প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় বর্ধমান
এ যেন একেবারে গোলক ধাঁধার মত ব্যাপার। রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের পার্টি অফিস হঠাৎ করেই হয়ে গেল ফাঁকা বাড়ি।মঙ্গলবার সিঙ্গুরে মুখ্যমন্ত্রীর ’পথশ্রী’ প্রকল্পের উদ্বোধনের দিনই এমন ঘটনা ঘটেছে পূর্ব বর্ধমানের মেমারির নলসাঁড়া গ্রামে। দীর্ঘদিনের দাবি থাকা সত্ত্বেও এদিনও নতুন রাস্তার তালিকায় গ্রমের নাম না থাকায় ক্ষুব্ধ নলসাঁড়া গ্রামের বাসিন্দারা তৃণমূল
পার্টি অফিসের নাম নিশানা সাফ করে দেন। এই নিয়ে বিরোধীরা কটাক্ষ করলেও তৃণমূল নেতৃত্ব
জানিয়েছে,অভিমানে গ্রামের লোকজন এমনটা করেছে । আমরা কথা বলে মিটিয়ে নেব ।
মেমারি ১ নম্বর ব্লকের প্রত্যন্ত গ্রাম নলসাঁড়া। এই গ্রামেই ছিল তৃণমূল কংগ্রেসের একটি পার্টি অফিস ।সেখানে দলীয় কর্মীরা বসতেন। দলের নানা বিষয় ও কর্মসূচী নিয়ে আলোচনা চলত।এলাকাটি মেমারি বিধানসভার বিধায়ক ও জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের চেয়ারম্যান মধুসূদন ভট্টাচার্যের প্রভাবাধীন। এই হেভিওয়েট নেতার এলাকাতেই নানা কারণে শাসকদলের কর্মীদের ক্ষোভ ধিকিধিকি জ্বলছিল। যে ক্ষোভের কারণে এদিন
ঘৃতাহূতি পড়ে ।রাস্তা না মেলায় দলের পার্টি অফিস থেকে খুলে ফেলা হল দলীয় পতাকা।এমনকি সেখান থেকে দলের নাম নিশানা পর্যন্ত কর্মীরা হাপিশ করে দেন। পাশাপাশি পঞ্চায়েত ভোট বয়কটের হুমকি তারা দিয়ে রেখেছেন ।
দলের পার্টি অফিসের উপরে গ্রামবাসীদের সব ক্ষোভ আছড়ে পড়ার কারণটাও যথেষ্ট তাতপর্য পূর্ণ । গ্রামের বাসিন্দা মমতাজ মালিক, হারুন সেখ দের দাবি,পাশের গ্রামে রাস্তা হলেও তাদের গ্রামে আজও রাস্তা হয়নি।দেবীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের আশেপাশের সব গ্রাম রাস্তা পেলেও তারা বছরের পর ধরে শুধু হা-পিত্যেশ করেই বসে আছেন। এর ফলে তাদের দেবীপুর রেলস্টেশনে বা স্কুলে যেতে আসতে দারুণ সমস্যা হয় ।এদিন রাজ্যজুড়ে ’পথশ্রী’ প্রকল্পের য়স্তার উদ্বোধন হল । শুধু বাদগেল নলসাঁড়া গ্রাম। তাই এই বঞ্চনা আর মেনে নিতে না পেরে পাঁচবছর আগে গ্রামে গড়েতোলা
দলের পার্টি অফিস গুটিয়ে দিয়েছেন। সরিয়ে দেওয়া হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের ছবিও। এখন সেটি ফাঁকা বাড়ির রুপ নিয়েছে। গ্রামের আর এক বাসিন্দা মমতাজ মালিক জানান; ‘অনেক দিন থেকে শুনে আসছি রাস্তা হবে। নেতারাও বলে গেছেন। আর করে রাস্তা হবে?’
আমরা নলসাঁড়া গ্রামের মানুষজন বানের জলে ভেসে এসেছি?
এই নিয়ে বিজেপির বর্ধমান সদর জেলার সাধারণ সম্পাদক মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র বলেন,“মানুষকে ভুল বুঝিয়ে ক্ষমতায় আছে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা।ওই গ্রামে রাস্তা নেই। জল নেই। অথচ কেন্দ্রের নানা প্রকল্পের টাকা আসছে।সে টাকা থেকে হয়তো কাটমানি খেয়ে নিচ্ছে নেতারা।তার দাবি পথশ্রী নয় ,আসলে যা হচ্ছে তার সবই বিশ্রী “।’
অন্যদিকে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যের মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাস দাবি করেন,“রাস্তা হবেই। অন্য সব জায়গায় তো হচ্ছে।যাঁরা আমাদের দল করেন তাঁরা অভিমানে এইসব করে থাকতে পারেন। ওধারা কেউ আমাদের দল ছাড়বেন না“। পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি দেবু টুডু বলেন, “রাস্তার কাজ শুরু হচ্ছে। সব জায়গাতেই রাস্তা হবে।মান অভিমান হয়ে থাকলে আমরা কথা বলে সব মিটিয়ে নেবো“।