আবহাওয়া দক্ষিণবঙ্গ শিক্ষা লাইফ স্টাইল স্বাস্থ্য ভ্রমন ধর্ম কৃষি কাজ ক্রাইম

জেনে নিন বেগুন চাষের নিয়ম, কী ভাবে করবেন ?

krishna Saha

Published :

WhatsApp Channel Join Now
বেগুন সবজি হিসেবে সুস্বাদু। এর পুষ্টিগুণও মন্দ নয়। প্রায় সারা বছরই চাষ করা যায় এই সবজি। দৈনন্দিন চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি আর্থিক স্বচ্ছলতা আনা সম্ভব। তাহলে আসুন জেনে নেই বেগুন চাষের নিয়ম-প্রায় সব মাটিতেই বেগুন জন্মে। তবে দো-আঁশ, এটেল দো-আঁশ ও পলিমাটি বেশি উপকারী। এছাড়া শীতকালে ফলন বেশি হয়।

রোপণঃ- প্রথমে বীজতলায় চারা তৈরি করে নিন। এরপর ৫-৬ সপ্তাহ বয়সের চারা ৭৫ সেন্টিমিটার দূরত্বে সারি করে ৬০ সেন্টিমিটার দূরে দূরে লাগাতে হয়। গাছের আকার অনুযায়ী দূরত্ব ১০-১৫ সেন্টিমিটার কম-বেশি করা যায়।
সময়মাঘ-ফাল্গুন মাসে গ্রীষ্মকালীন, বৈশাখ মাসে বর্ষাকালীন, ভাদ্র-আশ্বিন মাসে শীতকালীন ফসলের জন্য চারা রোপণ করতে হয়।

বেগুনের বপন/রোপণ প্রযুক্তি—-বীজ হারঃ—- এক বিঘা জমিতে চারা লাগানোর জন্য ১৩-১৮ গ্রাম (১০ ফুট × ৩.২৫ ফুট বীজতলায় ৮ গ্রাম) বীজ লাগে।বীজ বপন সময় ও পদ্ধতিঃ—-শীতকালীন = আগস্টের শেষ থেকে মধ্য অক্টোবর পর্যন্ত (মধ্য শ্রাবন থেকে আশ্বিন মাস)

বর্ষাকালীন =জানুয়ারীর প্রথম থেকে মধ্য এপ্রিল পর্যন্ত (মধ্য পৌষ) বেড করে বীজ ছিটিয়ে দিতে হবে । চারার বয়সঃ—- ৩০-৩৫ দিন বয়সের চারা উপযুক্ত (৫-৬ টি পাতা)। তবে ২ মাস পর্যন্ত লাগানো যায়। জমি তৈরীঃ—- বেডের আকারঃ দৈর্ঘ্য প্রয়োজনমত, প্রস্থঃ ২.৩৩ ফুট। এক (১) ফুট প্রশ্বস্থ এবং ৮ ইঞ্চি গভীর নালা থাকতে হবে। সারি ও চারার দূরত্বঃ—-১.৩৩ ফুট × ২.৫ ফুট (২.৩৩ ফুট বেডে একটি সারি + ১ ফুট নালা)। রোপণ দূরত্ব নির্ভর করে জাত ও মাটির উর্বরতার উপর।

বেগুন চাষে সার ব্যবস্থাপনা প্রযুক্তি—বেগুনের ভাল ফলন পাওয়ার জন্য সকল জাতের জন্য ১ শতাংশ (ডেসিমাল) জমির জন্য নিম্নোক্ত হারে সার প্রয়োগ করতে হবে—-

১ শতাংশ হিসেবে গোবর/ জৈব সার ৪০ কেজি, ইউরিয়া ১.২০ কেজি, টিএসপি ৮১০ গ্রাম, এমপিও/ পটাশ ৮১০ গ্রাম, জিপসাম ৪০০ গ্রাম, দস্তা ৫০ গ্রাম ও বরিক ৪০ গ্রাম ।

সার প্রয়োগ পদ্ধতিঃ—-সমুদয় গোবর, টিএসপি, জিপসাম, দস্তা, বোরণ এবং এমপিও/পটাশ শেষ চাষের সময় মাটিতে প্রয়োগ করতে হবে। চারা রোপণের পর ১০-১৫ দিন প্রথমবার, ফল ধরা শুরু হলে দ্বিতীয় বার এবং ফল আহরণের মাঝামাঝি সময়ে তৃতীয় বার শতাংশে ৪০০ গ্রাম করে ইউরিয়া এবং ২০০ গ্রাম করে পটাশ প্রয়োগ করতে হবে।

