বহুদিনের দুঃস্বপ্ন ও আইনগত জটিলতা কাটিয়ে অবশেষে নিজের মাটিতে ফিরেছেন সোনালি বিবি। ‘বাংলাদেশি’ তকমা কাঁধে নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে কাটানো দীর্ঘ কয়েক মাসের পর এখন স্বস্তির নিঃশ্বাস তাঁর। দেশে ফেরার পর থেকেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি কৃতজ্ঞতায় ভরে উঠছেন তিনি। শুক্রবার সন্ধ্যায় ভারতীয় মাটিতে ফিরে শনিবার বীরভূমের পাইকর গ্রামে বাড়িতে পৌঁছনোর পর আবেগ সামলাতে না পেরে প্রতিবেশীদের সামনে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশংসায় ভাসলেন সোনালি। তাঁর অনুরোধ—আসন্ন সন্তানের নাম যেন মুখ্যমন্ত্রী নিজেই রাখেন। সোনালির কণ্ঠে স্পষ্ট আবেগ— “যাঁর জন্য বেঁচে ফিরলাম, সেই মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন, আমার সন্তানের নাম যেন তিনিই দেন। আমি তাঁর কাছে ঋণী, কৃতজ্ঞ।”
সোনালি এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তাঁরা বাংলাদেশি। দিল্লি পুলিশ তাঁদের বাংলায় কথা বলার কারণে বিএসএফের হাতে তুলে দেয় এবং পরে অসম সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে পাঠানো হয়। সেখানে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলে তাঁদের আটক রাখা হয়। বিষয়টি সামনে আসতেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপে এবং সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে তাঁদের দেশে ফেরানোর উদ্যোগ শুরু হয়। প্রায় আট মাস ধরে চলা আইনি লড়াইয়ের পর দেশে ফিরতে সক্ষম হন সোনালি ও তাঁর নাবালক সন্তান। যদিও তাঁর স্বামী-সহ পরিবারের আরও চারজন এখনও বাংলাদেশেই রয়েছেন। এই উদ্বেগের মাঝেও নিজের বাড়িতে ফিরতে পেরে আনন্দ লুকোতে পারেননি সোনালি।
শুক্রবার দেশে ফেরার পর সোনালি ও তাঁর শিশুকে মালদহ মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করা হয়। প্রথমিক চিকিৎসা শেষে শনিবার তাঁদের সরকারি খরচে অ্যাম্বুল্যান্সে বীরভূম পাঠানো হয়। পাইকরে পৌঁছনোর পর অ্যাম্বুল্যান্সেই স্থানীয়রা তাঁকে সংবর্ধনা জানান। এরপর সোনালিকে ভর্তি করা হয় রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে বসেই তিনি আবার বলেন— “মুখ্যমন্ত্রী আমাকে আবার নতুন জীবন দিয়েছেন। তাই আমার ছেলে হোক বা মেয়ে – নাম যেন মুখ্যমন্ত্রী নিজেই দেন।” তাঁর পাশে তখন ছিলেন বাবা ভদু শেখ ও মা জ্যোৎস্নাহারা বিবি। সোনালিকে দেখতে হাজির হন সাংসদ সামিরুল ইসলামও। হাসপাতালের এমএসভিপি ডা. পলাশ দাস জানান— ‘‘সোনালি বিবির জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত ব্যবস্থা করা হয়েছে। কোনওরকম অসুবিধা যাতে না হয়, সেদিকে বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে।”
এদিকে, সোনালিকে দেশে ফেরানোকে কেন্দ্র করে শনিবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। তিনি অভিযোগ করেন— “ন্যায়কে ঢেকে রাখা যায় না। কলকাতা হাই কোর্ট যে নির্দেশ দিয়েছিল, তা সঠিকভাবে মানানো হয়নি। সব প্রমাণ দেখানোর পরেও তাঁকে ফেলে আসা হয় বাংলাদেশে। কেন্দ্রে চোখে কালো চশমা এঁটেছিল। শুধুমাত্র বাংলায় কথা বলায়, এমন হেনস্তা মানা যায় না।”
মন্ত্রী শশী পাঁজা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন— “সব নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে কেন্দ্র এসব পরিবারকে হেনস্তা করেছে। সোনালিরা শুধু কষ্টই পাননি, হেনস্তারও শিকার হয়েছেন।”








