আবহাওয়া দক্ষিণবঙ্গ শিক্ষা লাইফ স্টাইল স্বাস্থ্য ভ্রমন ধর্ম কৃষি কাজ ক্রাইম

মানবতা ও ন্যায়ের মধ্যে লড়াই হলে কাকে সমর্থন করবেন ?

krishna Saha

Published :

WhatsApp Channel Join Now

রথীন রায়

দেখা যায় অনেক সময় শুধুমাত্র সাধারণ মানুষই নয় বিচারকরাও দ্বিধাগ্রস্ত চিন্তিত হয়ে যান অনেক জটিলতার প্রশ্নে ! এমনকি দেবতারা বুঝতে পারেন না মানবতা ও ন্যায়ের মধ্যে লড়াই হলে কাকে সমর্থন করবেন ! সেখানে সাধারণ মানুষ তো অবশ্যই চিন্তাগ্রস্ত হবে এ বিষয় নিয়ে কোন কথাই নেই !

 

পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতবর্ষ কৃষিপ্রধান দেশ ! আর এই পশ্চিমবঙ্গে ধান হলো অন্যতম প্রধান কৃষিজ ফসল ! আর পশ্চিমবঙ্গের শতকরা ৭০ ভাগ মানুষ কৃষিজীবী ! সুতরাং কৃষির প্রতি প্রত্যেকেরই একটা যে সহানুভূতি আছে এটা যেমন সত্য , ঠিক তেমনি কৃষিকাজের সমস্যা ও সমাধানের পথও কমবেশি সবারই জানা !

 

দেখা যায় পশ্চিমবঙ্গে মূলত দু’রকম ধানের চাষ বেশি হয় , বর্ষার এবং গ্রীষ্মের ! বেশ কয়েকবছর দেখা যাচ্ছে ধান পাকার মুহূর্তে কোন না কোন ঘূর্ণিঝড় পশ্চিমবঙ্গের বুকে আছড়ে পড়ছে ! সুতরাং এমতাবস্তায় চাষীদের কঠোর পরিশ্রমের এবং সমস্ত পূঁজির মাঠের ধান ঘরে তোলার জন্য তারা প্রাণপণ চেষ্টা করেন ! যুগের সাথে সাথে কৃষি ব্যবস্থাও আধুনিকীকরণ হয়েছে ! আগে কাস্তে দিয়ে হাতের সাহায্যে ধান কাটা হতো যেখানে, সেখানে এখন চাকা দেওয়া হারভেস্টার এবং চেইন দেওয়া হারভেস্টার এসেছে ! এগুলি আবার ছোট-বড় নানা আকৃতির রয়েছে ! এগুলিতে ধান কাটার ফলে যেমন কম সময়ের মধ্যে চাষীরা তাদের ধান একেবারে ঝাড়াই এর মাধ্যমে বাড়িতে নিয়ে যেতে পারছেন ; তেমনি সাথে সাথে একটা সমস্যাও বাড়ি বয়ে নিয়ে যেতে হচ্ছে !

 

যে সমস্যাটা হলো ধান শুকনো করার ! ধানের দাম নির্ভর করে চাল কেমন হয়েছে তার ওপর এবং ধানের রঙের ওপর ! হারভেস্টারের মাধ্যমে কাটা ধান সাধারণত ১৫ থেকে ২৫ ভাগ কাঁচা থাকে ! এই কাঁচা ধানকে যদি না শুকনো করা হয় তাহলে সেগুলি সম্পূর্ণ ধানকে নষ্ট করে দেবে ! যার জন্য ধানের দাম একেবারে তলানিতে নেমে যাবে ! সুতরাং ধান কাটার পরে ন্যূনতম কম সময়ের মধ্যে ঐ ধানকে শুকনো করতে হবে এটাই চাষীদের কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায় !

See also  কৃষকদের উৎসাহ করতে ধান চাষ করতে মাঠে নামল বিধায়ক

 

যার জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকার থেকে একটি প্রকল্প করা হয় যে , প্রতি গ্রামে বা পাড়াতে একটি করে পাকা ইঁটের উঠোন করে দেওয়া হবে ধান শুকানোর বা কৃষিজ ফসলের কাজে ব্যবহারের জন্য ! এখন প্রকল্প তো সূচনা হয়ে গেল ! কিন্তু তার বাস্তবতা কোথায়, তা প্রতিটি পশ্চিমবঙ্গবাসী আমরা জানি ! তা ছাড়া যে পরিমান জায়গা সরকার করে দেবে, তাতে একই সময়ের মধ্যে বিপুল পরিমাণ ধান শুকানো করা সম্ভব নয় !
তাই চাষিরা বাধ্য হয়ে তাদের বাড়ির কাছাকাছি পাকা পিচের রাস্তার ওপর ধান, গম প্রভৃতি শুকনো করতে শুরু করে ! পিচ কালো হওয়ায় খুব তাড়াতাড়ি গরম হয় এবং দীর্ঘক্ষণ তাপ ধরে রাখায় ধান খুব তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায় ! অপরদিকে কিছু ধান আবার হপার নামক মেশিনের সাহায্যে ঝাড়া হয় ! কিছু আবার হাতে কেটে মেশিনের সাহায্যে ঝাড়া হয় ! এভাবে ঝাড়ার পর ধানসহ টুকরো খড়ের যে অবশিষ্টাংশ পোয়াল বা পুয়াল থাকে সেগুলোও পীচরাস্তার উপর দেওয়া হয় ! এতে চাষীদের সম্পূর্ণ লাভ হয় !

 

কিন্তু এটি করা সংবিধান তথা আইন বিরোধী ! কারণ এই রাস্তাতে বাইক থেকে যেকোন প্রকার যানবাহন চলাচল করতে যেমন অসুবিধা হয় ; ঠিক তেমনি এই ধানগুঁড়ো এবং খড়কুটো বাতাসে উড়ে বাইক ও গাড়িচালকদের চোখে-নাকে-মুখে লেগে ভয়াবহ দুর্ঘটনার সহায়তা করে ! যার জন্য স্থানীয় থানা থেকে বারবার এই বিষয়ে চাষীদের সচেতন করা হয় এবং কখনো-সখনো তাদেরকে কেসও দেওয়া হয় !

 

কিন্তু দূর গ্রামেগঞ্জে পথচারীরা পড়েন মহা সমস্যায় ! তারা যদি চাষিদের দুঃখ দুর্দশা বুঝতে যান, তাহলে ভাববেন একটু অপেক্ষা করে সাবধানে যাব, চাষীরা ধান তুলে নিয়ে বাড়ি যাক ! আর যদি আইন ভাবেন, তাহলে আপনি অভিযোগ জানাতে পারেন সরকারি দপ্তরে ! আর এই দুটো নীতি নিয়েই সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস হয়ে ওঠে ধান কাটার সময় ! যা পূর্বে ছিল, বর্তমানেও আছে এবং এটাও নিশ্চিত ভবিষ্যতেও থাকবে !
তাই আপনার চিন্তাভাবনা ভাগ করুন সবার সাথে ! যাতে করে ভবিষ্যতের একটা সঠিক বাস্তবসম্মত রূপরেখা তৈরি করা যায় এই বিষয়ে !!

krishna Saha

আমার নাম কৃষ্ণ কুমার সাহা, আমি ফুল টাইম সাংবাদিকতা করি।গত ৮ বছর ধরে এই পেশায় আছি