বেগুন চাষে ব্যবহৃত অন্যান্য প্রযুক্তিঃ— সেচ ব্যবস্থাঃ—-বেডের দু’পামে নালা দিয়ে জমিতে সেচ দেয়া সুবিধাজনক। নালায় সেচের পানি বেশিক্ষণ ধরে রাখা যাবে না, গাছের গোড়া পর্যন্ত মাটি ভিজে গেলে নালার পানি ছেড়ে দিতে হবে। খরিফ মৌসুমে জমিতে পানি যাতে না জমে সেজন্য পানি নিষ্কাশনের জন্য জমির চারপাশে নালা রাখতে হবে।
বীজ উৎপাদনঃ—বেগুনের বীজ উৎপাদন খুবই সহজ। এ উদ্দেশ্যে ক্ষেতের মধ্য হতে ভাল দেখে গাছ নির্বাচন করে ফুল ফোটার পূর্বেই এদের ফুল থলে দ্ধারা ঢেকে দিতে হয় অথবা অন্যান্য জাত হতে অন্তত ৪ মিটার দূরে লাগানো উচিৎ যাতে পর-পরাগায়ন না ঘটে। বীজের জন্য সম্পূর্ণ পাকা ফল সংগ্রহ করা উচিৎ। ফল যত পাকা হবে বীজও তত পুষ্ট হবে।

See also  এবার সোশ্যাল মিডিয়াতে নতুন ট্রেন্ডিং ভালোবাসার ঝাল মুড়ি হাফ ১০ ফুল ২০
টমেটো ও বেগুনের জোড় কলম প্রযুক্তিঃ— ব্যাক্টেরিয়াজনিত ঢলে পড়া রোগ ও শিকড়ের গিঁট রোগ বেগুন এবং আগাম টমেটোর ব্যাপক ক্ষতি করে। মাটিবাহিত এ রোগ থেকে ফসল রক্ষা করা তথা উচ্চ ফলন নিশ্চিত করার জন্য বন্য জাতের বেগুনের উপর জোড় কলমের মাধ্যমে টমেটো ও বেগুন চাষের একটি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে। উল্লেখ্য যে, বন্য বেগুনের মধ্য পীত বেগুন ও কাঁটা বেগুন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন। এদের মধ্যে পীত বেগুনকেই আদিজোড় গাছ হিসেবে ব্যবহার করা ভাল।

জোড় কলম তৈরি পদ্ধতিঃ *টমেটোর চারা ২৫-৩০ দিন এবং বেগুনের চারা ৩০-৩৫ দিন বয়সের হলে জোড় কলম করার উপযুক্ত হয়।*বন্য বেগুনের চারা ৪৫-৫০ দিনের বা ৪-৫ পাতা বিশিষ্ট হলে তা জোড় কলম করার উপযুক্ত হয়।
*টমেটো বা বেগুনের চারা বীজতলা থেকে উঠিয়ে শিকড়ের মাটি ধুয়ে কিছুটা পানিসহ একটি পাত্রে গোড়া ডুবিয়ে রাখতে হবে।

*পীত বেগুনের চারাসহ পলিথিন ব্যাগটি নিয়ে ব্লেডের সাহায্যে চারা ২-৩ পাতাসহ মাথার উপরের অংশ কেটে ফেলতে হবে। কান্ডের কাঁটা মাথাকে প্রায় ১ সেমি গভীর করে ২ ভাগে লম্বালম্বি কাটতে হবে।

*এরপর আবাদি টমেটো বা বেগুনের চারার মাথার উপরের অংশের প্রায় ২ ইঞ্চি কেটে বড় পাতা ফেলে দিতে হবে। কাটা অংশের নিচের ২ পাশ থেকে প্রায় ১ সেমি লম্বা ‘V’ অক্ষরের মত কাটতে হয়।

*এবার টমেটো বা বেগুনের ‘V’ এর ন্যায় মাথাটি (উপজোড়) বন্য বেগুন চারার কাটা স্থানে (আদি জোড়) ঢুকিয়ে দিতে হবে।

*পরবর্তীকালে পলিথিন স্ট্রিপ (ফিতা) দিয়ে বা গ্রাফটিং ক্লিপ দিয়ে জোড়াটি ভালভাবে আটকে দিতে হবে এবং গাছের উপরের অংশ পানি ছিটিয়ে দিতে হবে।
*জোড়ার স্থানে যেন পানি না লাগে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কলম করার কাজ বিকেল বেলা করাই ভাল।

