আবহাওয়া দক্ষিণবঙ্গ শিক্ষা লাইফ স্টাইল স্বাস্থ্য ভ্রমন ধর্ম কৃষি কাজ ক্রাইম

নিষেধাজ্ঞা সত্বেও পূর্ব বর্ধমানে চাষের জমিতে অবাধে চলছে নাড়া পোড়ানো – উদ্বিগ্ন কৃষি ও পরিবেশবিদরা

krishna Saha

Published :

WhatsApp Channel Join Now


প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় ( বর্ধমান ) :- বেপরোয়া মনোভাব দেখিয়েই চলেছে চাষিরা । কৃষি ও পরিবেশ দপ্তরের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই পূর্ব বর্ধমান জেলার সর্বত্র অবাধে চলছে চাষের জমিতে নাড়া পোড়ানো । এরফলে পরিবেশ দূষণ যেমন মাত্রা ছাড়াচ্ছে তেমনই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে জমিতে থাকা উদ্ভিদের খাদ্য উপাদান । এই ঘটনায় রীতিমত উদ্বিগ্ন কৃষি ও পরিবেশ বিদরা ।


শীত পড়তে না পড়তেই দূষণের ধোঁয়াসায় ঢাকা পড়ে দেশের রাজধানী শহর দিল্লী । কলকাতাতেও বেড়েচলেছে দূষণের মাত্রা । দূষণজনিত এমন পরিস্থিতি থেকে নিস্কৃতি পাবার জন্য কৃষি দপ্তর ও পরিবেশ বিদরা জমিতে নাড়া পোড়ানো থেকে চাষীদের বিরত হবার কথা বারে বারে বলে চলেছেন । নাড়া পোড়ানো যে বেআইনি তা নিয়ে জনগনকে ও ওয়াকিবহাল করতে সরকারী ভাবে প্রচারের কোন খামতি নেই । স্কুলের ছাত্র ছাত্রীরাও পথে নেমে প্রচার চালাচ্ছে । কিন্তু এতসব কিছুর পরেও জমিতে নাড়া পোড়ানো বন্ধে চাষীর কোন আগ্রহ দেখাচ্ছেন না ।




রাজ্যের শস্যগোলা বলে পরিচিত পূর্ব বর্ধমান জেলা । এই জেলার চাষিরাই যে শুধু জমিতে নাড়া পোড়াচ্ছেন এমনটা নয় । অন্য জেলার চাষিরাও নিষেধাজ্ঞাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে জমিতেই নাড়া পোড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ । “আবহাওয়া ও পরিবেশ দপ্তরের কর্তারা মনেকরছেন এমনটা চলতে থাকলে দিল্লীর মতো এই বাংলার গ্রামীন এলাকা দূষণের ধোঁয়াসায় ঢাকা পড়াটা শুধু সময়ের অপেক্ষা মাত্র ।”




শীতের শুরু থেকেই দূষণের ধোঁয়াশায় ঢাকা পড়ে দেশের রাজধানী শহর দিল্লী । ধোঁয়াশার কারনে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে দিল্লী বাসির জনজীবন । এই ঘটনা নিয়ে নড়েচড়ে বসেন আবহাওয়া ও পরিবেশ দপ্তর । তারা ধোঁয়াসার কারণ অনুসন্ধানে আশরে নামেন। সবদিক খতিয়ে দেখে পরিবেশ বিদরা নিশ্চিত হন দূষণের কারণেই ধোঁয়াশায় ঢাকা পড়েছে দিল্লী শহর । এই ক্ষেত্রেও মুখ্য কারন হিসাবে সামনে আসে চাষের জমিতে নাড়া পোড়ানোর ঘটনা ।

See also  দীঘায় উঠলো বিশাল৭৮০ কিলোর চিলশঙ্কর মাছ


‘অনুসন্ধানকারী পরিবেশ বিদরা জানতে পারেন শীত শুরুর প্রক্কালে দিল্লীর গুরগাঁও সহ পার্শবর্তি এলাকার চাষীরা কম্বাইন হারবেস্টার মেশিনের সাহায্যে জমির ফসল কাটা ও ঝাড়ার কাজ সেরেছেন । ঝাড়াই কাজ শেষে হবার পর ফসলের অপ্রয়োজণীয় অংশ অর্থাৎ ‘নাড়’ জমিতে জড়ো করে তাতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন সেখানকার চাষীরা । ওই নাড়া পোড়ানোর ধোঁয়া শীতের জলিয় বাস্পের সঙ্গে মিশে ধোঁয়াশায় পরিণত হচ্ছে । আর সেই ধোঁয়াশায় সমগ্র দিল্লী শহর ঢাকা পড়ায় সেখানকার বাসিন্দারা শ্বাস কষ্টে ভুগছেন । চোখও জ্বলা করছে।”




কৃষি দপ্তরের কর্তারা জানাচ্ছেন , দিল্লীর এমন ঘটনা সামনে আসার পরেও হুঁশ ফরেনি এই রাজ্যের বিশেষত শস্যগোলা পূর্ব বর্ধমান জেলার চাষীদের । বিশ্ব উষ্ণায়ন ও পরিবেশ দূষণ রোধে হাজারো সচেতনতা প্রচার চালান হলেও সচেতন হতে চাইছেন না চাষীরা । শীত পড়তেই জেলা জুড়ে শুরু হয়েছে আমন ধান কাটা ও ঝাড়ার কাজ । হারভেস্টার মেশিন দিয়ে আমন ধান গাছ কেটে ধান ঝেড়ে নেবার পর এই জেলার চাষিরাও অবশিষ্ঠাংশ অর্থাৎ ‘নাড়া’ জমিতেই পোড়াচ্ছেন ।

