বুধবার পূর্ব বর্ধমান জেলার, মেমারি-২ নম্বর ব্লকের অন্তর্গত বড় পলাশন ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের বড় পলাশন গ্রামে তৃণমূল কংগ্রেসের দুই গোষ্ঠীর কর্মীদের মধ্যে বচসাকে কেন্দ্র করে মৃত্যু হল এক তৃণমূল কর্মীর। মৃতের নাম লালটু সিকদার। তিনি মন্তেশ্বর বিধানসভার বিধায়ক সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীর গোষ্ঠীর কর্মী বলে পরিবার সূত্রে জানা গেছে।
পরিবারের দাবি, ঘটনার আগের দিন মঙ্গলবার লালটু সিকদার সাতগেছিয়া বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন। পরদিন সকালে অর্থাৎ বুধবার বড় পলাশনের একটি চায়ের দোকানে প্রাক্তন ব্লক সভাপতি মহঃ ইসমাইল গোষ্ঠীর তৃণমূল কর্মী তারু শেখের সঙ্গে বইমেলা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে উত্তেজনামূলক কথাবার্তা হয় লালটুর। সেই নিয়েই দু’জনের মধ্যে বচসা শুরু হয়।
অভিযোগ, বচসার একপর্যায়ে তারু শেখ লালটু সিকদারকে মারধর করেন। মারধরের সময় বুকে প্রেসার মেশিনের ধাক্কা লাগায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন লালটু। পরিবার সূত্রের দাবি, ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। পরে তড়িঘড়ি তাঁকে মেমারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করেন।
এই ঘটনায় গোটা এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় মেমারি থানার পুলিশ। পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। বড় পলাশনে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে এক কর্মীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে এবার তীব্র প্রতিক্রিয়া জানাল বিজেপি। পূর্ব বর্ধমান জেলা বিজেপির সাধারণ সম্পাদক দেবজ্যোতি সিংহ রায় ঘটনাকে কেন্দ্র করে বলেন, “মন্তেশ্বর বিধানসভায় তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নতুন কোনও বিষয় নয়। এটা বহুদিন ধরেই চলেছে। ক্ষমতার লড়াই, প্রভাব বিস্তার এবং অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে বারবার অশান্তির পরিবেশ তৈরি হচ্ছে”।
তিনি আরও বলেন, “সম্প্রতি মেমারি বইমেলা অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীর গোষ্ঠীর সঙ্গে ইসমাইল গোষ্ঠীর সংঘর্ষ হয়। সেই সংঘর্ষের জেরেই মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ একজন কর্মী গুরুতর জখম হন এবং শেষ পর্যন্ত তাঁর মৃত্যু হয়। এটা অত্যন্ত মর্মান্তিক বিষয়”।
বিজেপি নেতৃত্ব মৃত কর্মীর পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বলেন, “কোনও মৃত্যুই কাঙ্ক্ষিত নয়—সে যে দলেরই হোক না কেন। কিন্তু বারবার যদি শাসক দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে সাধারণ কর্মীদের প্রাণ হারাতে হয়, তাহলে তার দায় কে নেবে? এর পুরো দায় রাজ্যের শাসক দলকেই নিতে হবে”।
জেলা বিজেপি সাধারণ সম্পাদকের অভিযোগ, “পূর্ব বর্ধমান জেলায় তৃণমূল এখন একাধিক গোষ্ঠীতে বিভক্ত। প্রশাসন কার্যত নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। শাসক দলের অভ্যন্তরীণ লড়াইয়ে আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি ভেঙে পড়ছে। সাধারণ মানুষ এবং তৃণমূলের সাধারণ কর্মীরাই এর বলি হচ্ছেন”।