কলম গাছের পরিচর্যাঃ- কলম করা গাছ বাশেঁর শলা দিয়ে তৈরী খাঁচা ঘরে রেখে পলিথিন ও চট বা কালো কাপড় দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।

*কলম করার পর ৭ দিন প্রতি দিনে ৩-৪ বার পানি ছিটিয়ে দিয়ে আবার ঢেকে রাখতে হবে

*বৃষ্টি না হলে রাতে খাঁচার আচ্ছাদন খুলে রাখা ভাল
*দিনের বেলা গাছ ঢেকে রাখতে হবে

See also  সেরা কৃষক সন্মান পেলেন পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বরের তরুণ চাষি আমিরুল
*এক সপ্তাহ পর পলিথিন সরিয়ে শুধু চট বা কাল কাপড় দিয়ে ১ সপ্তাহ ঢেকে রাখতে হবে।

*কলম করার ১৫-২০ দিন পর গাছ মাঠে লাগানোর উপযুক্ত হয।
*মাঠে কলমের চারা লাগানোর ৭-১০ দিন পর বন্য বেগুনের গাছের গজানো ডালপালা কেটে ফেলতে হবে।

*চারা মাঠে লাগানোর ১৫-২০ দিন পরে পলিথিনের বাঁধন খুলে দেওয়া আবশ্যক। গ্রাফটিং ক্লিপ তাৎক্ষনিকভাবে খুলে সংরক্ষণ করা যায় পরবর্তীকালে ব্যবহারের জন্য।

                                   রোগও প্রতিকার
বেগুনের ঘাস ফড়িং—পোকার আক্রমণের লক্ষণ:—এ ফড়িং পাতার শিরার মাঝখানের অংশ খেয়ে ফেলে। তাই সালোকসংশ্লেশনের হার কমে যায়।
আক্রমণের আগে করণীয়ঃ
* নিয়মিত মাঠ পরিদর্শন করে আক্রমণের শুরুতেই ব্যবস্থা নিন
আক্রমণ হলে করণীয়ঃ—এটি সাধারণত তেমন ক্ষতিকর নয়, তবে ব্যাপক আক্রমণ হলে- * আলোর ফাঁদ ব্যবহার করা । * শতকরা ২৫ ভাগ পাতা ক্ষতিগ্রস্থ হলে অনুমোদিত কীটনাশক যেমন- ভিটাব্রিল ৮৫ ডব্লিউপি ৩ গ্রাম বা সাইপারফস ২ মিলি/ লি. হারে পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করা।

বেগুনের ক্ষুদ্র লাল মাকড়—পোকার আক্রমণের লক্ষণ:—- এরা পাতার রস চুষে খায় তাই পাতা বিন্দু বিন্দু হলুদে দাগের মত হয়ে পড়ে সাদাটে হয়ে যায়।অতি ক্ষুদ্র মাকড় পাতার উল্টো দিকে দেখা দেয়।কখনও কখনও এরা এক যায়গায় ঘনভাবে জড় হয়। তখন এদের সহজেই খালি চোখে দেথা যায়।
আক্রমণের আগে করণীয়ঃ— ১. আগাম বীজ বপন করা। ২. সুষম সার ব্যবহার করা। ৩. সঠিক দুরত্বে চারা রোপন করা। ৪. ক্ষেত পরিস্কার পরচ্ছন্ন রাখা । ৫. জমিতে পরিমিত পরিমানে জৈবসার প্রয়োগ করা । ৬. পানি স্প্রে করা বা স্প্রিংলার সেচ দেয়া। ৭. নিয়মিত মাঠ পরিদর্শন করে আক্রমণের শুরুতেই ব্যবস্থা নিন।

আক্রমণ হলে করণীয়ঃ—-১. ক্ষেত থেকে মাকড় বা ডিমসহ আক্রান্ত গাছ তুলে ফেলা/ ডাল কেটে দেয়া অপসারণ করা। ২. মাকড় নাশক বা সালফার যেমন: থিওভিট/ কুমুলাস/ ভার্টিমেক বা ইনসাফ ইত্যাদি যে কোন একটি ২ মিলি বা ২ গ্রাম /লিটার হারে পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করা ।

                          বেগুনের সুড়ঙ্গকারী পোকা
পোকার আক্রমণের লক্ষণ:—-ক্ষুদ্র কীড়া পাতার দুইপাশের সবুজ অংশ খেয়ে ফেলে। তাই পাতার উপর আঁকা বাঁকা রেখার মত দাগ পড়ে এবং পাতা শুকিয়ে ঝড়ে যায়।

