আবহাওয়া দক্ষিণবঙ্গ শিক্ষা লাইফ স্টাইল স্বাস্থ্য ভ্রমন ধর্ম কৃষি কাজ ক্রাইম

পঞ্চায়েত প্রধানের নাগরিকত্ব নিয়ে তীব্র বিতর্ক, নথি যাচাইয়ের দাবিতে প্রশাসনের দ্বারস্থ গ্রামবাসী! প্রতিক্রিয়ায় বিজেপির তীব্র আক্রমণ

krishna Saha

Published :

WhatsApp Channel Join Now

নিজস্ব সংবাদদাতা, পূর্ব বর্ধমান:-পূর্ব বর্ধমান জেলার পূর্বস্থলী–২ নম্বর ব্লকের মেড়তলা গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল কংগ্রেসের প্রধান সন্তোষী দাসের নাগরিকত্ব নিয়ে শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক। স্থানীয় গ্রামবাসীদের একাংশের অভিযোগ, তিনি ভারতীয় নাগরিক নন—বাংলাদেশি নাগরিক হয়েও ভুয়ো নথিপত্রের মাধ্যমে পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে প্রধান পদে নির্বাচিত হয়েছেন।

অভিযোগকারীদের দাবি, পঞ্চায়েত প্রধানের রেশন কার্ড, ভোটার কার্ড-সহ একাধিক সরকারি নথিতে গুরুতর অসঙ্গতি রয়েছে। গ্রামবাসীদের অভিযোগ অনুযায়ী, সন্তোষী দাসের রেশন কার্ড তৈরি হয়েছিল মুর্শিদাবাদ জেলার বেলডাঙা–২ ব্লকের আন্দুলবেড়িয়া এলাকা থেকে। অথচ বর্তমানে তিনি পূর্ব বর্ধমানের বাসিন্দা হিসেবে পরিচিত।

আরও অভিযোগ, তাঁর ভোটার কার্ডে বাবার নাম মন্টু সরকার উল্লেখ থাকলেও, রেশন কার্ডে পরিবারের প্রধান হিসেবে পঙ্কজ বাড়ুইয়ের নাম রয়েছে। শুধু তাই নয়, রেশন কার্ডের তথ্য অনুযায়ী মাত্র ১২ বছর বয়সেই তাঁর রেশন কার্ড তৈরি হওয়ার উল্লেখ রয়েছে, যা নিয়ে এলাকাবাসীদের মধ্যে প্রবল সন্দেহ তৈরি হয়েছে।

গ্রামবাসীদের আরও দাবি, তাঁরা নিজেরাই মুর্শিদাবাদের বেলডাঙা এলাকায় খোঁজখবর নিয়ে দেখেছেন। অভিযোগ অনুযায়ী, রেশন কার্ডে যে ঠিকানা উল্লেখ রয়েছে, সেখানে ওই নামে কোনও ব্যক্তির অস্তিত্ব নেই। তাঁদের অভিযোগ, বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করে ভুয়া নথিপত্রের মাধ্যমে পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন সন্তোষী দাস। এমনকি তাঁর স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনও ২০১০ সালের পর বাংলাদেশ থেকে ভারতে এসেছেন বলেও অভিযোগ তুলেছেন তাঁরা।

এই সমস্ত অভিযোগের ভিত্তিতে ইতিমধ্যেই গ্রামবাসীদের পক্ষ থেকে পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক এবং কালনার মহকুমা শাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দেওয়া হয়েছে। তাঁদের দাবি, পঞ্চায়েত প্রধানের সমস্ত নথির পূর্ণাঙ্গ ও স্বচ্ছ তদন্ত হোক। বিশেষ করে মুর্শিদাবাদ জেলায় থাকা রেশন কার্ড সংক্রান্ত নথি যাচাই করা হলেই প্রকৃত সত্য সামনে আসবে বলে মনে করছেন তাঁরা।

এ প্রসঙ্গে পঞ্চায়েত প্রধান সন্তোষী দাস অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,
“আমার জন্ম এই দেশেই। যেখানে অভিযোগ উঠেছে, সেখানে গিয়ে আমি সমস্ত বৈধ নথি দেখাতে প্রস্তুত”।

See also  দক্ষিন দামোদর থেকে পরিয়াযীদের বাড়ি ফেরানো হল ১৫ টি বাসে ।

অন্যদিকে, পূর্বস্থলী উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায় মৌখিকভাবে জানান, পঞ্চায়েত প্রধানের সমস্ত নথিই সঠিক। যদিও তিনি ক্যামেরার সামনে এই বিষয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি। এই ঘটনাকে ঘিরে রাজনৈতিক উত্তেজনাও বেড়েছে। বিজেপির পক্ষ থেকে অভিযোগের সুর আরও চড়ানো হয়েছে। বিজেপি নেতা মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র বলেন, পূর্বস্থলী–২ ব্লকের মেড়তলা পঞ্চায়েতের প্রধানের নাগরিকত্ব নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। তাঁর দাবি, বর্তমান শাসক দলের আমলে একাধিক পঞ্চায়েত এলাকায় বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশকারী ব্যক্তিরা ভুয়া নথিপত্রের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন।

মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্রের অভিযোগ, এঁদের অনেকেই প্রকৃত অর্থে জনগণের ভোটে নির্বাচিত নন, বরং ছাপ্পা ভোট ও নির্বাচনী অনিয়মের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছেন। বিজেপির পক্ষ থেকে দাবি জানানো হয়েছে, অভিযুক্ত সকল জনপ্রতিনিধির নাগরিকত্ব সংক্রান্ত নথির পূর্ণাঙ্গ, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ যাচাই হোক। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে নির্বাচন কমিশন যেভাবে ভোটার তালিকা ও নাগরিকত্ব সংক্রান্ত তথ্য যাচাইয়ের প্রক্রিয়া শুরু করেছে, তাতে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীরা আর রেহাই পাবে না।

এ বিষয়ে কালনার মহকুমা শাসক অহিংসা জৈন ফোন মারফত জানান,
“আমরা অভিযোগ পেয়েছি। সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত প্রধানকে হেয়ারিংয়ে ডাকা হবে। তাঁর কাছে কী কী নথি রয়েছে, সব দিক খতিয়ে দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে”।

ঘটনাকে ঘিরে এলাকায় রাজনৈতিক চাপানউতোর তীব্র হয়েছে। প্রশাসনিক তদন্তের দিকেই এখন তাকিয়ে সাধারণ মানুষ ও রাজনৈতিক মহল।

krishna Saha

আমার নাম কৃষ্ণ কুমার সাহা, আমি ফুল টাইম সাংবাদিকতা করি।গত ৮ বছর ধরে এই পেশায় আছি