আবহাওয়া দক্ষিণবঙ্গ শিক্ষা লাইফ স্টাইল স্বাস্থ্য ভ্রমন ধর্ম কৃষি কাজ ক্রাইম

খই

By krishna Saha

Published :

WhatsApp Channel Join Now

খই
———-
কলমে – সুদীপা
———————
রোজ অফিস যাবার পথে দেখি বড় রাস্তার বাস স্ট্যান্ডের কাছে একটা বছর দশেকের ছিপছিপে চেহারার ছেলে রাস্তা থেকে কিছু একটা যেন কুড়িয়ে কুড়িয়ে খায় ।এক জায়গায় খাওয়া শেষ হলে আবার আর এক জায়গায় এগিয়ে যায় কিছু পড়ে থাকা জিনিস কুড়িয়ে খেতে।কিছুদিন দেখার পর একদিন আমি কৌতুহল নিয়ে ছেলেটার কাছে গিয়ে ওকে জিজ্ঞেস করলাম – এই ছেলেটা, তুই এই নোংরা রাস্তা থেকে কী কুড়িয়ে খাচ্ছিস ?
ছেলেটি তখন খেতেই ব্যাস্ত। মাথা নিচু করে কুড়িয়ে খেতে খেতেই আমাকে বললো- দেখুন দিদিমণি রাস্তায় কত খই পড়ে আছে। একটু আগেই এই রাস্তা দিয়ে কতগুলো লোক মৃতদেহ নিয়ে গেল ঐ দক্ষিণের শ্মশানের দিকে ।ওদের হাতে ছিল পাঁচশো গ্রামের মতো ‘খই’-এর ঠোঙা।ওরা ছড়াতে ছড়াতে গেল আর আমিও কুড়িয়ে কুড়িয়ে খেতে খেতে যাবো ওদের পেছনে পেছনে শ্মশান অবধি।প্রায় পাঁচশো গ্রাম ‘খই’ দিদিমণি, প্রায় পাঁচশো গ্রাম। এই এক ঠোঙা খই আমার এক বেলার পেটের খোরাক।শুধু মন দিয়ে সব কুড়িয়ে মুখে পুরে দিলেই হলো।


আমি অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে ওর কথা গুলো শুনছিলাম,তারপর বললাম তুই থাকিস কোথায়? তোর বাবা কি করে? আর তোর মা তোকে এই সাতসকালে রাস্তায় কেন ছেড়ে দেয় ? ছেলেটি এবার আমার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বললো- দিদিমণি ঐ পশ্চিমের বস্তিতে আমি থাকি,জনম কালে মা কে খেয়েছি,বাপ টা আমার মাতাল,রোজ সকালে সৎ মায়ের ঝাঁটা পেটা আর গালাগালি খেয়ে এই বড়ো রাস্তায় চলে আসি ‘খই’ খেতে।অপেক্ষা করি কখন লোক গুলো মৃতদেহ এই রাস্তা দিয়ে শ্মশানে নিয়ে যাবে আর আমি ওদের ঠোঙা থেকে ছড়ানো খই কুড়িয়ে খাবো।
দিদিমণি দিনের মাথায় যদি দুটো মরা নিয়ে শ্মশানে যায় তাহলে তো কথাই নেই ‘খই’ খেয়ে এই পেট একদম কোলা ব্যাঙ ।
আমি বললাম তাই বলে তুই এই মরার ছড়ানো খই খাবি ? কেন কাজ করে খেতে পারিস না? তা না হলে এই রাস্তায় ভিক্ষে করে খেতে পারিস ;
ছেলেটি বললো তাতেও অনেক জ্বালা জানেন পয়সা গুলো বাপ কেড়ে নেয় না দিলেই ঝামেলা ।

See also   বেতন বৃদ্ধি সহ, চাকরি ক্ষেত্রে নিরাপত্তার দাবিতে এবার পথে নামলো পশ্চিমবঙ্গ পৌর স্বাস্থ্যকর্মীরা।


আর কি বললেন কাজ ? দিদিমণি, কানাঘুষো শুনেছি শিশু-শ্রম চলবে না এই সমাজে। স্বার্থ ছাড়া আমায় তো কেউ আলালের দুলাল করে রাখবে না,তাই বাবু এই ‘খই’ খাওয়া ছাড়া আর উপায় কি আছে?
সারাদিনে যত মরা এই রাস্তা দিয়ে শ্মশানে নিয়ে যাবে ততই ‘খই’এর পরিমাণ দ্বিগুণ হবে। তখন আর পেটের ভাবনা কি? শুধু একটু কষ্ট করে কুড়োতে কুড়োতে ওদের পেছনে পেছনে যাওয়া।
আমি বললাম কিন্তু এই বড় রাস্তায় যে কত গাড়ি যায় জোরে জোরে তখন তোর ভয় করেনা?
ছেলেটি একবার আকাশের দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে জবাব দিল – দিদিমণি, এইতো হালকা ওজনের ছোট্ট একটা জীবন,’খই’ কুড়িয়ে খেতে খেতে না হয় গাড়ির ধাক্কায় নিজেই উড়ো ‘খই’ হয়ে শূন্য শরীরে বাতাসের সাথে চলে যাবো আমার মরা মায়ের কাছে।
আমি কিছু বলতে যাবো তখনই ছেলেটা আমায় থামিয়ে দিয়ে বললো চলি দিদিমণি বড্ড দেরী হয়ে গেল ওদের পেছনে তাড়াতাড়ি না ছুটটে পারলে ‘খই’ গুলো সব হাওয়ায় উড়ে যাবে ।

krishna Saha

আমার নাম কৃষ্ণ কুমার সাহা, আমি ফুল টাইম সাংবাদিকতা করি।গত ৮ বছর ধরে এই পেশায় আছি