কবিতা- অ্যাসিড ও মেয়ে
কলমে – সুদীপা
——————-
অ্যাসিডের সংজ্ঞা কী ?
ছোটবেলায় বইয়ে পড়েছিলাম, “যে হাইড্রোজেন ঘটিত যৌগ জলীয় দ্রবণে বিয়োজিত হয়ে ক্যাটায়ন রূপে H+ আয়ন তৈরী করে এবং ক্ষারকের সাথে বিক্রিয়ায় লবন ও জল উৎপন্ন করে তাকে অ্যাসিড বলে” ।
কিন্তু বড়ো হয়ে জেনেছি নিষ্পাপ স্পষ্টবাদী মেয়েদের সুন্দর ফুলের মতো চেহারায় যে যৌগ হিংস্র হয়ে মেয়েটির প্রতিবাদের সাথে বিক্রিয়া করে তাকে অ্যাসিড বলে ।
অ্যাসিডের কাজ হলো মেয়েদের বাহ্যিক সৌন্দর্য্যের ওপর হামলা করা ।হ্যাঁ , সস্তার প্রেমের প্রস্তাব যে মেয়েরা ঘৃণার চোখে নাকচ করে ,সস্তার নিকোটিনের ধোঁয়ার গন্ধের সাথে নোংরা ইঙ্গিত এবং অস্বস্তিকর প্রেম নিবেদন যে মেয়েরা বিরক্তির চোখে এড়িয়ে চলে সেই মেয়েদের ওপর হামলা করে এই অ্যাসিড ।
যে মেয়েরা মিথ্যে প্রেমের ফাঁদে ধরা না দিয়ে সাহসের সাথে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে পারে অ্যাসিড সেই মেয়েদের ওপর হামলা করে ।
অস্বস্তিকর ছোঁয়ায় মনে এক রাশ রাগ নিয়ে যে মেয়েরা নোংরা গালে চড় মারতে পারে অ্যাসিড সেই মেয়েদের ওপর হামলা করে ।
ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদে যে মেয়েরা পায়ের জুতো খুলে ইভটিজার কে মারতে পারে অ্যাসিড সেই মেয়েদের ওপর হামলা করে । অসভ্য সমাজের
ঘৃণ্য মন্তব্য, সম্ভ্রম নাশ ,বলাৎকারের চেষ্টা করায় যে মেয়েরা আত্মরক্ষার তাগিদে রাস্তায় পাঁচটা লোক জড়ো করে সুবিচার চায় অ্যাসিড সেই মেয়েদের ওপরও হামলা করে ।
অ্যাসিড হলো মুখোশধারী প্রেমিকের অসভ্য বর্বর মনের রাগ মেটানোর শেষ সম্বল,তার হীনমন্যতায় ভোগার হাত থেকে বাঁচার একমাত্র প্রতিশোধ মূলক আক্রমণাস্ত্র ।

সামান্য এক ছটাক অ্যাসিডে একটা মেয়ের মুখ ঝলসে যায়, নষ্ট হয়ে যায় তার বাহ্যিক রূপ ।
সবাই মেয়েটিকে নিয়ে কানাকানি করে , প্রেস, মিডিয়ায় ঘটনার তোলপাড় হয়, মেয়েটিকে সহানুভূতি দেখায় ।
অতপর সব কিছু থমকে যায় এক সময়।
সবাই তাকে দেখে হাসে ,ঠাট্টা করে , আবার রূপের রূপান্তরে ভয় পেয়ে পালিয়েও যায় । সে রাস্তা দিয়ে গেলে তাকে দেখে নাক সিটকানো শুরু হয় এই ঘৃণ্য সমাজের ।
এত সব কিছু সহ্য করেও মেয়েটি বাঁচে ,
প্রতিদিন প্রতি মুহূর্ত সে কাঁদার জন্য বাঁচে , হাসার জন্য বাঁচে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য বাঁচে।
কারণ তার মুখ পুড়ে গেলেও মন ক্ষত বিক্ষত হলেও তার স্বপ্ন কোনদিন পুড়ে যায়না ।
মেয়েটি তার পোড়া বাহ্যিক রূপ নিয়ে প্রতিনিয়ত তার অবচেতন,চেতন অচেতন,মনে স্বপ্ন দেখে উঠে দাঁড়ানোর, এগিয়ে চলার , মুখের উপর যোগ্য জবাব দেবার । প্রমাণ করে দেয় অ্যাসিডের ব্যর্থতা । জেদের তীব্র আগুনে পুড়ে নিজেই হয়ে ওঠে জলন্ত অ্যাসিড । তারপর এই মুখোশধারী সমাজের মুখে ছুঁড়ে দেয় এক ছটাক অপমানের যোগ্য জবাব ।
তার পোড়া মুখ আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে বলে যায় অ্যাসিড তুমি ব্যার্থ
মুখ পোড়াতে পারলেও আমার স্বপ্ন তুমি পুড়িয়ে দিতে পারোনি ।
আর এখানেই আমার জয় ।অ্যাসিডের সাথে যুদ্ধে পোড়ারমুখী প্রতিবাদী মেয়ের জয় ।

