় জানুয়ারি থেকেই, কিন্তু ওমিক্রন সংক্রমণের কারণে সেই সময় উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে ! সেই সঙ্গে এ বার বিয়ারের চাহিদাও বেশি ! দাম কমে যাওয়াতেও বেড়েছে চাহিদা” ! চাহিদার তুলনায় জোগান কম হওয়ায় বিয়ারের কালোবাজারি শুরু হতে পারে বলেও আশঙ্কা তৈরি হয় ! আবগারি দফতরের এক কর্তা জানিয়েছেন, মার্চ মাস থেকেই সমস্যা শুরু হয়েছিল ! যে সব বিক্রেতাদের আর্থিক ক্ষমতা বেশি, তারা অনলাইনে একসঙ্গে অনেক বিয়ার তুলে নিচ্ছিলেন, এর ফলে অন্য দোকানদারদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হচ্ছিল !
উমাশঙ্কর বলেন, ‘‘আমরা সবাইকে সমান হিসেবে দেখার জন্যই একটা ব্যবস্থা তৈরি করেছি ! ঠিক হয়েছে ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে যে দোকান থেকে যতটা পরিমাণে বিয়ার বিক্রি হয়েছিল, তার উপরেই নির্ভর করবে এই বছরের সরবরাহ” ! আবগারি দফতর সূত্রে পাওয়া তথ্যে জানা গিয়েছে, গত ৮ এপ্রিল থেকে বিয়ারের ‘রেশন’ ব্যবস্থা চালু হয়েছে রাজ্যে ! ২০২১ সালের বিক্রির পরিমাণ অনুযায়ী বিক্রেতাদের ‘র্যাঙ্কিং’ দেওয়া হয়েছে ! সেই ‘র্যাঙ্কিং’ অনুযায়ী বরাদ্দ হচ্ছে বিয়ার ! ‘র্যাঙ্কিং’ শুরু হয়েছে ০.০১ থেকে ! ০.০১ ‘র্যাঙ্কিং’ যে দোকানের, সেখানে সপ্তাহে ৫ কেস করে বিয়ার যাবে ! ০.০২ হলে সপ্তাহে ১০ কেস ! এই ভাবে বাড়তে বাড়তে একের উপর ‘র্যাঙ্কিং’ হলে মিলবে সপ্তাহে ১২০ কেস ! কলকাতার এক বিয়ার বিক্রেতা জানিয়েছেন, তাঁর দোকানের ‘র্যাঙ্কিং’ ২.৭০ হওয়ায় বরাদ্দ হয়েছে সপ্তাহে ২৫০ বোতল ! প্রসঙ্গত ৩৩০ মিলিলিটারের বিয়ারের ২৪টি বোতল থাকে একটি কেসে !
৫০০ মিলিলিটারের বোতল হলে ২০টি এবং ৬৫০ মিলিলিটারের ক্যান হলে এক কেসে ১২টি থাকে ! আবগারি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, কোন বিয়ার কত কেস নেবেন সেটা সংশ্লিষ্ট দোকান বেছে নিতে পারবে ! কত দিন চলবে এই ব্যবস্থা ? জানা গিয়েছে, যত দিন না পর্যাপ্ত উৎপাদন না হচ্ছে তত দিন এই ব্যবস্থা চলতে থাকবে ! কিন্তু উৎপাদন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চাহিদাও বাড়তে থাকলে গোটা গরমে চালুই থাকতে পারে ‘রেশন’ ব্যবস্থা ! তবে এই ব্যবস্থা নিয়েও বিক্রেতাদের অভিযোগ থেকেই যাচ্ছে !
এক মদ বিক্রেতার বক্তব্য, ‘‘আবগারি দফতর বিয়ার সরবরাহে রেশন করলেও সুরাপ্রেমীরা তো আর সেটা মানবেন না ! কেউ কেউ বেশি করে তুলে নেবেন আর অনেককে ফিরিয়ে দিতে হবে ! পারদ চড়লে তেষ্টাও বাড়বে ! আর গরমে বিয়ার দিতে না পারলে ক্রেতা হারানোর ক্ষতিটা তো আমাদেরই” !!