‘নাড়া’ পোড়ানো বেআইনি ঘোষনা হওয়া সত্ত্বেও চাষিরা বেপরোয়া ভাবেই জমিতে ‘নাড়া’ পুড়িয়ে যাচ্ছেন । পরিবেশ বিদরা বলছেন, জমিতে ‘নাড়া’ পোড়ানোর রেওয়াজ চাষিরা বন্ধ না করলে আগামীদিনে দিল্লীর পুনরাবৃত্তি শস্যগোলা সহ গোটা রাজ্যেও ঘটবে । পরিবেশ বিদরা এমন বার্তা দেবার পর থেকেই জমিতে নাড়া পোড়ানো বন্ধে লাগাতার সচেতনতা প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে জেলার কৃষি দপ্তর । কিন্তু হাজারো সচেতনতা প্রচার সত্ত্বেও সচেতন হতে চাইছেন না চাষিরা ।জেলার সর্বত্রই চলছে অবাধে ‘নাড়া’ পোড়ানো ।




ক্ষেত মজুরি বৃদ্ধি ও একই সঙ্গে ক্ষেত মজুর সংকটের কারনে হারভেস্টার মেশিনে ধান কাটা ঝাড়ার রেওয়াজ তৈরি হয়েছে বর্ধমান জেলায় । জামালপুরের চাষি ভক্তি ধারা বলেন , ক্ষেত মজুরদিয়ে জমির ধান গাছ যখন কাটা হয় তখন কাটা ধানগাছ অঁটি বাঁধা অবস্থায় থাকে । ধান ঝাড়ার পর খড়ের অঁটি স্তরে স্তরে সাজিয়ে ‘পালুই’ তৈরি করে তা রাখা হয় । হারভেস্টার মেশিনে ধান কাটা ঝাড়া হওয়ায় সে পরিস্থিতি আর থাকছে না । অজ্ঞ চাষিরা পরিবেশের পাশাপাশি নিজের জমির ক্ষতি করে জমিতেই নাড়া পুড়িয়ে দিচ্ছে ।

See also  সরকারি উদ্যোগে তৈরি হচ্ছে ভেষজ আবির

কলকাতা হাইকোর্টের সিনায়র আইনজীবী জয়দীপ মুখোপাধঋায় বলেন ,‘প্রশাসন জমিতে নাড়া পোড়ানো বেআইনি ঘোষনা করেছে । কিন্তু আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে যারা জমিতে নাড়া পোড়াচ্ছে তাঁদের বিরুদ্ধে প্রশাসন আইনমাফিক কোন ব্যবস্থা নিতেই পারে । জয়দীপ বাবু বলেন ,নাড়া পোড়ানোর ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কৃষি দপ্তর আইনমাফিক কড়া ব্যবস্থা না নিলে আগামীদিনে দিল্লীর পরিণতি এই বাংলাতেও যে ঘটবে তা নিশ্চিৎ ভাবেই বলাযায় । ’





রাজ্যের কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদার জানালেন ,“জমিতে নাড়া পোড়ালে প্রচুর পরিমানে উদ্ভিদ খাদ্য নষ্ট হয়ে যায় । আমন চাষ মরশুমে খড়ের অবশিষ্ট অংশ জমিতে পুড়িয়ে না দিয়ে জমিতে গর্ত করে সেখানে তা ফেলেদিয়ে মাটি চাপা দিলে মাটির জৈব কার্বন বৃদ্ধি পাবে । কৃষি জমির উপরিভাগের ৬ ইঞ্চি মাটি সবথেকে মূল্যবান । জমিতে নাড়া পোড়ালে মাটির গঠন ও গুণমান ক্ষতিগ্রস্ত হয় । জমিতে নাড়া পোড়ালে উপকারি জীবাণু উত্তাপের কারণে ধ্বংস হয়ে যায় ।

নষ্ট হয়ে যায় জমির গুনগত মান । এমনকি জমি বন্ধা হয়ে যায় । ধানের নাড়া পোড়ানোর ফলে বায়ুমণ্ডলে প্রচুর দূষিত গ্যাস নির্গত হয় । যা মনুষের স্বাস্থের পক্ষেও ক্ষতিকর । জমিতে নাড়া পোড়ানোর সময় আগুনের ফুলকি উড়ে পাশের জমিতে থাকা চাষির পাকা ধানও পুড়ে ভস্মিভূত হয়েযাবার সম্ভাবনা পুরোমাত্রায় থাকে । প্রদীপ মজুমদার জানান, হারভেস্টার মেশিনে ধান ঝাড়ার পর খড়ের অবশিষ্ট অংশ কমপোস্ট বা ডার্বি কমপোস্ট সার তৈরির কাজে লাগালে চাষীরা যেমন উপকৃত হবেন তেমনই দূষণ থেকেও রাজ্যবসি রক্ষা পাবেন ।”

krishna Saha

আমার নাম কৃষ্ণ কুমার সাহা, আমি ফুল টাইম সাংবাদিকতা করি।গত ৮ বছর ধরে এই পেশায় আছি