আক্রমণের আগে করণীয়ঃ—–১. আগাম বীজ বপন করা। ২. সুষম সার ব্যবহার করা। ৩. সঠিক দুরত্বে চারা রোপন করা।

See also  বৃদ্ধাশ্রমে জন্মদিন পালন করে নজির সৃষ্টি করলো মহর্ষি পালের পরিবার।
আক্রমণ হলে করণীয়ঃ—-১. আক্রান্ত পাতা সংগ্রহ করে ধ্বংশ করা বা পুড়ে ফেলা। ২. আঠালো হলুদ ফাঁদ স্থাপন করা । ৩. সাইপারমেথ্রিন গ্রুপের কীটনাশক ( যেমন: কট ১০ ইসি) ১ মি.লি. / লি. হারে পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করা।
                            বেগুনের লেদা পোকা
পোকার আক্রমণের লক্ষণ: কীড়া পাতার সবুজ অংশ খেয়ে ফেলে। তাই পাতা ছিদ্র হয়ে যায়।

আক্রমণের আগে করণীয়ঃ—১. আগাম বীজ বপন করা। ২. সুষম সার ব্যবহার করা। ৩. সঠিক দুরত্বে চারা রোপন করা।

                          আক্রমণ হলে করণীয়
১. পোকাসহ আক্রান্ত পাতা সংগ্রহ করে ধ্বংশ করা বা পুড়ে ফেলা।
২. সাইপারমেথ্রিন গ্রুপের কীটনাশক ( যেমন: কট ১০ ইসি) ১ মি.লি. / লি. হারে পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করা।

                            বেগুনের জাব পোকা
পোকার আক্রমণের লক্ষণ:—পোকা গাছের কচি পাতা ও ডগার রস শুষে খেয়ে গাছকে দুর্বল করে ফেলে ।
আক্রমণের আগে করণীয়ঃ—আগাম বীজ বপন করা ।ক্ষেত পরিস্কার পরচ্ছন্ন রাখা । সুষম সার ব্যবহার করা । সঠিক দুরত্বে চারা রোপন করুন । প্রাথমিক অবস্থায় শুকনো ছাই প্রয়োগ করা ও নিয়মিত মাঠ পরিদর্শন করে আক্রমণের শুরুতেই ব্যবস্থা নিন ।

আক্রমণ হলে করণীয়ঃ—- * গাছের আক্রান্ত অংশ অপসারণ করা। * পরিস্কার পানি জোরে স্প্রে করা। * হলুদ রঙের ফাঁদ ব্যবহার করা । * তামাকের গুড়া (১০গ্রাম), সাবানের গুড়া (৫গ্রাম) ও নিমের পাতার নির্যাস প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ব্যবহার করা । * প্রতি গাছে ৫০ টির বেশি পোকা দেখা দিলে এডমেয়ার ২০ এসএল ০.৫ মিলি./লি হারে পানিতে শিশিয়ে স্প্রে করা।

** প্রয়োজনে গাছ লাগানোর ১৫ দিন পর গাছের গোড়ায় গাছ প্রতি ১ মুষ্টি সারের মিশ্রনের (১০ গ্রাম ইউরিয়া+৫ গ্রাম পটাশ) সাথে ৫-৭ দানা কার্বোফুরান প্রয়োগ করা যেতে পারে।

#বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ– ফলের উপর কোন ভাবেই কীটনাশক দেয়া যাবে না। যদি দিতেই হয় তবে খাওয়ার উপযুক্ত ফল তোলার পর । স্প্রে করার পর ১৫ দিনের মধ্যে সেই সবজি খাবেন না বা বিক্রি করবেন না ।

বেগুন সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনাঃ–চারা লাগানোর ২-৩ মাস পরই ফসল তোলার সময় হয়। জাতভেদে ফল তোলার সময়ের তারতম্য হতে পারে। খাওয়ার উপযোগী ফল প্রতি সপ্তাহে গাছ থেকে ধারাল ছুরির সাহায্যে বেগুন কাটা ভাল। ফল বোঁটাসহ রাখলে বেশিদিন সংরক্ষণ করা যায়।

krishna Saha

আমার নাম কৃষ্ণ কুমার সাহা, আমি ফুল টাইম সাংবাদিকতা করি।গত ৮ বছর ধরে এই পেশায় আছি