প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় ( বর্ধমান ) :- টাকা হাতানোর জন্য এক ব্যবসায়ী ও তাঁর গাড়ি চালককে অপহরণ করে খুনের অভিযোগ উঠলো দুস্কৃতিদের বিরুদ্ধে। অপহৃতরা হলেন শামিম খাঁন (২১)ও বরুণ মুর্মু (২৬)।বীরভূম জেলার ইলামবাজার থানার ভগবতিবাজারে ব্যবসায়ী শামিমের বাড়ি ।আর তাঁর পিকআপ ভ্যানের চালক বরুণ মুর্মুর বাড়ি একই থানা এলাকার নোলার গ্রামে।
ব্যবসার ফাস্ট ফুড সামগ্রী কেনার জন্য ৪ আগষ্ট ইলামবাজার থেকে কলকাতায় যাওয়ার পথে শামিম ও বরুণ অপহৃত হয়
।পরদিন পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর থানার
নবগ্রাম এলাকায় ২ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে থাকা একটি ধাবার সামনে থেকে উদ্ধার হয় পিকআপ ভ্যানটি ।গাড়ির চালকের হদিশ না পেয়ে জামালপুর থানার পুলিশ একটি মামলা রুজু করে পিকআপ ভ্যানটি বাজেয়াপ্ত করে।
বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ চালিয়েও পরিবার সদস্যদের হদিশ না পেয়ে ৮ আগষ্ট ব্যবসায়ী শামিমের পরিবার সদস্য শামিত খাঁন এরপর জামালপুর থানায় অপহরণের অভিযোগ দায়ের করে।তার ভিত্তিতে মামলা রুজু করে তদন্তে নেমে জামালপুর থানার পুলিশ হুগলির ডানকুনি থানার সাহায্য নিয়ে বুধবার রাতে তিন জনকে আটক করে। পুলিশ জানিয়েছে ধৃতদের নাম আকতার আলী মল্লিক , শেখ শামিম ওরফে বাবু ওরফে গোলতাবলে ও করিম শেখ ওরফে কালো । ধৃত তিনজনই ডানকুনি থানার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা ।
ডানকুনি থানায় বসিয়ে বুধবার গভীর রাত পর্যন্ত পুলিশ তিনজনকে ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদ চালয়। জিজ্ঞাসাবাদেই
উঠে অসে চাঞ্চল্যকর তথ্য।পুলিশ সূত্রে খবর
, জেরায় ধৃতরা কবুল করে,“ তারা শামিম ও বরুনকে অপহরণ করার পর তাদের খুন করে ।তারপর তাঁদের দেহ তারা ফেলেদেয় ডানকুনির খালে ।পাশাপাশি পুলিশের নজর ঘোরাতে তারা পিকআপ ভ্যানটি জামালপুরের
নবগ্রামে জাতীয় সড়কের ধারে থাকা একটি ধাবার সামনে দাঁড় করিয়ে রেখে পালায়“ ।
জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্য উঠে আসার পরেই
পুলিশ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে ।
ব্যবসায়ী ও পিকআপ ভ্যানের চালকের দেহ উদ্ধারের জন্য ধৃতদের সঙ্গে নিয়ে পুলিশ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ডানকুনির খালে খোঁজ চালানো শুরু করে । জেসিবি দিয়ে ও ডুবুরি নামিয়ে মৃতদেহের খোঁজ চালানো হয় । তবে ওইদিন দেহদুটির কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি । মৃতদেহের সন্ধানে শুক্রবার পুলিশ কুকুর নিয়ে ওই একই এলাকায় তল্লাশি চালান পুলিশ কর্তারা । খুনের ঘটনা আড়াল করতে ধৃতরা বিভ্রান্ত করছে কিনা সেই বিষয়টিও পুলিশ খতিয়ে দেখছে । ব্যবসায়ী শামিমের আত্মীয় জামির খাঁন এদিন বলেন,’ ব্যবসার মোটা টাকা হাতানোর জন্যই আপহরণকারীরা শাামিম ও বরুণ মুর্মুকে খুন করেছে দেহ গায়েব করে দিয়েছে ’।
রাতে তিন ধৃতকে ডানকুনি থেকে জামালপুর থানায় তুলে নিয়ে আসে পুলিশ।শুক্রবার তিন ধৃতকে পেশ করা হয় বর্ধমান আদালতে।তদন্তকারী অফিসার তদন্তের প্রয়োজনে ধৃতদের ১৪ দিন নিজেদের হেপাজতে নিতে চেয়ে বর্ধমান আদালতে আবেদন জানান। সিজেএম ধৃতদের ১০ দিন পুলিশ হেপাজতের নির্দেশ দিয়েছেন ।
এসডিপিও আমিনুল ইসলাম (বর্ধমান সদর দক্ষিন) এদিন জানান ,“পিকআপ ভ্যানটি ৫ আগষ্ট নবগ্রামে ২ নম্বর জাতীয় সড়কে পাওয়া যায়। ওই গড়িতে থাকা ব্যবসায়ী শামিম শেখ ও গাড়ির চালক বরুণ মুর্মুকে অপহরণের ঘটনা নিয়ে তাঁদের পরিবার ৮ আগষ্ট জামালপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করে ।
পিকআপ ভ্যানটির সূত্র ধরে তদন্ত চালিয়ে অপহরণের ঘটনায় ডানকুনির ৩ জনকে ধরা হয় । জেরায় তারা কবুল করে টাকা হাতিয়ে নিয়ে পিকআপ ভ্যানে থাকা দু’জনকে খুন করে দেহ ডানকুনির সেচখালে ফেলে দিয়েছে ।ধৃতদের কথা মতো পুলিশ ডানকুনির সেচখালে তল্লাশি চালায়। যদিও দেহ উদ্ধার হয় নি। ধৃতদের পুলিশি হেপাজতে নিয়ে দেহ উদ্ধারের জন্য আরও জেরা করা হবে“ ।