দলের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লিতে তৃণমূল সাংসদদের সঙ্গে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে একাধিক দিকনির্দেশ দেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সম্প্রতি সংসদে দলের নেতৃত্ব তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। সেই সিদ্ধান্ত ঘোষণার কিছু দিনের মধ্যেই চিফ হুইপ পদ থেকে ইস্তফা দেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, মহুয়া মৈত্রের সঙ্গে মতবিরোধের জেরে। এরপর ওই পদে কাকলি ঘোষ দস্তিদার এবং সহ-নেতার দায়িত্বে শতাব্দী রায়কে নিযুক্ত করা হয়।
এই পটভূমিতে, এদিনের বৈঠকে অভিষেক স্পষ্ট জানিয়ে দেন, “সংসদের অধিবেশন চলাকালীন দিল্লিতে থাকলেই হবে না, শুধু সই করে চলে গেলে চলবে না—পুরো সময় সংসদে উপস্থিত থাকতে হবে।” পাশাপাশি তিনি বলেন, সংসদীয় কাজকর্ম না থাকলে সাংসদদের নিজ নিজ কেন্দ্র এলাকায় গিয়ে “জনসংযোগ গড়ে তোলার” ওপর জোর দিতে হবে। তিনি আরও বলেন, দলীয় ঐক্য বজায় রাখা এবং পরস্পরের মতপার্থক্য দূর করে সম্মিলিতভাবে এগিয়ে চলাই এখন সবচেয়ে জরুরি। সংবাদমাধ্যমের সামনে কথা বলার সময় সকলকে সাবধানতা অবলম্বনের নির্দেশও দিয়েছেন অভিষেক। “দলের ভাবমূর্তি যাতে কোনওভাবে ক্ষুণ্ণ না হয়, সেই দিকটা মাথায় রেখেই কথা বলতে হবে,” বলেন তিনি।

বর্তমানে জাতীয় রাজনীতিতে তৃণমূলের তরফে আরও বড় দায়িত্ব পেয়েছেন অভিষেক। বর্ষীয়ান সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অসুস্থতার কারণে লোকসভায় দলনেতার পদে অভিষেককে আনা হয়েছে। এই নতুন ভূমিকায় বৃহস্পতিবার কলকাতা থেকে দিল্লি পৌঁছেই সাংগঠনিক কাজ শুরু করেন তিনি। সকালে বাংলা ভাষার ওপর “অত্যাচারের প্রতিবাদে” অন্যান্য সাংসদদের সঙ্গে রাজপথে নামেন তিনি। পরে লোকসভায় কাকলি ঘোষ দস্তিদার ও শতাব্দী রায়কে সঙ্গে নিয়ে স্পিকারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সেখানে তারা “এসআইআর” প্রসঙ্গে আলোচনা চান।
বিকেলে তৃণমূলের দিল্লি অফিসে দলের সাংসদদের নিয়ে বৈঠকে বসেন তিনি। সূত্র অনুযায়ী, “সংসদে উপস্থিতি, দলীয় স্ট্র্যাটেজি ও কক্ষ সমন্বয়”—এই বিষয়গুলিকে আরও মজবুত করতে বার্তা দিয়েছেন অভিষেক। তিনি বলেন, “শুধু হাজিরা দিলেই চলবে না, অধিবেশনজুড়ে অংশ নিতে হবে, অন্যদের বক্তব্য শুনে, নিজের বক্তব্য রাখতে হবে।” পাশাপাশি তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “সংবাদমাধ্যমে বেফাঁস মন্তব্য নয়। যাঁকে যে বিষয়ে বলার দায়িত্ব দেবে দল, তিনি যেন ঠিক সেই নির্দেশ মেনে কথা বলেন।”
সব মিলিয়ে, দলনেতা হিসেবে নিজের প্রথম দিনেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দলের উপর কঠোর নজরদারির বার্তা দিলেন—যা ভবিষ্যতের সংসদীয় লড়াইয়ের দিক নির্ধারণ করতে পারে।